অনশন ভাঙলেন শাবি’র ২৮ শিক্ষার্থী
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ জানুয়ারি ২০২২, ৪:২৭:৫১ অপরাহ্ন

আরাফ আহমদ, শাবি প্রতিনিধি:
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত ২৮ শিক্ষার্থীর আমরণ অনশন ১৬৩ ঘণ্টা পর ভেঙেছে। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও কথা সাহিত্যিক এবং বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের অনুরোধে শিক্ষার্থীরা অনশন ভাঙেন। এসময় ভিসির বাসভবনের সামনে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল। কান্নায় ভেঙে পড়েন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক দম্পতি ২৭ শিক্ষার্থীকে নিজ হাতে ভিসি ভবনের সামনে পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান। ২৮ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজনের অপারেশন হওয়ায় তিনি হাসপাতালে থেকে অনশন ভঙ্গ করেন।
বুধবার ভোর রাত ৪টায় জাফর ইকবাল দম্পতি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসেন এবং ঘণ্টাব্যাপী শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন তারা। তাদের কথা শোনার পর জাফর ইকবাল অনশন ভাঙার জন্য অনুরোধ করলে তারা বুধবার সকালে সবাই এক সাথে অনশন ভাঙবে বলে জানান। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে বুধবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে অনশন ভাঙেন।
এদিকে অনশন ভাঙানোর পর চলমান আন্দোলন দমানোর জন্য কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তগুলোর কঠোর সমালোচনা করেছেন অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল এবং বিষয়গুলোকে অমানবিক, নিষ্ঠুর ও দানবীয় বলে অবহিত করেছেন। এদিকে, অনশন ভাঙলেও ভিসি পদত্যাগের আগ পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
গত ১৯ জানুয়ারি বুধবার বিকেল ৩টা থেকে ২৪ জন শিক্ষার্থী অনশন শুরু করেছিল, পরবর্তীতে একজন শিক্ষার্থীর বাবা অসুস্থ হলে সে বাড়ি চলে যায়। এছাড়া তিনদিন পর গণঅনশন ঘোষণা করলে সেখানে আরও ৫ জন শিক্ষার্থী যোগদান করে। এতে মোট ২৮ জন শিক্ষার্থী অনশন চালু রাখে। তাদের মধ্যে স্বাস্থ্যের অবনতির কারণে ২০ জন শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং বাকি ৮ জন ক্যাম্পাসে অনশন চালু রাখে। ড. জাফর ইকবাল আসার পর বুধবার সকাল ৮টার দিকে ১৯ জনকে হাসপাতাল থেকে ভিসির বাসভবনের সামনে আনা হয় এবং ২৭ জনকে এক সাথে পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান জাফর ইকবাল দম্পতি। সবার অনশন ভাঙার পর চিকিৎসা নেওয়ার জন্য সবাইকে পুলিশের বিশেষ গাড়ি এবং এম্বুলেন্সে করে চেকআপ ও চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙানো শেষে বুধবার সকাল ১১টায় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক। এ সময় সাংবাদিকদের ড. জাফর ইকবাল বলেন, শিক্ষার্থীরা আমার কথামতো অনশন ভঙ্গ করেছে। আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। এখন তাদের হাসপাতালে নিতে হবে তারা যেন সুন্দরভাবে সুস্থ হয়ে উঠে। আমি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলছি, আন্দোলন থামানোর জন্য যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে তা অমানবিক, নিষ্ঠুর ও দানবীয়। আমি ধরে নিয়েছিলাম এখানে একটি মেডিক্যাল টিম থাকবে; তারা নিয়মিত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা দিবে। এখানে মেডিক্যাল টিম না থাকাতে আমি কষ্ট পেয়েছি। আন্দোলনে তাদের যারা অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছে সেই সব মানুষদেরকে (সাবেক শিক্ষার্থী) পুলিশ হাজতে রেখেছে, এটা নিন্দনীয়। এই ব্যাপারগুলো অবশ্যই যাতে বন্ধ করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়েছে