আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ মার্চ ২০২১, ৩:৩৮:৪৩ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার :
আজ ১৭ মার্চ বুধবার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে সারা দেশের মতো সিলেটেও আজ দিনটি পালিত হচ্ছে । বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে তিন দিন, সাত দিন ও পনের দিনেরও কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত এই নেতা ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। দিনটি জাতীয় শিশু দিবস হিসাবেও উদযাপিত হচ্ছে আজ। এবারের জাতীয় শিশু দিবসের প্রতিপাদ্য ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুর হৃদয় হোক রঙিন’।
দিনটি উপলক্ষে সিলেট জেলা পরিষদের উদ্যোগে ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ৩ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ১০দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। এছাড়া, বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায়ও অনুরূপ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
সিলেট জেলা পরিষদ সূত্র জানায়, আজ বুধবার বিকেল ৪ টায় সিলেট জেলা স্টেডিয়ামের সম্মুখভাগে স্থাপিত মঞ্চে ‘আজি শুভদিনে পিতার ভবনে/ অমৃতসদনে চল যাই’ শ্লোগানকে সামনে রেখে বর্ণাঢ্য এ উৎসবের উদ্বোধন করা হবে। উৎসব উপলক্ষে নতুন সাজে সেজেছে সিলেট নগরী। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মোড়ে সাঁটানো হয়েছে উৎসব লোগো সম্পর্কিত ব্যানার, ফেস্টুন। জাতির পিতার জন্ম উৎসবকে রঙিন করে তুলতে করা হয়েছে বর্ণিল আলোকসজ্জা। বিতরণ করা হয়েছে প্রায় সহস্রাধিক আমন্ত্রণপত্র। চালানো হয়েছে ডিজিটাল প্রচারণাও।
সিলেট জেলা পরিষদ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দেবজিৎ সিংহ জানান, বঙ্গবন্ধু উৎসবের অনুষ্ঠানস্থল রিকাবীবাজার জেলা স্টেডিয়ামের সম্মুখভাগ বঙ্গবন্ধুর টুঙ্গিপাড়ার বাড়ির আদলে মঞ্চ সাজানো হয়েছে। একইভাবে অনুষ্ঠানের অন্য ভেন্যু কাজী নজরুল অডিটোরিয়ামকেও সাজানো হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমান এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসের সাথে সমন্বয় রেখে। পুরো উৎসবকে সফলের লক্ষ্যে জেলা পরিষদ, সিলেট এর সাথে একাত্ম হয়ে কাজ করছেন সিলেটের প্রতিনিধিত্বশীল সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। উৎসব জুড়ে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালায় অংশ নিচ্ছেন দেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিজনেরা। সিলেটের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক এবং শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনের বিশিষ্টজনদের পাশাপাশি প্রথম দিন ১৭ মার্চ বিশেষ আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশের খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, দ্বিতীয় দিন ১৮ মার্চ উপস্থিত থাকবেন একুশে পদক প্রাপ্ত চিত্র সাংবাদিক পাভেল রহমান, শেষ দিন ১৯ মার্চ উপস্থিত থাকবেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি, বরেণ্য বাচিকশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, অধ্যাপক রূপা চক্রবর্তী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোঃ রেজাউল ইসলাম শামীম রেজা। এদিকে, সাংস্কৃতিক আয়োজনকে সফলের লক্ষ্যে গত এক সপ্তাহ ধরে মহড়া চলছে নগরীর বিভিন্ন স্থানে। প্রতিদিন বিকেল হলেই ‘সাংস্কৃতিকপাড়া’ জেগে উঠে গান-কবিতায়।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক মো. মজির উদ্দিন জানান, জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ১০দিনব্যাপী কর্মসূচির আয়োজন করেছে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। আজ ১৭ মার্চ বুধবার থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত ১০ দিনব্যাপী টানা কর্মসূচি পালন করা হবে। এরমধ্যে, ১৭ মার্চ থেকে ক্বিন ব্রিজের পাশে সারদা হলের সামনে প্রতিদিন বাদ মাগরিব থেকে আলোচনা সভা এবং স্বনামধন্য শিল্পীদের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে, একক ও দলীয় নৃত্য, একক ও সমবেত আবৃত্তি, একক ও সমবেত