ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন
আইনমন্ত্রীর আশ্বাস কার্যকর দেখতে চায় সম্পাদক পরিষদ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ মার্চ ২০২১, ৩:০২:১৫ অপরাহ্ন

ডাক ডেস্ক : সম্পাদক পরিষদ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে পর্যালোচনায় আইনমন্ত্রীর আশ্বাস কার্যকর দেখতে চায়। এ আইনে সাংবাদিকদের ওপর নিপীড়ন ও নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের। এক বিবৃতিতে তারা বলে, আইনটি তৈরির সময়ই এর অপপ্রয়োগের যে আশঙ্কা করা হয়েছিল, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেই আশঙ্কার চেয়েও আইনটিকে কঠিনভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। একজন মুক্তমনা লেখক মুশতাক আহমেদকে জীবন দিয়ে তা প্রমাণ করে যেতে হলো।
সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠনটি গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার সব সাংবাদিক ও লেখকের মুক্তি এবং মামলা প্রত্যাহার দাবি করেছে। সেই সঙ্গে আইনমন্ত্রী এই আইনটি পর্যালোচনা করার যে কথা বলেছেন তা অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে অবিলম্বে কার্যকর করার দাবি জানিয়েছে।
১০ মাস কারাবন্দি থাকার পর কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে জামিন দেওয়ায় আদালতকে ধন্যবাদ জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। তবে, জামিন পেলেও তার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দয় আচরণকে ‘অনভিপ্রেত’ বলেছে পরিষদ।
সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের ‘নিখোঁজ’ হওয়া এবং পরে দীর্ঘ কারাবাস সম্পর্কে উদ্বেগ জানিয়ে সম্পাদক পরিষদ বলেছে, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি লেখা শেয়ার দেওয়ার কারণে সাংবাদিক কাজলকে দীর্ঘদিন নিখোঁজ ও কারাগারে থাকতে হয়েছে। পরে জামিন পেলেও তার বিরুদ্ধে মামলাগুলো চলমান রয়েছে। আর্থিক, শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত কাজলকে মামলা মোকাবিলা করতে হচ্ছে।’
পরিষদ বলেছে, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া তৈরি, মন্ত্রিসভায় অনুমোদন, সংসদে বিল উত্থাপন ও রাষ্ট্রপতির সইয়ের আগে ও পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সম্পাদক পরিষদ এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থা আপত্তি তুলেছিল। সরকারের পক্ষ থেকে কয়েকজন মন্ত্রী ও সংসদীয় কমিটির সদস্যরা আমাদের সঙ্গে বৈঠক করে আপত্তিগুলো শুনেছিলেন। শেষে দেখা যায়, আমাদের দাবিগুলো পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে। এমনকি এই আইন প্রণয়নের সময় সংসদে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর বক্তব্য এবং সংসদীয় কমিটির পেশকৃত প্রতিবেদন সম্পর্কে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে আলোচনায় অংশগ্রহণকারী গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের মতামতও বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আপত্তিকর ধারাগুলো সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা সেগুলো সংশোধনের সুপারিশ করেছিলেন। সম্পাদক পরিষদ মনে করে, সেগুলো বিবেচনায় নেওয়া হলে আজকের এ পরিস্থিতি হয়তো উদ্ভব হতো না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে তাদের উদ্বেগের কারণ সম্পাদক পরিষদ ২০১৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছিল।
সম্পাদক পরিষদের দৃষ্টিতে উদ্বেগের আরেকটি বিষয় হলো, এ আইনের অপরাধ ও শাস্তিসংক্রান্ত প্রায় ২০টি ধারার মধ্যে ১৪টি জামিন অযোগ্য, পাঁচটি জামিনযোগ্য এবং একটি সমঝোতাসাপেক্ষ। এর ফলে অনিবার্যভাবে একটা ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে সাংবাদিকতার স্বাভাবিক অনুশীলন আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।