আলবিদা মাহে রমজান
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১১ মে ২০২১, ৪:২৮:৪৮ অপরাহ্ন

শাহ নজরুল ইসলাম
আজ মঙ্গলবার, ২৮ রমযান, ১৪৪২ হিজরি। নাজাতের শেষ দশকের অষ্টম দিন। এ দশকের আর মাত্র এক/দু’ দিন বাকি। আমরা মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার শেষ প্রান্তে উপনীত। এই কষ্টসাধ্য সাধনার পর মহান আল্লাহ মুসলিম উম্মাহর জন্য ঈদুল ফিতরের বিধান দিয়েছেন। এবারও নতুন কাপড় পরিধান করে দল বেঁধে ঈদগাহে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে আমাদের জীবন রক্ষার স্বার্থে সরকার কিছু বিধি নিষেধ আরোপ করেছেন। ঈদগাহে নামায হবে না, হাত মেলানো যাবে না এবং কোলাকুলি করা যাবে না। মসজিদে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ঈদের নামায আদায় করতে হবে। সে ক্ষেত্রে মসজিদকে জীবাণুমুক্ত রাখার জন্য যে সব কাজ করতে হয় তা মসজিদ কমিটি নিশ্চিত করবেন।
প্রকৃত অর্থে এই ঈদ উৎসব উদযাপনের জন্য আমাদের প্রস্তুতির সাথে এর অসঙ্গতিই পরিলক্ষিত হয়। কারণ রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের এই মাসের ইবাদতের মূল উদ্দেশ্য মানব উন্নয়ন, তাকওয়া অর্জন। যারা তাদের আমল আখলাক ও আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তনের মাধ্যমে মহান আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ লাভ করতে পেরেছেন, ক্ষমা ও মুক্তি লাভে ধন্য হয়েছেন, প্রকৃত আনন্দ হচ্ছে তাদের। এ আনন্দ নিজেকে সংশোধন করতে পারার আনন্দ, এ আনন্দ স্রষ্টার সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের আনন্দ। এ আনন্দ গুনাহ খাতা পাপাচার থেকে পাক-সাফ হবার আনন্দ। এ আনন্দ জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির আনন্দ। সর্বোপরি এ আনন্দ হচ্ছে মহান মালিকের সন্তুষ্টি লাভের আনন্দ। সুতরাং এটা কোন হালকা বিষয় নয় যে, এ দিন আসলে নতুন জামা কাপড় পরে ঈদ মুবারক বললাম, ঈদগাহে হাজির হলাম, ঈদের নাটক সিনেমা দেখলাম; আর ঈদ হয়ে গেল। আল্লাহ মাফ করুন। আজকাল পবিত্র ঈদের সাথে জড়িয়ে অনেক পাপ কাজের জন্ম দিয়েছে মানুষ। আর সব সময়ই অবৈধ বিষয় ও জিনিসের প্রতি আমাদের ঝোঁক থাকে বেশি। প্রকৃত বিষয় জানা এবং যাপিত জীবনে এর প্রতিফলন ঘটানোর সদিচ্ছা খুব কম মানুষের মধ্যে দেখা যায়।
আমাদের সকলের মনে রাখা দরকার যে, রমজানুল মুবারকের সিয়াম ও কিয়ম আমাদের জীবনে যে পরিবর্তনের দাবি করে, যে গুণ বৈশিষ্ট্য তৈরি করতে চায়, এ সবের অর্জন এবং এ শিক্ষাকে বাকি এগার মাস অনুসরণ করে একটি নির্মল পাপমুক্ত জীবন পরিচালনা এর মূল লক্ষ্য; আমরা যেন তা ভুলে না যাই। রমজানের শিক্ষা যেন জীবনে ধারণ করে এর বাস্তব প্রতিফলন ঘটাই। এবারে ঈদ প্রসঙ্গে কিছু আলোচনা করা যাক। দ্বিতীয় হিজরিতে ঈদের নামায পড়ার বিধান নাযিল হওয়ার পর থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওফাত পর্যন্ত কোন বছরই কোন ঈদের নামায বাদ দেননি। এরপর খুলাফায়ে রাশেদীনের কেউ তা বাদ দেননি। এর দ্বারা ঈদের নামায ওয়াজিব হওয়া প্রমাণিত হয়।
ইচ্ছাকৃতভাবে তা বর্জন করা গুনাহের কাজ। (তাহতাবী শরীফ-২৮৮) মহান আল্লাহ বলেন, ‘যেন তোমরা আল্লাহর মহিমা প্রকাশ কর তোমাদের সৎপথে পরিচালিত করার জন্য।’ (সূরা বাকারা ২/১৮৫) কুরআনের এই আয়াতের প্রথমাংশে ও পূর্ববর্তী আয়াতগুলোতে রোযার আলোচনা করা হয়েছে।
তাই, এ আয়াতাংশে ঈদুল ফিতর উদযাপন ও সে দিন তাকবীর পাঠের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এ মর্ম বিশ্লেষণে সকল উলামা একমত। সুতরাং আসুন! ঈদুল ফিতরের প্রকৃত আবেদন বুঝার চেষ্টা করি এবং সে মোতাবেক ঈদ উদযাপন করি। মহান আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন। আমীন।