সঙ্গীত, বাউল সঙ্গীত ইত্যাদি। এছাড়া, সূচী অনুযায়ী অনুষ্ঠান পরিচালিত হবে। এরমধ্যে ১৭ মার্চ সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ, ১৮ মার্চ বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, ১৯ মার্চ জেলা ও মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগ, ২০ মার্চ জেলা ও মহানগর আওয়ামী যুবলীগ, ২১ মার্চ জেলা ও মহানগর শ্রমিক লীগ, ২২ মার্চ জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ২৩ মার্চ জেলা ও মহানগর কৃষক লীগ, ২৪ মার্চ জেলা ও মহানগর তাঁতী লীগ, ২৫ ও ২৬ মার্চ সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ কর্মসূচি পালন করবে।
এর আগে গতবছর বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মদিন উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হলেও করোনা ভাইরাসজনিত বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে মুজিব বর্ষের কর্মসূচি পুনর্বিন্যাস করে উদযাপিত হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪০ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগদানের মাধ্যমে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমানে মওলানা আজাদ কলেজ) ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
বঙ্গবন্ধু ১৯৪৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগের পূর্ব পাকিস্তান শাখার যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের টিকেটে ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ এসেম্বলীর সদস্য নির্বাচিত হন। ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আজীবন সোচ্চার এই অবিসংবাদিত নেতাকে রাজনৈতিক জীবনে বহুবার কারাবরণ করতে হয়।
তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬-দফা ও পরবর্তীতে ১১ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এবং বঙ্গবন্ধু উপাধি লাভ করেন। তাঁর সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ধাপে ধাপে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে থাকে।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জিত হলেও তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বাঙালি জাতির ওপর নানা নির্যাতন শুরু করে। বঙ্গবন্ধু একাত্তরের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন। যা ইউনেস্কোর ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্ট্রার এ অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বিশ্বপ্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
অন্যদিকে, ২৬ মার্চ (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং তাঁর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙ্গালীর বহু আকাঙ্খিত বিজয় ও স্বাধীনতা অর্জিত হয়। বিংশ শতাব্দীতে নির্যাতিত, নিপীড়িত ও শোষিত মানুষের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে যারা বিশ্বনন্দিত নেতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের অন্যতম।
সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিরামহীন সংগ্রামে অবদান রাখার জন্য তিনি বিশ্বশান্তি পরিষদ প্রদত্ত জুলিও কুরি পদকে ভূষিত হন। বিবিসি’র এক জরীপে তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী নির্বাচিত হন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু যখন বিভিন্নমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করতে শুরু করেন ঠিক সেই মুহূর্তে স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত শক্তি ও কায়েমী স্বার্থান্বেষী মহল তাঁর বিরুদ্ধে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র শুরু করে এবং ওই ষড়যন্ত্রেরই অংশ হিসেবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি ধানমন্ডির বাসভবনে কতিপয় বিপথগামী সেনা কর্মকর্তার হাতে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নিহত হন।
বিশ্ব গণমাধ্যমের চোখে বঙ্গবন্ধু ছিলেন ক্ষণজন্মা পুরুষ। অনন্য সাধারণ এই নেতাকে ‘স্বাধীনতার প্রতীক’ বা ‘রাজনীতির ছন্দকার’ খেতাবেও আখ্যা দেয়া হয়। বিদেশী ভক্ত, কট্টর সমালোচক এমনকি শত্রুরাও তাদের নিজ নিজ ভাষায় তাঁর উচ্চকিত প্রশংসা করেন।