বিয়ানীবাজার পৌর নির্বাচন ॥ আজ মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন
আ’লীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থীসহ ২৫ জনের মনোনয়নপত্র জমা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ মে ২০২২, ৪:৩৬:৫২ অপরাহ্ন

এবার পুরুষের চেয়ে মহিলা ভোটার বেশি
ছাদেক আহমদ আজাদ
বিয়ানীবাজার পৌরসভা নির্বাচনে এবার পুরুষের চেয়ে মহিলা ভোটার বেশি। মোট ২৭ হাজার ৩৬৯ জন ভোটারের মধ্যে পুরুষ ১৩ হাজার ৬২৫ ও মহিলা ১৩ হাজার ৭৪৪ জন। সংখ্যার হিসেবে পুরুষের চেয়ে মহিলা ভোটার ১১৯ জন বেশি। আগামী ১৫ জুন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আজ মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীসহ অপর মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা মনোনয়ন দাখিল করবেন। আগামী ২৭ মে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন।
আগামী ১৫ জুন বিয়ানীবাজার পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল সোমবার বৈরি আবহাওয়া উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগের এক বিদ্রোহীসহ দুই স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এবং কাউন্সিলর পদে ২৩ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। উৎসবমুখর পরিবেশে পৃথকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা তাদের কর্মী-সমর্থকদের সাথে নিয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে সহকারি রিটার্নিং অফিসার সৈয়দ কামাল হোসেন-এর কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এরপর সন্ধ্যায় সৈয়দ কামাল হোসেন সিলেটের ডাক’কে জানান, সোমবার স্বতন্ত্র দু’মেয়র প্রার্থীসহ মনোনয়ন দাখিল করেছেন ২৫ জন। তিনি আরো জানান, এ নির্বাচনের জন্য মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে মোট ৬৭ জন মনোনয়ন সংগ্রহ করেন। এরমধ্যে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি ও স্বতন্ত্র মিলে মেয়র প্রার্থী রয়েছেন ১১ জন।
গতকাল মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক হাজি আব্দুল কুদ্দুছ টিটু। তাঁর বাড়ি পৌর এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীধরা গ্রামে। ইতোমধ্যে তিনি দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল মনোনয়ন জমা দিয়ে আব্দুল কুদ্দুছ টিটু গণমাধ্যমকে বলেন, আমি বিজয়ী হলে পৌরসভাকে প্রথমে দুর্নীতিমুক্ত করব। এরপর আধুনিক, উন্নত ও মডেল পৌরসভা বিনির্মাণের লক্ষ্যে বিশিষ্টজনের পরামর্শ নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। এক্ষেত্রে পৌরবাসীর দোয়া ও সমর্থন কামনা করেন মেয়র প্রার্থী টিটু।
মনোনয়ন জমা দেয়া অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন, ফতেহপুর গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী মো. অজি উদ্দিন। তিনি নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে সকলের দোয়া কামনা করেছেন।
এছাড়া, গতকাল মনোনয়ন জমা দিয়েছেন কাউন্সিলর পদে ১৯ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৪ জন। অপর প্রার্থীরা শেষ দিনে আজ মঙ্গলবার মনোনয়ন জমা দেয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে, মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত অপর বিদ্রোহী প্রার্থী বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদ ’৯৪ এর জিএস ফারুকুল হক আজ বেলা দু’টায় কর্মী-সমর্থকদের সাথে নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। গত রোরবার রাতে তাঁর কসবা গ্রামের বাড়িতে এক বিশাল নির্বাচনী মতবিনিময় সভা শেষে গণমাধ্যম কর্মীদের তিনি এ তথ্য জানান। এ সময় সাবেক ছাত্রনেতা ফারুকুল হক বলেন, ‘রাজনীতিতে ত্যাগের মূল্যায়ন নেই। এখানে লবিং যার, প্রতীক তার। আমি বিয়ানীবাজার সিন্ডিকেটমুক্ত করতে চেয়েছিলাম, দল সে সুযোগ দেয়নি।’ তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচনী মাঠে ফয়সালা হবে বিয়ানীবাজার পৌরসভার জনগণ কাকে চায়।’ সাধারণ মানুষ নির্যাতিত মানুষের পক্ষে আছে জানিয়ে ফারুকুল হক বলেন, ‘আমি নির্বাচনে আছি, শেষ পর্যন্ত থাকবো। এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।’
স্থানীয়ভাবে ছাত্রলীগকে প্রতিষ্ঠিত করতে তৎসময় বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাথে সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন জিএস ফারুকুল হক। তিনি এতটাই আক্রান্ত ছিলেন, ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসা চলাকালে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাঁর বাঁচার আশা অনেকটা ছেড়ে দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মহান আল্লাহর অশেষ কৃপায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে তিনি ফিরে আসেন। এজন্য বিয়ানীবাজারের অনেকেই তাঁকে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী ফারুক’ বলে অভিহিত করেন।
অপরদিকে, বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের এক তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়েছে, আজ মঙ্গলবার বেলা দেড়টায় পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী আব্দুস শুকুর মনোনয়ন জমা দেবেন। এতে উপজেলা প্রাঙ্গণে নেতাকর্মীদের উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এরআগে পৌর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে গত রোববার তাঁর সমর্থনে এক জরুরি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে নৌকা প্রতীকের বিজয় নিশ্চিত করতে দলীয় নেতারা সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানান।
এছাড়া, পৌরসভার সাবেক প্রশাসক মো. তফজ্জুল হোসেন আজ বেলা পৌণে দু’টায় পৌর পয়েন্টে সমবেত হয়ে নির্বাচন অফিসে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। এতে শুভাকাংঙ্খি সকলকে নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানিয়েছেন।
জানা যায়, বিয়ানীবাজার পৌরসভার মেয়র পদে নৌকা প্রতীকের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের কাছে আবেদন করেছিলেন ৭ জন। এরমধ্যে দলীয় প্রার্থী হয়েছেন আব্দুস শুকুর। দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন ৪ জন। তাঁরা হলেন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরি কমিটির সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হাজি আব্দুল হাসিব মনিয়া, বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ময়নুল হোসেন ও সাবেক ছাত্রনেতা মোহাম্মদ পাবেল মাহমুদ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ফ্রান্স প্রবাসী আলী হোসেন।