কারো নাম ছাড়া, যখন প্রয়োজন হবে তখন নাম ঢুকানো হবে। আমি আশা করছি, এই জিনিসগুলো অবিলম্বে বন্ধ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, এখানে আসার আগে সরকারের উচ্চ মহল থেকে আমার সাথে কথা বলা হয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে আমি এখানে এসেছি। আমাকে যে কথা দিয়ে এখানে পাঠিয়েছে তা যেন তারা রক্ষা করে। আমার আর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। কাজেই আমাকে যে কথা দিয়েছেন তা যদি রক্ষা করা না হয়, তাহলে ছাত্রদের সাথে নয়, আমার ও এদেশের প্রগতিশীল মানুষদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে ধরে নেবো। ক্যাম্পাসে ও হলে খাবার বন্ধ করার মতো নিষ্ঠুরতা স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে করা হবে তা অকল্পনীয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. জাফর ইকবাল বলেন, যদি কথা না রাখা হয় তাহলে অবশ্যই আমার ভূমিকা থাকবে। আমার কাছে তারা (সরকারের উচ্চ মহল) এসেছেন আমি তাদের কাছে যাইনি। সুতরাং আমি অনশনের হাত থেকে রক্ষা করে কথা রেখেছি, আপনারাও কথা রাখবেন আশা করছি। আর পুলিশ এদের উপর নিমর্মভাবে হামলা করেছে তাই তারা ক্ষুব্ধ হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যৌক্তিক দাবি ছিল।
অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক বলেন, ‘যখন পুলিশ হামলা করেছে তখন শিক্ষকদের ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা ছিল। বিভিন্ন সময় আন্দোলনে আমরা সামনে ছিলাম, সামনে দাঁড়িয়ে আন্দোলন থামানো হয়েছে। পুলিশের সামনে দাঁড়ালে পুলিশ কিছুই করবে না, কারণ আমি একজন শিক্ষক। আর শিক্ষকের উপর হামলা হবে না। ওইদিনের ঘটনায় শিক্ষকরা প্রতিবাদ পর্যন্ত করেনি। শিক্ষার্থীরা তোমাদের একটা কথা বলে যাই, এক সময় তোমরা শিক্ষক হবে, তোমরা এমন মেরুদন্ডহীন হয়ো না।’
এদিকে, অনশন থেকে উঠে আসা শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম অপূর্ব বলেন, ‘আমরা জাফর ইকবাল স্যারের উপর বিশ্বাস ও আস্থা রেখে অনশন থেকে সরে এসেছি। উনি আমাদের কথা দিয়েছেন আমাদের দাবিগুলো মেনে নিবেন। স্যারের উপর আমাদের বিশ্বাস আছে। কিন্তু ভিসি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো এবং পরবর্তী কর্মসূচি কি হবে আমরা তা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিবো।’
এদিকে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ পদত্যাগ করলে দেশের ৩৪টি বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি পদত্যাগ করবেন বলে হুমকি দিয়েছিলেন। সেই প্রেক্ষিতে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বুধবার ভোর সাড়ে ৫টায় বলেছেন, ‘দেশের ৩৪ জন ভিসি বলেছেন এই বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি পদত্যাগ করলে সবাই পদত্যাগ করবেন। আমার খুবই শখ এই জিনিসটা দেখতে। আমাদের দেশে এমন ভিসি আছে, যার আদর্শ অনেক বেশি, যার জন্য অন্যরা পদত্যাগ করবেন। কিন্তু আমার ধারণা সেই শখ সহজে মিটবে না। আর এই ৩৪ ভিসির ঘুম নষ্ট হয়ে গেছে। তোমাদের এই আন্দোলনের ফলে দেশের বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে একটা মডিফিকেশন হয়েছে। এটা নতুন করে বিশ্লেষণ করতে হবে ; যাকে ভিসি হিসেবে পাঠানো হয়েছে তিনি কি ভিসি হওয়ার যোগ্য কিনা! আমি অনেক কিছু জানি কিন্তু নিজেদের দুর্বলতা বলতে ভালো লাগে না। তোমরা যা করেছো সেটার কোনো তুলনা নাই। যে আন্দোলনটা তৈরি করেছো, দেশের প্রত্যেকটা ইয়াং ছেলেমেয়ে তোমাদের সঙ্গে আছে।’
