অভিভাবকদের জিম্মায় ৪৯ অভিযুক্ত শিশু
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২১ জানুয়ারি ২০২১, ১:৪৪:৫৭ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জে শিশু অপরাধে আবারও ব্যতিক্রমী রায়
শাহজাহান চৌধুরী, সুনামগঞ্জ থেকে :
সুনামগঞ্জে ৩৫ মামলায় ৪৯ শিশু অপরাধীকে ১০ শর্তে অভিভাবকের জিম্মায় সাজাভোগের সুযোগের আদেশ দিয়েছেন আদালত। অভিযুক্ত শিশুদের মধ্যে ২২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। আদালতের এমন ব্যতিক্রমী রায়ের ফলে কারাগারের পরিবর্তে অভিযুক্ত শিশুরা বই হাতে অভিভাবকদের কাছে ফিরল। এসব শিশুদের এক বছর পর্যবেক্ষণ করবেন প্রবেশন অফিসার শাহ মো. শফিউর রহমান। তিনি প্রতি তিনমাস অন্তর অন্তর অভিযুক্ত শিশুদের কার্যক্রম ও চলাফেরার প্রতিবেদন আদালতে পেশ করবেন।
গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন এমন ব্যতিক্রমী রায় ঘোষণা করেছেন। সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) নান্টু রায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আদালত সূত্র জানায়, প্রায় বছরখানেক ধরে সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সংঘটিত ঘটনায় পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে ৪৯ জন শিশুর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩২৩ ধারায় ৩৫টি অভিযোগ আদালতে দায়ের করেন সংক্ষুব্দরা। এ মামলাগুলোর কারণে অভিযুক্ত শিশুদের অভিষ্যত অনিশ্চয়তার মধ্যে পতিত হয়। একই সঙ্গে তাদের শিক্ষাজীবন ও স্বাভাবিক বেড়ে ওঠা হুমকির সম্মুখে পড়ে।
সূত্র আরও জানায়, এসব শিশুকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেন আদালত। কারাগারের পরিবর্তে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে রেখে সংশোধনের জন্য ১০টি শর্তে অভিভাবকদের জিম্মায় দেয়ার নির্দেশ দেন বিচারক।
অভিযুক্ত শিশুদের মধ্যে ২২ জন শিক্ষার্থী হওয়ায় আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন-এর নিজের অর্থে কেনা ‘একশ মনীষীর জীবনী’ নামক গ্রন্থটি অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেন আদালতের সংশ্লিষ্টরা। শর্তগুলো হচ্ছে, ‘এক’শ মনীষীর জীবনী’ নামক গ্রন্থটি প্রবেশনাধীন সময়ে পাঠ করা। বাবা-মা’সহ গুরুজনদের আদেশ নির্দেশ মেনে চলা, বাবা-মায়ের সেবা যত্ন করা এবং কাজে কর্মে তাদের সাহায্য করা, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা, নিয়মিত ধর্মগ্রন্থ পাঠ করা, প্রত্যেকে কমপক্ষে ২০টি করে গাছ লাগানো এবং গাছের পরিচর্য করা, অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করা, মাদক থেকে দূরে থাকা, ভবিষ্যতে কোন অপরাধের সাথে নিজেকে না জড়ানো এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। এ শর্ত ভঙ্গ করলে মামলা পুনর্জীবিত করে বিচার কাজ শুরু করা হবে।
রায় ঘোষণাকালে সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) নান্টু রায়, সহ সিনিয়র আইনজীবী, অভিযুক্ত শিশুদের আইনজীবী, প্রবেশন অফিসার শাহ মো. শফিউর রহমান, সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহজাহান চৌধুরীসহ সিনিয়র সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
অভিযুক্ত শিশু শাকিল জানায়, তার স্বজনদের সঙ্গে বছরখানেক আগে প্রতিপক্ষ লোকজনের মারামারি হয়। ওই মামলায় প্রতিপক্ষরা তাকেসহ ৩ শিশুকে মামলায় আসামী করে। বিজ্ঞ আদালতের যুগান্তকারি এ রায়ের ফলে তারা এখন অভিভাবকের জিম্মায় সংশোধনের সুযোগ পাচ্ছে। এতে ওই শিশুরা কারাগারের পরিবর্তে বাড়ি ফিরতে পারছে। পাশাপাশি তারা পড়া-লেখা করতে পারবে। একই বক্তব্য অভিযুক্ত শিশু শিক্ষার্থী আতিকুর রহমানের।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৪ অক্টোবর ১০ মামলায় ১৪ শিশুকে কারাগারের পরিবর্তে অভিভাবকদের জিম্মায় দেন একই আদালত।
Go to top