প্রতি বছর ঈদ আসে, ঈদ যায়। ঈদ স্পেশাল ট্রেনের আশা পূরণ হয় না সিলেটবাসীর। এবার ঈদেও ঘরমুখী যাত্রীদের সেবা নিশ্চিতে বিভিন্ন রুটে স্পেশাল ট্রেন থাকার ঘোষণা দেয়া হলেও সিলেটবাসী এ থেকে বঞ্চিত। ট্রেনের টিকেট বিক্রিও চলছে স্বাভাবিক নিয়মে। ঈদ উল ফিতরে সিলেট থেকে ট্রেনে যাতায়াতকারীরা কোনো ধরনের সুবিধা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ জানিয়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
সূত্র জানায়, পবিত্র ঈদ উল ফিতরে বাড়ি গমনেচ্ছু যাত্রীদের জন্য নির্ধারিত আগাম টিকেট বিক্রি ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। এখন দেয়া হবে ফিরতি টিকেট। এর মধ্যে ১ জুন দেয়া হয় ১০ জুনের টিকেট। ২ জুন ১১ জুনের, ৩ জুন ১২ জুনের, ৪ জুন ১৩ জুনের, ৫ জুন ১৪ জুনের এবং ৬ জুন ১৫ জুনের টিকেট। আর ঈদ উদযাপন শেষে কর্মস্থলে গমনেচ্ছু যাত্রীদের ১০ জুন দেয়া হবে ১৯ জুনের, ১১ জুনে ২০ জুনের, ১২ জুন ২১ জুনের, ১৩ জুন ২২ জুনের, ১৪ জুন ২৩ জুনের এবং ১৫ জুন দেয়া হবে ২৪ জুনের ফিরতি টিকেট। ঈদের পাঁচদিন আগে এবং সাতদিন পরে বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে। কিন্তু সিলেট স্টেশন এ নিয়মের আওতায় পড়েনি। এখানে স্বাভাবিক নিয়মেই চলছে টিকেট বিক্রি।
সূত্রটি জানিয়েছে, প্রতি বছর ঈদ উপলক্ষে লক্ষাধিক মানুষ সিলেট ছেড়ে যায়। কাজের তাগিদে বিভিন্ন জেলার এসব মানুষ সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস করেন। ঘরমুখো এসব মানুষ যানজট এড়ানো, সাশ্রয় ও আরামদায়ক ভ্রমণের লক্ষ্যে বাসের পরিবর্তে রেলপথকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
এদিকে, সিলেট স্টেশনে কালোবাজারি চক্র তৎপর রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক যাত্রী। এদের মৌসুমি বাণিজ্যের কারণে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়েও অনেকে টিকেট পাননি বলে জানিয়েছেন। এছাড়া চাহিদা থাকার পরও এসি টিকেট পাননি বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। তাদের দাবি, এসি টিকেটের বেশিরভাগই চলে গেছে বিশেষ কোটায়। ফলে, তাদের খুশি থাকতে হয়েছে সাধারণ টিকেট শোভন চেয়ারেই।
যাত্রীরা জানান, রেল কর্তৃপক্ষ সিলেট রুটে আন্তঃনগর ট্রেনের কোচ অনেক আগেই কমিয়ে দেয়ায় এবার ঈদে যাত্রীদের ভোগান্তি একটি স্পেশাল ট্রেন ও উদয়ন, উপবন ও কালনী এক্সপ্রেসে এসিসহ প্রতিটি ট্রেনে দু’টি করে বগি বরাদ্দ দিলে দুর্ভোগ কিছুটা লাঘব হতো।
সিলেট থেকে ঢাকায় নিয়মিত ট্রেনে যাতায়াতকারী রুমেন আহমেদ বলেন, প্রতি বছরই ঈদের সময় বিশেষ ট্রেনের জন্য সিলেটবাসী সোচ্চার হয়। কিন্তু তা যেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের নজর কাড়ে না।
সিলেট নগরীর সোনারপাড়ায় বসবাসকারী চাকরিজীবী সাজিদুর রহমান বলেন, তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজানে। প্রতি বছর ঈদে বাড়ি যেতে ট্রেনের জন্য ভোগান্তি পোহাতে হয়। অনেক কষ্ট করে বাড়িতে যেতে হয়। সিলেটবাসী অন্য দাবি থেকে বঞ্চিত না হলেও বিশেষ ট্রেনের দাবি থেকে প্রতি বছরই বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে যাত্রীরা হতাশ।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, সিলেটে টিকেট প্রত্যাশীদের তেমন চাপ নেই। কাউন্টারগুলো প্রায় ফাঁকাই থাকে। সিলেটের জন্য ‘আগাম টিকেটের প্যাকেজ’ না থাকলেও অব্যাহত নিয়মে সব টিকেট বিক্রি ইতিমধ্যে শেষ হওয়ার কথা কিন্তু কাউন্টারে এখন পর্যাপ্ত টিকেট রয়ে গেছে বলে দাবি করছে তারা ।
সিলেট রেলওয়ের স্টেশন ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক জানান, ঈদের অগ্রিম টিকেট বলা হলেও সিলেটে ঈদ উপলক্ষে বিশেষ কোন প্যাকেজ দেয়া হয়নি। কাউন্টার, অনলাইন ও মোবিক্যাশের মাধ্যমে ১০দিন আগের নিয়মেই টিকেট বিক্রি হচ্ছে। একজন যাত্রী সর্বোচ্চ ৪টি টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন এবং অন্যান্য বছরের মতো এবারও রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ভিআইপিদের জন্য ৫ শতাংশ টিকেট সংরক্ষিত। সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম রুটে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার টিকেট বিক্রি নির্ধারিত করা রয়েছে। যতক্ষণ টিকেট স্টকে থাকবে ততক্ষণই বিক্রি হবে।
তিনি টিকেট কালোবাজারির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এ স্টেশনে কোন টিকেট কালোবাজারি হচ্ছে না। কাউন্টার যেখানে ফাঁকা থাকে সেখানে কালোবাজারি হবে কোথা থেকে। তবে, কেউ যাতে এসব অপরাধে জড়াতে না পারে তা রুখতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক টিম মাঠে রয়েছে। এছাড়াও ঈদে যাত্রী চলাচলেও যাতে কোনো ধরণের অসুবিধা না হয়-সে জন্য রেলওয়ে স্টেশন ও স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হবে।
এসি বগি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উপবন, পাহাড়িকা ও জয়ন্তিকায় ১টি করে ও পারাবতে ৪টি এসি বগি রয়েছে। প্রচন্ড গরমে আরও এসি বগি সংযোজনের চাহিদার বিষয়টি আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। এছাড়াও শেষ মূহুর্তে যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ দেখা দিলে আন্ত:নগর ট্রেনে অতিরিক্ত বগি সংযোজন হতে পারে বলেও জানান তিনি।