আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছেন করাতিরা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ মার্চ ২০২১, ১:০৮:২২ অপরাহ্ন

রাজনগর (মৌলভিবাজার) থেকে আব্দুল আজিজ::
করাতিদের এখন আর তেমন দেখা যাচ্ছেনা। কালের বিবর্তন ও জীবন-জীবিকার তাগিদে তারা পেশা বদল করেছেন। তাই আগের মতো তেমন আর চোখে পড়ে না করাতিদের গাছ কাটতে। এক সময় মৌলভীবাজারের বিভিন্ন উপজেলার গ্রামে করাতি স¤প্রদায়ের লোকজন বসবাস করতো। তারা প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুম এলেই বিভিন্ন জেলা থেকে দল বেঁধে এসে এ জেলার কয়েকটি স্থানে ডেরা বেধে বসবাস করতো। তাদের পেশাই ছিল গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে গাছ কাটার কাজ নেওয়া। তৎকালীন সময়ে গাছ কাটতে হলে করাতিদের অপেক্ষায় থাকতে হতো গৃহস্থালীদের। বাপ-দাদার এ পেশা ছেড়ে লাভজনক অন্য পেশায় চলে যাওয়ায় করাতিদের এখন আর তেমন দেখা যায়না। তবে, জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনে এখনো দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে এ পেশাকে ধরে রেখেছে কেউ কেউ।
স্থানীয়রা জানান, নব্বই দশকের আগেও করাতিদের গাছ কাটার দৃশ্য দেখতে পাড়ার ছেলেরা ভিড় করতো। গানের সুরে তাল মিলিয়ে তাদের কাজে হাত বাড়াতো। করাতিরা সকাল সকাল গুড়-পান্তা খেয়ে কাজে নেমে পড়তেন। ওই সময় করাতি দলের তিন সদস্য গাছ কাটায় নিয়োজিত থাকলেও অন্যজন ব্যস্ত হয়ে পড়তেন রান্না-বান্নার কাজে। এভাবে পুরো মৌসুম কাটিয়ে দিতেন তারা। কয়েক মাস পরে গ্রামের সব কয়টি গাছ কেটে চিরে করাতিরা বাড়ি ফিরতেন।
জানা যায়, তখনকার সময়ে করাতিরা মাটিতে গর্ত করে বা কাঠের কাঠামো তৈরি করে করাত চালিয়ে গাছ কাটতেন। এই ধরনের করাত চালাতে উপরে আর নিচে অন্তত দুই বা ততোধিক লোকের প্রয়োজন হয়। হাতলযুক্ত করাত দিয়ে উপর-নিচ টেনে একটি গাছ থেকে বিভিন্ন সাইজের কাঠ চিরানো হয়। সে সময় কাঠ চিরতে আকার ও প্রকার ভেদে বর্গফুট হিসেবে মজুরি নিতেন করাতিরা।
একটি মাঝারি সাইজের গাছ কাটা ও চিরানোতে এক থেকে দেড় হাজার টাকা খরচ পড়তো। আর তাতে সময় লাগতো তিন দিনেরও বেশি। বর্তমানে আধুনিকতার উৎকর্ষের দাপটের কাছে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার এক সময়ের করাতি। গ্রামগঞ্জেও এখন পুরোপুরি করাতকলের যান্ত্রিক ঢেউ লেগেছে। বিভিন্ন হাট-বাজারের অগণিত করাতকল অতি কম খরচে অল্প সময়ের মধ্যে চাহিদা মাফিক কাঠ চিরানো হচ্ছে। সেই সাথে আসবাবপত্রের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় যান্ত্রিক করাতকলের কদর বেড়েছে।
মৌলভীবাজার জেলায় কাজ করতে আসা প্রবীন করাতি মুন্সী বিল্লাল জানান,পঞ্চাশ থেকে ষাট বছর ধরে এ পেশার সঙ্গে জড়িত। আগে তার বাবা এ কাজ করতেন। বাবার মৃত্যুর পর থেকে তিনি এ কাজ করে আসছেন। তবে শুধু এ পেশার উপর নির্ভর করে টিকে থাকা এখন আর কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। কথা হয় রাজনগর উপজেলার করাতি শামসুলের সাথে। তিনি বলেন, আগে বাপ দাদার সাথে কাজ করতাম এখন আধুনিক করাত কল স্থাপন হওয়ায় এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন।
কালু মুন্সি , হাসেম ও নূর মিয়াসহ আরো কয়েকজন করাতি জানান, আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে এ পেশা। তারা কনো রকমে সেই পেশা ধরে রেখেছেন। মাঝে মাঝে বড় গাছ গুলো যখন আধুনিক করাত কলে তোলা কষ্টকর হয় তখন এ গুলোকে ছোট সাইজ করে দেই।