অসমাপ্ত পরিণতি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১২ জুন ২০২২, ৫:১৩:২৬ অপরাহ্ন

জাহিদা চৌধুরী
মুমুদের বাড়িতে সেদিন একটি বিয়ের কার্ড এলো। মুমু তখন কলেজ থেকে ফিরছিলো। রাস্তায় দেখা হয় শিমুলের মায়ের সাথে, তিনি বললেন তোমাদের বাসা থেকে আসছি মা, মেয়ের বিয়ে তোমরা সবাই যাবে।
মুমু ঘরে এসে মাকে জিজ্ঞেস করলো, কার বিয়ে মা? বলেই কার্ড খুলে পড়ে মায়ের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে এ কি করে সম্ভব মা! এ বিয়ে তো শিমুলের বড় বোন টুকু আপার হওয়ার কথা।
শিমুল মুমুর খুব ঘনিষ্ঠ বান্ধবী, ওরা একই সাথে পড়ে। কদিন আগে শিমুল বলেছিলো জানিস মুমু, টুকু আপার বিয়ে ঠিক হচ্ছে। বর থাকে লন্ডনে। বিয়ের কার্ড পড়ে মুমুর মাথায় যেনো বাজ ভেঙ্গে পড়লো। সে যতোই ভাবছে ততোই অবাক হচ্ছে।
সত্যিই কি শিমুলের বিয়ে? সে স্থির থাকতে পারছে না, শিমুলের সাথেও কদিন দেখা সাক্ষাৎ নেই। শিমুল ঐদিন রাতেই মুমুদের বাসায় গেলো, সব যেনো তার কাছে ওলট-পালট লগছে, বাসা ভর্তি মেহমান, শিমুলকে দেখছে না।
অনেকক্ষণ পর টুকু আপার ঘরে গেলো। ওখানেই শিমুল বসে আছে, পরনে হালকা নীল রং এর শাড়ী। ঘরে আর কেউ নেই। চোখের পানিতে সব কিছু একাকার হয়ে যাচ্ছে। মুমুকে দেখে তার কান্নার বেগ যেনো আরো বেড়ে গেলো।
সে মুমুকে বলে, আমি কি অপরাধ করেছি বলতে পারিস? মুমু ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে কান্না থামাতে বলে, ঘটনা শোনার জন্য উদগ্রীব হলো।
শিমুল মুমুকে বলে তুই যেখান থেকে পারিস আমাকে বিষ এনে দে, আমি বিষ খাবো, তবু কারো কথা শুননো না।
শিমুল আলতাফ সাহেবের মেজ মেয়ে। টুকুর যখন বিয়ের কথাবার্তা চলছিলো তখন একদিন টুকু আপা বলেছিলেন শিমুল বাবা-মাকে বলিস এ বিয়ে হবে না। যদি প্রয়োজন মনে করেন তাহলে তোর জন্য এ বিয়ে ঠিক করতে পারেন। সে তখন বলেছিলো টুকু আপা এসব কি বলো?
কিন্তু শিমুল কি তখন বুঝেছিলো, টুকু আপা সত্যিই তাকে এ কথা বলছেন? সে হেসে খেলে আনন্দ করে টুকু আপার বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, আর সে সময়ই ঘটে গেলো যতো অঘটন।
বিয়ের দিনক্ষণ যখন ঠিক হলো তখন টুকু আপা একেবারে চুপ মেরে গেলেন। খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়ে দিশেহারার মতো তখন তার অবস্থা।
কলেজে পড়াকালে তিনি খুব একটা কারো সাথে মিশতেন না। চুপচাপ গম্ভীর থাকতেন সব সময়। অথচ কলেজে পড়াকালীন সময়ে রাজীব নামের একটি ছেলেকে তার খুব পছন্দ ছিলো। দূর থেকে তিনি ঐ ছেলেটিকে আস্তে আস্তে ভালোবেসে ফেলেন।
ছেলেটি ছিলো পড়াশোনায় ভালো ও মেধাবী এবং সুদর্শন। কথা প্রসঙ্গে কলেজের দু-একজন একদিন এ কথা জেনে যায়। তখন তারা টুকুকে চেপে ধরে এবং শেষ পর্যন্ত রাজীব ও এ কথাটা জেনে যায়।
রাজীবের কানে এ কথা গেলে সে খুব অবাক হয়ে যায়, কেননা টুকুর মতো মেয়ে যেখানে কারো সাথে মিশে না, কথাবার্তা বেশী বলে না, সে কিনা আবার ভালোবাসতে জানে। তার কাছে কথাটা অবিশ্বাস্য ঠেকছিলো। রাজীব সরাসরি টুকুর সাথে দেখা করে এ কথা জানতে চায়। টুকুকে বলে তুমি কি সত্যিই আমাকে ভালোবেসে কথাগুলি বলছো?
