সিলেটে ছুটির ভ্রমণে অম্ল-মধুর স্মৃতি!
আবাসন সংকটে পর্যটকরা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ৫:০৬:১১ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার :
এ যেন ছুটির ভ্রমণে অম্ল-মধুর স্মৃতিই বটে! আগুনরঙা এই ফাগুনে প্রকৃতিকে কাছে পেতে ছুটে আসা পর্যটকদের একটি অংশ পড়েছেন বিপাকে। পরিবার-পরিজন নিয়ে আসা এই ভ্রমণ পিপাসুদের একটি অংশ আবাসন সংকটের কারণে ফিরে যাচ্ছেন অপূর্ণতা নিয়ে।
টানা ছুটিতে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে এ পর্যন্ত সিলেটে বেড়াতে এসেছেন লক্ষাধিক পর্যটক। কিন্তু, আগাম বুকিং না থাকায় আবাসন সংকটে পড়েছেন প্রায় হাজার খানেক পর্যটক। এতে করে অনেকে দিনের বেলা স্পটে ঘুরে রাতেই ফিরে যাচ্ছেন নিজের ঠিকানায়। আবার অনেকে ভ্রমণ পরিকল্পনা পরিবর্তন করে এক বা দুই দিন অবস্থান করছেন। রাত কাটাতে কেউ কেউ ঠাঁই নিয়েছেন নগরীর হযরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজার ও হযরত শাহপরান (রহ.) এর দরগাহ শরীফে।
হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পর্যটকদের জায়গা দিতে যেয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। পাশাপাশি নগরীর বিভিন্ন হোটেল ও মোটেলে বর্তমানে কয়েকশ’ প্রবাসী কোয়ারেন্টাইনের কারণে অবস্থান করছেন। এতে করে আবাসন সমস্যা আরো তীব্র হয়ে উঠেছে।
হোটেল এন্ড গেস্টহাউস ওনার এসোসিয়েশন সিলেটের সভাপতি সুমাত নূরী জুয়েল জানান, ট্যুরিজম সিজনের অন্যতম ব্যস্ততম সময় এই ফেব্রুয়ারি। শুধু সিলেট নয়, দেশের সকল পর্যটন স্পটেই প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারির সময় এমন সংকট দেখা যায়। তবে, বর্তমান সরকার পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে অত্যন্ত আন্তরিক। বিশেষ করে সিলেটের পর্যটন শিল্পের বিকাশে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। শিগগিরই ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর এলাকায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় ভালোমানের মোটেল-রিসোর্ট ও রেস্টুরেন্ট স্থাপন করা হবে। পাশাপাশি অন্যান্য স্পটগুলোতেও নেয়া হচ্ছে বিশেষ ব্যবস্থা। তিনি বলেন, সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী পর্যায়েও সিলেটে এই খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে। অদূর ভবিষ্যতে আরো ৫/৬টি আন্তর্জাতিক মানের হোটেল যাত্রা শুরু করবে সিলেটে। এতে করে পর্যটকদের আবাসন সমস্যা অনেকাংশে লাঘব হবে। রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা মো. আওলাদ গত শুক্রবার পরিবার-পরিজন নিয়ে সিলেটে আসেন। কিন্তু আবাসন সংকটের কবলে তাকে ফিরে যেতে হয় ঐদিন রাতেই। অপরদিকে, চট্টগ্রাম থেকে আসা সুদীপ পাল আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখায় তাকে সমস্যায় পড়তে হয়নি। স্ত্রী-সন্তান ও বাবা-মাকে নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে সিলেটে আসেন সুদীপ।
নগরীর সোবহানীঘাটস্থ হোটেল গ্র্যান্ড সুরমার সিইও এমরান হোসেন জানান, শুক্রবার থেকে তাদের হোটেলের সবকটি সিটই বুকড হয়ে গেছে। আজ রোববার পর্যন্ত কোন রুম খালি নেই। তিনি জানান, সপ্তাহখানেক আগে থেকেই নগরীসহ সকল পর্যটনস্পটের হোটেল-মোটেলগুলোর বেশিরভাগই আগাম বুকিং দেয়া ছিল।
ঋতুরাজ বসন্ত মানেই রঙিন পৃথিবী, কারো কাছে বসন্ত মানে কোকিলের গান; আবার কারো কাছে বাসন্তী সাজে ঘুরে বেড়ানো। তবে ভ্রমণ পিয়াসুদের কাছে ঋতুরাজ হলো ঘুরে বেড়ানোর দ্বিতীয় সেরা মৌসুম।
ট্যুরিস্ট পুলিশ সিলেট রিজিওনের এসপি মো. আলতাফ হোসেন পিপিএম জানান, গতকাল শনিবার প্রকৃতিকন্যা খ্যাত সিলেটের জাফলংয়েই কেবল দেড় থেকে দুই লাখ পর্যটকের উপস্থিতি ছিল। এছাড়া, ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর, বিছনাকান্দি, তাহিরপুর শিমুলবাগান, টাঙ্গুয়ার হাওর, যাদুকাটা নদীতে গতকাল শনিবার পর্যটকদের ভিড় ছিল লক্ষনীয়। সিলেট বিভাগের হোটেল-মোটেলেও পর্যটকদের স্থান সংকুলান হচ্ছে না বলেও জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা। পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ তৎপর রয়েছে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা। অনেকে সিটের জন্য তাদের কাছেও ফোন করছেন বলে জানান তিনি।
পর্যটন বিষয়ক সংগঠন ‘সিলেট ট্যুরিজম ক্লাব’-এর সভাপতি হুমায়ুন কবির লিটন জানান, করোনার কারণে বিগত কয়েক মাস ঝিমিয়ে পড়েছিল সিলেটের পর্যটন খাত। বর্তমানে এই পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। পর্যটকরা নিয়মিতই আসছেন। তিনি জানান, চলতি ছুটিতে পর্যটকদের জন্য গাইডসহ বিভিন্ন সেবা দিতে গিয়ে তাদেরকেও ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে। আশাতীত পর্যটক এসেছেন এই ছুটিতে।
এদিকে, সিলেট জেলা ছাড়াও বিভাগের অন্যান্য স্পটগুলোতেও পর্যটকদের ভীড় লক্ষ করা যাচ্ছে। হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, রেমা-কালেঙ্গা চা বাগান, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওর, শিমুল বাগান, জাদুকাটা নদী, বারেকটিলা এবং চায়ের রাজধানী খ্যাত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলসহ জেলার অন্যান্য স্থানসমূহে এই ছুটিতে বেড়াতে এসেছেন প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক পর্যটক।