বুধবার ভোররাত সাড়ে ৫টার দিকে ভিসির বাসভবনের সামনে অনশনস্থলে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তার স্ত্রী অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক সাথে ছিলেন। এর আগে বুধবার ভোর রাত ৪টার দিকে তারা শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙানোর জন্য এবং দাবি শোনার জন্য ঢাকা থেকে ছুটে আসেন এবং জাফর ইকবাল দম্পতি অনশনরত শিক্ষার্থীদের সকল অভিযোগ মনোযোগ দিয়ে শোনেন।
পরবর্তীতে সাংবাদিকদের সামনে শিক্ষার্থীদের অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল বলেন, ‘বিদেশ থেকে অনেক শিক্ষার্থী ফোন করেছে। তারা বলেছে যে, আমাদের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পুলিশ আটক করেছে। স্যার আপনি বিষয়টি দেখেন। তোমাদের টাকা দেওয়ার কারণে তাদেরকে পুলিশ ধরছে। আমি তোমাদেরকে অফিসিয়ালি সবাইকে দেখিয়ে ১০ হাজার টাকা দিতে চাই। তোমাদেরকে সহযোগিতা করলে যদি আমাকে অ্যারেস্ট করে তাহলে করুক। আমি দেখতে চাই সিআইডি আমাকে অ্যারেস্ট করে কিনা? এ সময় তিনি ১০ হাজার টাকার একটি প্যাকেট শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেন।’
এ সময় অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক বলেন, শিক্ষার্থীদেরকে ঢাকা থেকে সিআইডি গ্রেফতার করেছে। কিন্তু আমরা সিআইডি পুলিশ বুঝি না, আমাদের কথা দিয়েছে ছেলেদের ছেড়ে দিবে, তাদের শিগগিরই ছেড়ে দিবে।
গ্রেফতারের বিষয়ে ড. জাফর ইকবাল বলেন, ‘পুলিশের প্রধান বেনজির সাহেবকে বলবো আপনারা ছেলেদের গ্রেফতার করবেন না। কারণ দেশে যত বড় কিছু হয়েছে; সব ছাত্ররা করেছে। ছাত্ররা না থাকলে মুক্তিযুদ্ধ হতো না। ছাত্রদেরকে বিশ^াস করেন। পুলিশ দিয়ে ছাত্রদেরকে পিটাবেন না। যেটা করেছেন সেটা অনেক বড় সর্বনাশ হয়েছে। এখন তদন্ত কমিটি, এটা সেটা করবেন, নানাভাবে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। ছাত্ররা যে গুলি করেছে তার একটি ছবি দেখান। সবার কাছেই স্মার্টফোন আছে, সিসিটিভি থাকে। আপনি দেখান একটি ছবি যে ওরা গুলি করেছে, ওরা বহিরাগত।’ এ সময় অনশন ভাঙানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তোমরা আমাকে কথা দিয়েছো বাচ্চাগুলোর অনশন ভাঙাবা, আশা করবো কথা রাখবা।’ এসময় সকল শিক্ষার্থী ‘জি স্যার’ বলে সহমত পোষণ করেন।
অধ্যাপক জাফর ইকবাল আরও বলেন, ‘তোমরা টের পাচ্ছো না তোমরা কি করেছো। আমি যখন দুপুরে কথা বলছিলাম আমি ধরেই নিয়েছিলাম এখানে একটি ডাক্তারের টিম আছে, নিয়মিত চিকিৎসা দিচ্ছে। কিন্তু এখানে এসে খবর পেলাম শুধু যে ডাক্তার নেই সেটা না, যারা ছিল তাদেরকেও ভয়ভীতি দেখিয়ে দূর করে দেওয়া হয়েছে। এর চেয়ে বড় অমানবিক ব্যাপার আর কি হতে পারে। এটা অলমোস্ট ছেলে-মেয়েদের মার্ডার করার একটা পরিকল্পনা। আমি শুনে খুবই দুঃখ পেলাম, সম্ভব হলে আমি উপরের মহলকে বিষয়টি জানাবো। আমি শুনে অবাক হয়ে গেলাম যে, ডাক্তার ছাড়া শিক্ষার্থীরা নিজেরাই ক্যানোলা ঢুকিয়ে স্যালাইন দিচ্ছে। যাদেরকে এখানে আমি দেখেছি তাদের অবস্থা যদি এত খারাপ হয়, তাহলে বাকি বিশ জনের কি অবস্থা, তা ভাবতেই কষ্ট লাগছে। অনেকের লাঙসে পানি চলে আসছে, এটা একটা সুপারমেডিক্যাল ইর্মাজেন্সি। তাদের সাহায্য করা যাবে না, এর চেয়ে বড় অমানবিক কাজ হতে পারে না।’
এ সময় ইয়াসমিন হক বলেন, ‘খাবার-দাবার সব কিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হলের ডাইনিংয়ের পাশাপাশি ক্যাম্পাসের সব দোকান বন্ধ করে দিয়েছে। এত ছাত্র খাবে কোথা থেকে। তোমরা একটু জাস্ট ভিসির বিদ্যুৎ কেটে ছিলে, যাতে তোমাদের কষ্ট সে বুঝতে পারে। আবার তোমরা তা দিয়ে দিয়েছো। খাবার বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের অসুস্থ বানিয়ে এখান থেকে সরাবে, হোয়াট ইজ দিস? একটা ভিসি থাকা কি খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভিসি নিজে কেন পদত্যাগ করে না। এটা কি ইগোর সমস্যা নাকি?
