অশ্রুসিক্ত ভালোবাসায় চির নিদ্রায় শায়িত বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলুল মজিদ খসরু
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ৩:১১:৪৩ অপরাহ্ন

সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি ॥ ফুলেল শ্রদ্ধা ও অশ্রুসিক্ত ভালোবাসায় চির নিদ্রায় শায়িত হলেন সুনামগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা, লেখক, আইনজীবী ও বহুমাত্রিক প্রতিভাধর ব্যক্তিত্ব বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে দুই দফা জানাযা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে ষোলঘর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর স্মৃতিবিজড়িত প্রতিষ্ঠান জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে। সেখানে আইনজীবীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের লোকজন শ্রদ্ধা জানান। বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধার জন্য লাশ নেওয়া হয়। সেখানে বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, জেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক সংগঠনের লোকজনসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ শ্রদ্ধা জানান। দুপুর ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত সুনামগঞ্জ পৌরসভায় শ্রদ্ধা জানানোর জন্য মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষে সিনিয়র সহসভাপতি সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকসহ আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ ও পৌর কর্তৃপক্ষসহ নাগরিকবৃন্দ তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান।
দুপুর ২টায় সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে তাঁর প্রথম নামাজে জানাজা ও ষোলঘর জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে আড়াইটায় দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশ নেন সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, সাবেক এমপি নজির হোসেন,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. শরিফুল ইসলাম, সুনামগঞ্জ পৌর মেয়র নাদের বখত, দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ইদ্রিস আলী বীরপ্রতীক, পুরাতন কোর্ট জামে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুর রব চৌধুরী, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার হাজী নুরুল মোমেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহভাপতি এডভোকেট শফিকুল আলম, এডভোকেট খায়রুল কবির রুমেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুর রহমান, জুনেদ আহমদ, আইনজীবী সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম শেফু,সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জামান সেলিম, জগৎজ্যোতি পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সালেহ আহমদ, দেওয়ান এমদাদ রাজা চৌধুরী, লক্ষীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিরুল হক, বাংলাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন মাস্টার, চরমহল্লা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা কদর মিয়া, জাউয়াবাজার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ শহরের বিশিষ্টজন ও সাধারণ মানুষ।
জানাজার নামাজ শেষে সদর থানার ওসি সহিদুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি চৌকষ দল বজলুল মজিদ খসরুকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। পরে জেলা প্রশাসনের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. শরিফুল ইসলাম মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। দুপুর ৩টায় ষোলঘর কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন হয়।
‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু। আইনপেশা চর্চার পাশাপাশি একাধারে তিনি একজন লেখক, গবেষক, কলামিস্ট ছিলেন। ২০০০ সালে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ছিলেন। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগতজ্যোতি পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। বজলুল মজিদ চৌধুরীর আদি নিবাস জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলায়। তবে, তাঁর জন্ম শহরের ষোলঘরেই। ১৯৫২ সালের ২ এপ্রিল জন্ম নেয়া এই বীর মুক্তিযোদ্ধা সুনামগঞ্জ কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে ৫ নম্বর সেক্টরে যোগদান করেন। ক্যাপ্টেন (পরবর্তীতে কর্ণেল) হেলালের অধীনে যুদ্ধ করেন চেলা সাবসেক্টরে। ছাত্রজীবনে দৈনিক পূর্বদেশ ও দৈনিক সংবাদ-এর সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিকতায় যুক্ত ছিলেন। সুনামগঞ্জ জেলার প্রথম সাপ্তাহিক সুনাম তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। ‘একাত্তরের সুনামগঞ্জ’ ও ‘বরুণ রায় স্মারকগ্রন্থ’ সম্পাদনা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণার ফলস্বরূপ ‘রক্তাক্ত ৭১: সুনামগঞ্জ’ বইটি লিখেন। মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন হেলাল-খসরু হাইস্কুলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। বুধবার বিকেল ৩টায় সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান তিনি।