টুকু বলে আমি যেটা বলি সেটা একবারই বলি এবং খুব কম করে কথা বলি, সেটা অবশ্য কারো অজানা নয়।
এরপর রাজীব ও টুকুর মাঝে অনেক কথা হয়। ওরা একজন অন্যজনকে ছাড়া বিয়ে করবে না বরে মনস্থির করে। সে থেকে টুকু আপা অপেক্ষায় রাজীবের জন্য।
কিন্তু বাসার কেউই এ কথা জানতেন না। বিয়ের কথাবার্তা ঠিক করার সময় সবাই তার মতামত জানতে চাইলে সে তখন সব খুলে বলে।
এদিকে বর পক্ষ এ বিয়ে নেবার জন্য খুব আগ্রহী। মেয়ে শিক্ষিত তাছাড়া আলতাফ সাহেব নামীদামী এবং ভালো বংশের লোক।
শেষ পর্যন্ত টুকু আপা এমন কথা বলবে, এমন আচরণ করবে তা কেউই ভাবতে পারেনি। বিয়ের কথাবার্তা ঠিক হয়ে যাওয়াতে আর কোন উপায়ান্তর না দেখে সবাই তখন শিমুলকে চাপ দিয়ে বুঝাতে লাগলেন এবং বিয়েতে রাজী হতে বললেন। অনেক কষ্টে শিমুল রাজী হয় সবার মুখের দিকে তাকিয়ে।
বিয়ের পর শিমুল চলে যায় লন্ডনে। এদিকে শিমুল লন্ডন চলে যাবার পর টুকু আপা ঘরের দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়লেন। কাউকে তার কষ্টের কথা, যন্ত্রণার কথা বুঝতে দিলেন না।
পরের দিন অনেক ডাকাডাকির পরও টুকু উঠছে না দেখে সবাই দরজা ভাঙ্গতে প্রস্তুত হলো। দরজা ভাঙ্গলে পর দেখা যায় টুকু আপা বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। তিনি একটি কাগজে লিখে রেখে গেছেন-শিমুলকে খুব বেশী স্নেহ করতেন। তার এ বিয়ের জন্য তিনিই অপরাধী।
শিমুল লেখাপড়ায় ভালো। ডাক্তারী পড়ার তার খুব ইচ্ছে ছিলো। তার এ ভুলের জন্য শিমুলের বিয়ের মালা পরতে হলো। তার সুখের স্বপ্নকে ভেঙ্গে দিয়ে তিনি রাজীবকে নিয়ে সুখী হতে পারবেন না। বলে বিবেকের তাড়নাতে তিনি এ পথ বেছে নিয়েছেন।
টুকু আপার এ খবর জেনে শিমুল লন্ডন থেকে ছুটে এলো। তার অতি আদরের টুকু আপার ছবির দিকে তাকিয়ে সে মনে মনে বললো, তুমি সুখী হবে ভেবে আমি মা-বাবার কথায় রাজী হলাম আর তুমি দুর্ভাগ্যজনকভাবে হয়ে গেলে রবীন্দ্রনাথের কবিতাÑ “তুমি কি কেবলই ছবি/শুধু পটে আঁকা।…”