এক ঝলক বৃষ্টি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ জুন ২০২২, ৬:৪৭:৫৪ অপরাহ্ন

আবুল হোসেন আজাদ
খাঁ খাঁ দুপুর। গনগনে রোদ। আকাশে এক টুকরোও মেঘ নেই। গরমে কী মানুষ, কী প্রাণীকুল, কী গাছপালা সবাই হাঁসফাঁস করছে। বৃষ্টি হয় না অনেকদিন। মাঠঘাট শুকিয়ে গেছে। খানা-ডোবায় পানি নেই। গ্রামের মাঠের শেষ প্রান্তে একটি বড় ডোবা। পানিও শুকিয়ে এসেছে প্রায়। বর্ষার সময় ডোবাটি ভরে যায়। পানি উপচে পড়ে। এখন অন্য চিত্র। এ ডোবায় থাকে ছোট ছোট পুঁটি, ডানকানা, মৌরাল মাছ। সেই সঙ্গে ব্যাঙও। ছোট ছোট জলজ পোকামাকড়ও এই পানি আশ্রয় করে বেঁচে আছে।
মাঠের অপর প্রান্তে ঝিম মেরে দাঁড়িয়ে আছে কতগুলো গাছ। ডালপালার মধ্যে পাতায় ছায়ায় বসে ছিল একটি টিয়ে। ওর খুব তেষ্টা পেয়েছে। ও ডানা মেলে উড়তে উড়তে ডোবায় এসে নামে।
মাছ আর ব্যাঙগুলো বলে ওঠে- খেয়ো না, খেয়ো না। আমাদের বাঁচতে দাও। পানিটুকু খেলে আমরা কোথায় গিয়ে বাঁচব?
টিয়ে বলল : আমি তো একটু খাব। তাতে সব পানি শুকিয়ে যাবে না।
ওরা বলল : আজ তুমি খাবে, অন্যদিন আরেকজন। তার পর তোমরা যদি সব পাখি দল বেঁধে আসতে থাকো তখন?
টিয়ে ভাবনায় পড়ে যায়। এখান থেকে নদী তো অনেক দূর। যেতে যেতে জ্ঞান হারাবে। টিয়ে আবার অনুনয় করে ওদের কাছে পানি পান করতে চাইল। ওদের মায়া হলো। সবাইকে নিয়ে বাঁচতে হবে। একা খাব একা বাঁচব- এ নীতি নিয়ে টিকে থাকার মানে হয় না। ওকে পানি খেতে দিল।
টিয়েটাও যেন প্রাণ ফিরে পেল। ওর টুকটুকে দুটো লাল ঠোঁট, কচি কলাপাতা রঙ সারা গা। টিয়েটা আকাশের দিকে মুখ তুলে চাইল। সৃষ্টিকর্তার কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করল।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল থেমেছে। আকাশে হঠাৎ দু-এক টুকরো মেঘ ভেসে এলো। সেই মেঘ ধীরে ধীরে সারা আকাশ ছেয়ে গেল। শুরু হলো বৃষ্টি। সেই সঙ্গে ঝড়ও। গাছপালারা ঝড়ে দোল খাচ্ছে। তবে ঝড় তত তীব্র নয়। সারা বিকেল ধরে বৃষ্টিতে মাঠঘাট, খাল-বিল পানিতে ভরে গেল। ডোবার ব্যাঙ ও মাছগুলো খুশিতে হুটোপুটি ও ডুবসাঁতার খেলতে লাগল। ব্যাঙরা গলা ছেড়ে ঘ্যা ঘো ডাকা শুরু করল। টিয়েটা উড়ে গিয়ে বসেছিল গাছের একটি ডালে পায়ের নখ দিয়ে শক্ত করে ডাল ধরে। আনন্দে ওর মনটাও নেচে উঠল।
সন্ধ্যে নেমেছে মেঘের আড়ালে। ঝিঁঝিঁ পোকারা নতুন পানিতে ওরাও ডেকে চলল। জোনাকির দল বেরিয়ে এলো উড়তে উড়তে মিটমিট জলতে জলতে। এক ঝলক বৃষ্টিতে সবাই খুশি হলো।