স্টাফ রিপোর্টার॥ সিলেটের কদমতলীতে ফের এডিস মশার লার্ভা ও পূর্ণাঙ্গ এডিস মশা পাওয়া গেছে। এর জন্য দুটি প্রতিষ্ঠানকে অর্থদন্ড প্রদান করেছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। এর আগে নগরের ৪০টি এলাকা থেকে মশার লার্ভা সংগ্রহ করে সিলেট সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ পরীক্ষা করেন। এতে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার টায়ার মেরামতের দোকানে এবং নগরের দাড়িয়াপাড়া এলাকার শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল ও আবু সিনা ছাত্রাবাসসংলগ্ন নার্সারির টবে এডিস মশার অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১২টার দিকে চলমান এডিস মশা নিধনকল্পে নতুন করে অভিযান চালায় সিসিক। অভিযানে নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের দুটি এলাকায় এডিস মশার লার্ভা ও পূর্ণাঙ্গ মশার সন্ধান পাওয়া যায়।
সিসিকের জনসংযোগ শাখা জানায়, অভিযান চলাকালে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া তিন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুটিকে অর্থদন্ড প্রদান করা হয়েছে। অন্য প্রতিষ্ঠানের পুরাতন টায়ার, টিউব সহ পানি জমে থাকার কারনে বেশ কিছু আশবাবপত্রও জব্দ করা হয়।
অর্থদন্ড প্রদানকারী প্রতিষ্ঠনগুলো হলো- ঢাকা মটরস ৫০ হাজার, টায়ার মার্কেট ১২ হাজার। এছাড়া ভাইভাই মটরস নামের প্রতিষ্ঠানের মালামাল জব্দ করা হয়।
সিটি কর্পোরেশনের অনুসন্ধানে পাওয়া এডিস মশার লার্ভা নতুন করে সন্ধান পাওয়ায় নগর জুড়ে শুরু হয়েছে ডেঙ্গু আতংক। নগরীতে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার না ফেলা, টায়ার, টিউব, ফুলের টবে জমে থাকা পানি পরিষ্কার না করলে এভাবে অভিযান পরিচালনা করে অর্থদন্ড করা হবে বলে জানান সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
এর আগে ২৫ জুলাই ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নগরীতে পক্ষকাল ব্যাপী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও এডিস মশা নিধনকল্পে অভিযান শুরু করেন। এসময় তিনি নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের সম্মানিত নাগরীকদের জনসচেতনতা বৃদ্ধি, বাসা-বাড়ি দোকানপাঠ সহ সকল প্রতিষ্ঠানের চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে অনুরোধ করেন। অন্যতায় অপরিস্কার-অপরিচ্ছন্নতার বিরুদ্ধে সিটি কর্পোরেশন অভিযান চালাবে বলেও নগরবাসীকে সতর্ক করেন তিনি।
অভিযান শেষে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। জানান সিসিকের ২৫,২৬ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এই ওয়ার্ডগুলো অতিক্রম হয়েই নগরীতে প্রবেশ করতে হয়। এখানে ট্রেন স্টেশন, বাস টার্মিনাল, ট্রাক টার্মিনাল থাকায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য টায়ার টিউবের দোকান। এসব দোকানের সামনে স্তুপ আকারে থাকা গাড়ির টায়ারের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ এডিস মশার লার্ভার সন্ধান পাওয়া গেছে। অনেক স্থানে পূর্ণবয়স্ক মশার সন্ধানও মিলেছে। এ থেকে ধারণা করা যাচ্ছে, এডিস মশার লার্ভা এই ওয়ার্ডগুলোর বিভিন্ন স্থানে থাকতে পারে। তিনি জানান, সিটি কর্পোরেশন এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস সহ সকল প্রকার মশা নিধনে অভিযান অব্যাহত রাখবে।
সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী এডিস মশা ও লার্ভার সন্ধান পাওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, মশার ডিম থেকে লার্ভার সৃষ্টি হয়। লার্ভার পর তিনটি ধাপে ৮-৯ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ মশায় রূপ নেয়। মশা নিধনে শুধু ওষুধ দিলে হবে না সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এসময় সিসিকের প্যানেল মেয়র-১ তৌফিক বক্স লিপন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম সুমন, জেলা কীটতত্ববিদ মো. নজরুল ইসলাম, সাবেক জেলা স্বাস্থ্য তত্বাবদায়ক আক্তারুজ্জামান, সিসিকের প্রকৌশলী আব্দুল আজিজ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা হানিফুর রহমান, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অ্যান্টোমোলজি টেকনিশিয়ান সহ সিসিকের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্তিত ছিলেন।
এদিকে, সিলেটের সিভিল সার্জন হিমাংশু লাল রায় জানান, গত বুধবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় সিলেটের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে নতুন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগি ভর্তি হয়েছেন ১১জন। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ৮জন ও বেসরকারি হাসপাতালে ৩জন। সরকারি ও বেসরকারি মিলে চিকিৎসাধীন আছেন মোট ৩৪জন এবং সুস্থ্য হয়ে গেছেন ১৪ জন।