আন্তর্জাতিক সমবায় দিবস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০২ জুলাই ২০২২, ৭:০০:৩০ অপরাহ্ন

আজ দেশে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক সমবায় দিবস। এটি জাতিসংঘ ঘোষিত একটি আন্তর্জাতিক দিবস। ১৯২৩ সাল থেকে প্রতি বছর জুলাই মাসের প্রথম শনিবার আন্তর্জাতিক পরিসরে এ দিবস পালিত হয়ে আসছে। জাতিসংঘ অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সমবায়ের ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিয়ে প্রতিবছর এ দিবস পালন করে থাকে। আর বৈশ্বিক মহামারি করোনা এবং প্রলয়ংকরি বন্যা যখন তছনছ করেছে কৃষিসহ সার্বিক অর্থনীতি, তখন আমাদের দেশে এই দিবসটি পালনের গুরুত্ব অন্য যে কোন দেশের তুলনায় বেশি।
এবার পালিত হচ্ছে শততম আন্তর্জাতিক সমবায় দিবস। ১৮৪৪ সালে যুক্তরাজ্যে প্রথম সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ১৮৬৬ সালে ডেনমার্কে সমবায় আন্দোলন শুরু হয়। এক বছর পর আমেরিকায় কৃষক সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সমবায়ের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। তারপর ইংল্যান্ড থেকে শুরু করে চীন, রাশিয়া, ফ্রান্সসহ সব দেশে সমবায় গঠন করা হয়। ১৮৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক সমবায় মৈত্রী সংস্থা। ১৯০৪ সালে লর্ড কার্জনের সমবায় ঋণদান সমিতি আইন জারির মধ্য দিয়ে উপমহাদেশে সমবায় আন্দোলন শুরু হয়। পরিসংখ্যানের তথ্য হচ্ছে, সারা বিশ্বে প্রায় ৩ মিলিয়ন কো-অপারেটিভ কার্যরত রয়েছে। বিশ্বের শীর্ষ তিনশ কো-অপারেটিভ এন্টারপ্রাইজের বাৎসরিক টার্নওভার দুই দশমিক ১১৬ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বব্যাপী সমবায়ে ২৮০ মিলিয়ন মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। আর ইউরোপে সূচিত সমবায় বাংলাদেশে আসে অনেক পরে। ১৯০৪ সালে বৃটিশ বাংলাদেশে সমবায়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। প্রথমে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নের লক্ষে সমবায় কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯১২ সালে কৃষি খাতে অর্থায়নের নিমিত্তে সমবায় ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয়।
ষাটের দশকে ড. আখতার হামিদ খান উদ্ভাবিত দ্বি-স্তর সমবায় বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সমবায়ের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু দেশগঠনে সমবায়ের গুরুত্ব অনুধাবন করেছিলেন। তাই তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতির চাকা সচল করতে গণমুখী সমবায়ের ডাক দেন। দেশব্যাপি গড়ে উঠতে থাকে সমবায় সমিতি। বর্তমানে দেশে রয়েছে প্রায় এক লাখ ৯৬ হাজার সমবায় সমিতি। কিন্তু এর বেশিরভাগই নিষ্ক্রীয়। জানা গেছে, সমবায়ের মাধ্যমে দেশে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আট লাখ ২৭ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
সময়ের পরিক্রমায় একটি দেশ ও জাতির অগ্রগতিতে সমবায়ের গুরুত্ব এখনও অপরিসীম। দেশের আনাচে-কানাচে সমবায়ীরা নিজেদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের সার্বিক উন্নয়নমূলক কাজে ভূমিকা রাখছেন। তাছাড়া, সমবায় সংগঠনের ধারণা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমবায় একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবেই বিবেচিত হয়। আন্তর্জাতিকভাবেই সমবায়ের নীতিমালার মধ্যে আছে একতা, সাম্য, সহযোগিতা, সততা, আস্থা ও বিশ্বাস, সেবা এবং গণতন্ত্র। সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে দেশে টেকসই সমবায় গড়ে তোলাই হোক আজকের আন্তর্জাতিক সমবায় দিবসের অঙ্গীকার।