এ সময় ড. জাফর ইকবাল বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ভেতর যে ক্ষোভ আছে তা নিয়ে তিন বছর আগে ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ার সময় আমি স্পষ্ট ভাষায় ভিসিকে চিঠি লিখেছিলাম। কিন্তু তিনি সেই চিঠির কথা রাখেননি। যাদের পুলিশ ধরেছে তাদেরকে কিছু করবে না। আমাকে কথা দেওয়া হয়েছে কালকে এদের কোর্টে তুলে ওদের জামিন দেওয়া হবে এবং ভবিষ্যতে আর ডাকা হবে না। আমাদেরকে উপর লেভেল থেকে কথা দিয়েছে, তাদের কোনো সমস্যা হবে না।’
ভিসির পদত্যাগের বিষয়ে জাফর ইকবাল বলেন, ‘তোমরা যেটা অ্যাচিভ করার কথা সেটা তোমরা অ্যাচিভ করেছো। বাংলাদেশের একটা বড় পলিটিক্যাল পার্টি এরকম তোমাদের মতো সাধারণ মানুষের মাঝে কাজ করতে পারতো না। এ সময় আন্দোলনকারীদের এক মুখপাত্র জাফর ইকবালকে বলেন, স্যার আপনি আমাদের এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, এই ভয়ংকর লোকটার অধীনে যাতে আমাদের থাকতে না হয়। এখান থেকে তিনি দ্রুত যেন চলে যান। আমরা তাকে এখানে দেখতে চাই না। এসময় জাফর ইকবাল বলেন, নিজের ওপর বিশ্বাস রাখো। তোমরা জানো না, তোমরা কি করেছো।’ এ সময় জাফর ইকবালের স্ত্রী ইয়াসমিন হক বলেন, তোমার স্যার যেটা বলছেন, তোমাদের সাথে কথা না রাখা মানে তোমাদের স্যারের সাথে কথা না রাখা। এত উপরের মহল কথা দিয়েছে। তোমরা শ্যিওর থাকো। এখন তোমরা অনশন ভাঙো, ১ ঘণ্টা অনশন রাখাও তোমাদের জন্য ক্ষতিকর।
তোমরা অনেক বড় কিছু করেছো, দেশের বড় পলিটিক্যাল পার্টিও মানুষের ভেতর যেতে পারেনি। এটা মনে করো না যে, আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে। কোনো ব্যক্তি ভিসি থাকার পর যখন দ্বিতীয় বার থেকে যেতে চায়, তখন ভালোভাবে যাচাই করে দেওয়া উচিৎ। তাহলে এমন ব্যক্তি আসবে না। আবার দ্বিতীয় বার উনাকে ভিসি বানানোতে ছেলেমেয়েরা হতাশ হয়েছে। তিনবছরের ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছে। ক্যাম্পাসের আসল পিকচার নেওয়া উচিৎ। আমাদের ভিসি হতে বলা হয়েছিল, কিন্তু আমরা ভিসি হতে চাইনি। আমরা কথা দিচ্ছি, সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে। এ সময় বুধবার সকালে সবার অনশন এক সাথে ভাঙানো হবে বলে জানান তিনি, এতে উপস্থিত সবাই সম্মতি প্রদান করে।
গত ১৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের মেয়েদের সমস্যা নিয়ে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা এবং প্রভোস্ট বডির পদত্যাগ দাবি করে। চারদিন আন্দোলন করার পরও প্রভোস্ট বডি পদত্যাগ না করায় বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে ১৬ জানুয়ারি রোববার ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করে শিক্ষার্থীরা, দাবি মেনে নেওয়ার কথা বলেন। এসময় শিক্ষকদের সাথে শিক্ষার্থীদের বাকবিতন্ডা শুরু হয় এক পর্যায়ে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় পুলিশ শিক্ষার্থীদের উপর লাঠিচার্জ করে এবং শিক্ষার্থীরা ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ বেঁধে যায় এবং শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পুলিশ, ছাত্রলীগসহ অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়। যা পরবর্তীতে ভিসি পদত্যাগের এক দফা আন্দোলনে রূপ নেয় এবং ভিসির পদত্যাগের দাবিতে ১৯ জানুয়ারি বুধবার বিকেল ৩টা থেকে ভিসির বাসভবনের সামনে আমরণ অনশন শুরু করে শিক্ষার্থীরা এবং ক্যাম্পাসে বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে সরব থাকে তারা। অনশনে ২৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২০ জনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করা হয় এবং সেখানেই তারা অনশন বজায় রাখে ও বাকি ৮ জন ক্যাম্পাসে অনশন করে। পরবর্তীতে ১৬৩ ঘণ্টা পর অনশনের ৮ম দিনে গতকাল বুধবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান। এদিকে, ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।