আইনশৃঙ্খলা ও পুলিশিং
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২:০৭:০১ অপরাহ্ন

এমদাদুল আমিন চৌধুরী
দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা এবং সবধরনের অপরাধ দমনের জন্য তদানীন্তন ব্রিট্রিশ সরকার ১৮৬১ সনে পুলিশ বিভাগ গঠন করে। এরপর থেকে পুলিশ আইন ও পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল ১৯৪৩ এর বিধি বিধান অনুসারে বর্তমান বাংলাদেশ পুলিশ পরিচালিত হচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা পুলিশের মূল ও প্রধান কাজ। জনসংখ্যা ও অপরাধ বৃদ্ধির পাশাপাশি পুলিশের দায়িত্ব কর্তব্যে ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। জননিরাপত্তা ও শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশের অনেক নতুন ইউনিট গঠন করা হয়েছে। ইউনিটগুলো নিরলসভাবে কাজ চালিয়া যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা সহ সব মহানগর, জেলা শহর এবং প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জে।
অপরাধ দমনে আধুনিক প্রশিক্ষণ ও কৌশলকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ। জনগণের সেবায় নিয়োজিত ও নিবেদিত পুলিশ আজ প্রশংসিত। আইন শৃঙ্খলা রক্ষা ছাড়া আরো অনেক মহৎ কাজ সম্পাদন করছে পুলিশ। তবে পুলিশের বিরুদ্ধে বিরূপ ধারণা রয়েছে মানুষের। তার পশ্চাতে কারণ কতেক অসাধু ও নীতিভ্রষ্ট পুলিশের অনৈতিক কর্মকান্ড। যাই হোক, নিরাপত্তা নিশ্চিত, জনমনে শান্তি, বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, মাদক, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ও নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ভূমিকা প্রশংসনীয়।
অতি সম্প্রতি সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন তাঁর যোগদানের ১ বছর পূর্তিতে সেবা ও অপরাধ দমনমূলক বিভিন্ন কর্মকান্ডের কথা তুলে ধরে নাগরিকদের মধ্যে খোলা চিঠি দিয়েছেন। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন একজন সৎ, দক্ষ ও নিষ্টাবান পুলিশ কর্মকর্তা। তাঁর দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো তিনি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দেখেন যাতে কোন মানুষ আইনি সেবা পেতে কোন ধরনের হয়রানির শিকার বা বঞ্চিত না হয়। মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন তাঁর খোলা চিঠিতে লিখেছেন :
ঐতিহ্যবাহী সিলেট জেলার সুপার হিসাবে ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট যোগদান করি, সিলেটবাসীর নিরাপত্তা প্রদান ও আইনি সেবা নিশ্চিত করতে জেলা পুলিশের সকল অফিসার-ফোর্স নিরন্তন কাজ করছে। পূণ্যভূমি সিলেটের পুলিশ সুপার হিসাবে কাজ করার সুযোগ মর্যাদাপূর্ণ ও গৌরবময়। ৩৬০ আউলিয়ার বিচরণ ভূমি ও শ্রী চৈতন্যের প্রকৃতি কন্যা সিলেট, বাংলাদেশ তো বটেই বিশ্বের বুকেও বিশেষ স্থান করে আছে।’
‘গত এক বছরে সিলেট জেলা পুলিশ ২৫৪৪টি মামলার সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করে ২২৭৯ জন অপরাধীকে গ্রেফতার করেছে। বিভিন্ন মামলায় পলাতক ও পরোয়ানাভূক্ত ১০ হাজারের অধিক অপরাধীকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ পূর্বক ন্যায় বিচার নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় চোরাচালানের প্রকোপ তুলনামূলকভাবে বেশী, ১৬৪ জন চোরাকারবারিকে গ্রেফতার পূর্বক আনুমানিক ০৫ কোটি টাকার চোরাচালনকৃত মালামাল সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়েছে। বৈশ্বিক সমস্যা মাদকের অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণেও জেলা পুলিশ ছিল তৎপর, আনুমানিক ০২ কোটি টাকার মাদক দ্রব্য উদ্ধার করে ৩৭১ জন মাদক কারবারিকে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে।’
বিগত বছরে সিলেটবাসীর নিরাপত্তা রক্ষায় ২০ হাজারের অধিক পুলিশ টহল পরিচালনা করা হয়েছে। টহল কার্যক্রমকে বেগবান করতে বিশেষায়িত ‘কুইক রেসপন্স টীম (কউআরটি)’ গঠন ও জেলা পুলিশের পরিবহন পুলে নতুন যানবাহন সংয্ক্তু করা হয়েছে। গোয়াইনঘাটের জাফলংয়ের আলোচিত পর্যটক হত্যা মামলা, ওসমানীনগরে কøু-লেস নিরীহ অটো চালক হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনসহ অপহৃত ১৪ মাস বয়সী শিশুকে উদ্ধার করে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে মায়ের কোলে; ৩৩ বছর ধরে পালিয়ে থাকা খুনের আসামীও সিলেট জেলা পুলিশের চোখ-কে ফাঁকি দিতে পারেনি।
‘বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি ‘প্রবাসী’ সিলেটের সম্মানিত প্রবাসীদের তাৎক্ষণিক ও সার্বক্ষণিক সেবা প্রদানের জন্য হট লাইন নাম্বার চালু করা হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের মাধ্যমে প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত সমস্যা সমাধানে নেয়া হয়েছে নব উদ্যোগ। বিদেশে গমনকারী ও গমনিচ্ছুক ৭৫ হাজারের অধিক সম্মানিত নাগরিকদের ভেরিফিকেশন সম্পন্ন পূর্বক ই-পাসপের্ট দেয়া হয়েছে, ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারের মাধ্যমে ৫০ হাজারের অধিক পুলিশ ক্লিয়ারেন্স প্রদান করা হয়েছে।’
‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ‘নির্বাচন’ সিলেট জেলা পুলিশের স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ ভূমিকায় প্রতিটি নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ঐতিহ্যবাহী সিলেটের মানুষের রয়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক চমৎকার ঐতিহ্য। ঈদ, দূর্গা পূজা, মাঘী পূর্ণিমা ও বড়দিনের মতো উৎসবগুলোতে জেলা পুলিশের ছিল সতর্ক ও সজাগ উপস্থিতি।
সমাজের অসহায়, নির্যাতিত মানুষের পুলিশ বাহিনীর নিকট ন্যায় বিচারের প্রত্যাশা অনেক বেশী। সিলেট জেলা পুলিশ মানুষের আশা-ভরসার ধারক ও বাহক হয়ে উঠতে চায়। ইতোমধ্যেই পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ সমাজের প্রান্তিক পরিবারের ৫৬ জন সদস্যের অন্তর্ভূক্তি অসহায় ও দারিদ্র মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। চাকরি প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসরত পরিবারের সদস্য; চাকরি পেয়ে ইতিহানের অংশ হয়েছে জেলে, দিনমজুর, রিক্সা/অটো/সিএনজি চালক এবং বাক প্রতিবন্ধি পিতার সন্তানেরা।’
পরিশেষে তিনি উল্লেখ করেন সিলেটের সম্মানিত নাগরিক ও রেমিটেন্স যোদ্ধা জেলা পুলিশের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছেন এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এজন্য জেলা পুলিশের প্রতিটি সদস্যের পক্ষ থেকে অকৃত্রিম কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ রইল। অনাগত দিনের জন্য আরো দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করে চিঠির ইতি টানেন। পুলিশ যেন জনগনের বিশ্বস্ত, নির্ভরশীল ও নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে এই কামনা আমাদের সকলের।
লেখক : শিক্ষক।