স্টাফ রিপোর্টার ঃ সিলেটে দেশের প্রথম বৃটিশ কারিকুলামে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য বিশেষায়িত স্কুল ও ডে কেয়ার সেন্টারের উদ্বোধন করা হয়েছে। বৃটেনের স্বনামধন্য চ্যারিটি সংস্থা আপাসেন ইন্টারন্যাশনাল ও বিশেষায়িত স্কুল ফিনিক্সের যৌথ উদ্যোগে নগরীর আম্বরখানাস্থ চন্দনটুলায় আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে ফিনিক্স স্কুল ও আপাসেন ডে সেন্টার।
গতকাল শনিবার দুপুরে নতুন এই স্কুলের উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত বৃটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা বলেন, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরা ‘ডিজএ্যাবল নয়, তারা ডিফারেন্টলি এ্যাবল’। তাদের ভালোবাসা দিন, অসাধারণ সাফল্যে তারাই আমাদের অনুপ্রাণিত করবে। তাদের দূরে সরিয়ে না রেখে সমাজের মূলধারায় নিয়ে আসুন।
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে অতিথিরা ফিনিক্স স্কুল ও আপাসেন ডে সেন্টার ঘুরে দেখেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, বৃটেনে এই কাজে তাদের ৩৫ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান দুই ভাগে কাজ করবে। ফিনিক্রা স্কুলে ৩ থেকে ৮ বছরের শিশুদের সাধারণ স্কুলে ভর্তির যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলা হবে। অপরদিকে, যাদের স্কুলে ভর্তির বয়স অতিক্রম করেছে অথবা যারা সাধারণ স্কুলে যাওয়ার উপযোগী নয় তাদের ডে কেয়ার সেন্টারে প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বনির্ভর করে তোলা হবে। যাতে তারা নিজেদের কাজ নিজেরা করতে পারেন। তারা বলেন, পরিবার যদি সহযোগিতা করে তবে ডে কেয়ার সেন্টারে ৬ মাস থেকে ১ বছর প্রশিক্ষণ নিলেই একজন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষ স্বনির্ভর ব্যক্তিতে পরিণত হবেন।
ফিনিক্স স্কুল ও আপাসেন ডে সেন্টারের আম্বরখানা ক্যাম্পাসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে নগরীর রোজ ভিউ হোটেলে এক সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। বুলবুল হাসান এর পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাই কমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন, বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান সাংসদ হাফিজ আহমদ মজুমদার, আপাসেন ইন্টারন্যাশনালের প্রধান নির্বাহী মাহমুদ হাসান এমবিই, আপাসেন ইন্টারন্যাশনালের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ার হেলাল রহমান, এনডিডি ট্রাস্টের চেয়ার অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. কবির চৌধুরী, ফিনিক্স স্কুল লন্ডনের প্রধান স্টুয়ার্ট হ্যারিস ও ডেপুটি হেড ভেরোনিকা আর্মসন, মতবিনিময় শেষে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানটির সিলেট প্রকল্পের উপদেষ্টা ডঃ মোসাদ্দেক চৌধুরী। এসময় আপাসেন ইন্টারন্যাশনাল এর কান্ট্রি ডিরেক্টর শাহ আল মাসুদ রানা উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধন শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেন, ডিজএ্যাবিলিটি কোন রোগ নয়, এটি একটি বিশেষ অবস্থা। আমাদের সামান্য সহযোগিতা ও আন্তরিকতা পেলে এই অবস্থা থেকে তারা কাটিয়ে উঠতে পারে। মন্ত্রী বলেন, বিশেষায়িত এই স্কুল ও ডে সেন্টার সমাজের পিছিয়ে পড়া এবং স্পেশাল নিডস রয়েছে এমন সব ছেলেমেয়েদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ভূমিকা রাখবে। পৃথিবীতে এমন অসংখ্য উদাহরণ আছে যারা প্রতিবন্ধী ছিলেন, কিন্তু সকলের সহযোগিতা ও আন্তরিকতায় তারা জগৎ বিখ্যাত হয়েছেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বিখ্যাত লেখক হেলেন কেলার, গায়ক ও সুরকার বিটোভ্যান, বিজ্ঞানী আলভা এডিসন, আইনস্টাইন, স্টিফেন হকিংসহ অনেকে আছেন যারা প্রতিবন্ধী ছিলেন কিন্তু সকলের সহযোগিতায় এবং তাদের চেষ্টায় তারা আজ বিশ্বের বিখ্যাত ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন ,আওয়ামীলীগ সরকার অটিজম নিয়ে কাজ করছে। সায়মা ওয়াজেদ পুতুল দেশ ও আন্তর্জাতিকভাবে কাজ করে প্রশংসিত হয়েছেন এবং কাজ করে যাচ্ছেন। প্রবাসী বাংলাদেশীদের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত ফিনিক্স স্কুল ও আপাসেন ডে সেন্টার দেশের মোট জনগোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে সমাজ ও রাষ্ট্রের মূলস্রোতের সাথে অন্তর্ভুক্ত করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত বৃটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন বলেন, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য কিছু করাই একটি অসাধারণ কাজ। সিলেটে এই উদ্যোগ সেবা প্রদান এবং জ্ঞান ও অভিজ্ঞতায় সিলেটসহ পুরো দেশ উপকৃত হবে । এই কার্যক্রম বৃটেন ও বাংলাদেশের মধ্যে যে আন্তরিক সম্পর্ক রয়েছে, তা আরো গভীরতর করবে বলে তিনি মনে করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সহধর্মিনী সেলিনা হোসেন, সাবেক এমপি সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, হবিগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য শাহ নেওয়াজ গাজী মিলাদ, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির, কাউন্সিলর রাশেদ আহমদ, আজাদুর রহমান আজাদ, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাসন, ছাত্রলীগ নেতা আল আমিন প্রমুখ।