সিসিক’র সীমানা বর্ধিতকরণ
ওয়ার্ড বিভক্তির জন্য ফের শুনানী
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ জুলাই ২০২১, ৬:৫১:৫৮ অপরাহ্ন

সদর ও দক্ষিণ সুরমার ২৮ মৌজা অন্তর্ভুক্ত
মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম
সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক)-এর বর্ধিতকরণ প্রস্তাব প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) বৈঠকে অনুমোদিত হলেও কর্পোরেশনের ওয়ার্ড বিভক্তিকরণের জন্য ফের শুনানী অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় (এলজিআরডি) থেকে স্থানীয় প্রশাসনকে চিঠি দেয়া হতে পারে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, সিসিকের সাথে সিলেট সদর ও দক্ষিণ সুরমার ৭টি ইউনিয়নের ২৮টি মৌজা অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে।
সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সরকারের যুগ্ম সচিব বিধায়ক রায় চৌধুরী সিলেটের ডাককে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, নিকারের বৈঠকে সীমানা বর্ধিত করার বিষয়টি অনুমোদিত হলেও ওয়ার্ড বিভক্তির জন্য আরো বেশ কিছু প্রক্রিয়া বাকি রয়েছে। এজন্য মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে একটি চিঠি বরাবরের মতো জেলা প্রশাসককে দেয়া হতে পারে। চিঠি জেলা প্রশাসককে না দিলে হয়তো নির্বাচন অফিস কিংবা সিটি কর্পোরেশনকেও দিতে পারে। মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি প্রাপ্তির পর সংশ্লিষ্টরা ওয়ার্ড বিভক্তিকরণের জন্য ফের শুনানী করবেন। শুনানী ও আপত্তি গ্রহণের পর জনসংখ্যা-আয়তনের ওপর ভিত্তি করে ভাগ করা হবে ওয়ার্ড। এরপর এ প্রস্তাব পাঠানো হবে মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয় থেকে গেজেট প্রকাশের পর চূড়ান্ত হবে ওয়ার্ড। সিসিকের ওয়ার্ড সংখ্যা হচ্ছে ৫২-বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত রিপোর্ট সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ওয়ার্ড বিভক্তির বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিকারের বৈঠকে সীমানা বর্ধিতকরণ অনুমোদনের বিষয়টি একটি বড় কাজ। এখনকার যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পাদন করবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
সিসিকের সিইও জানান, কর্পোরেশনের বর্তমান আয়তন ২৬.৫০ বর্গ কি.মি.। সীমানা সম্প্রসারণের জন্য প্রস্তাবিত এলাকার আয়তন ৩৩ বর্গ কি.মি.। সম্প্রসারণের পর সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মোট আয়তন হবে ৫৯.৫০ বর্গ কি.মি.।
সিসিকের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে যেসব এলাকা-
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, সীমানা বর্ধিতকরণের গেজেট এখনো প্রকাশিত হয়নি। তবে, সীমানা সম্প্রসারণের চূড়ান্ত প্রস্তাবনাটি সিলেটের ডাক-এর পক্ষ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, সিলেট সদর উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ২৮টি মৌজা অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে সিসিকে।
যেসব এলাকা অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে- সেগুলো নিম্নরূপ-
সিলেট সদর উপজেলার টুকেরবাজার ইউনিয়নের কুমারগাঁও মৌজা, জেএল নম্বর ৮০, মইয়ারচর-৮১ (দাগ নম্বর ৭৭, ৮২, ৮৩, ৮৯, ৯০, ৯১ ব্যতীত) টুকেরবাজার ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ভূমি, খুরুমখলা শাহপুর-৮২, আখালিয়া-৮৮ (পূর্বে সিলেট সিটি কর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্ত অংশ ব্যতীত অবশিষ্ট ভূমি) ও ঘোপাল উত্তর-৮৩ (টুকেরবাজার ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত অংশ), খাদিমনগর ইউনিয়নের কুমারগাঁও-৮০, খাদিমপাড়া ইউনিয়নের বহর-৭০, সাদিপুর ১ম খন্ড-৯৩ (পূর্বে সিলেট সিটি কর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্ত অংশ ব্যতীত অবশিষ্ট ভূমি), টিলাগড়-৯৫, দেবপুর-৯৬ (পূর্বে সিলেট সিটি কর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্ত অংশ ব্যতীত অবশিষ্ট ভূমি), কসবা কুইটুক-১০০, সুলতানপুর চক-১০১, পেশনেওয়াজ-১০২ ও হাজিরাই-১০৩ (সেনানিবাসের জন্য অধিগ্রহণকৃত ভূমি ব্যতীত), টুলটিকর ইউনিয়নের সাদিপুর ১ম খন্ড-৯৩ (পূর্বে সিলেট সিটি কর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্ত অংশ ব্যতীত অবশিষ্ট ভূমি), টিলাগড়-৯৫ ও দেবপুর ৯৬ (পূর্বে সিলেট সিটি কর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্ত অংশ ব্যতীত অবশিষ্ট ভূমি), দক্ষিণ সুরমার কুচাই ইউনিয়নের পশ্চিমভাগ-১০৪, কুচাই-১০৫, পালপুর-১০৬, হবিনন্দি-১০৭ (পূর্বে সিলেট সিটি কর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্ত অংশ ব্যতীত অবশিষ্ট ভূমি), মনিপুর-১০৮ (পূর্বে সিলেট সিটি কর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্ত অংশ ব্যতীত অবশিষ্ট ভূমি), আলমপুর-১০৯ (পূর্বে সিলেট সিটি কর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্ত অংশ ব্যতিত অবশিষ্ট ভূমি), গোটাটিকর-১১০ (পূর্বে সিলেট সিটি কর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্ত অংশ ব্যতীত অবশিষ্ট ভূমি), রুগনপুর-১২৭, তৈয়ব সুলতান-১২৮ ও শ্রীরামপুর-১২৯, বরইকান্দি ইউনিয়নের পিরিজপুর-১১৪, ধরাধরপুর-১১৫, বরইকান্দি-১১৬, (পূর্বে সিলেট সিটি কর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্ত অংশ ব্যতীত অবশিষ্ট ভূমি) ও গোধরাইল-১২৬ (পূর্বে সিলেট সিটি কর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্ত অংশ ব্যতীত অবশিষ্ট ভূমি), তেতলি ইউনিয়নের ধরাধরপুর-১১৫, বরইকান্দি-১১৬, (পূর্বে সিলেট সিটি কর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্ত অংশ ব্যতীত অবশিষ্ট ভূমি) ও বলদী-১২৫ (আংশিক) (দাগ নম্বর ২১৯৯-২৩৪৯, ৩৫০৯-৩৫১১, ৩৫১৩, ৩৫৩৫)।
এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনায় বলা হয়, সিসিক সম্প্রসারণের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সিলেট সিটি কর্পোরেশন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং (৪) বর্ডার গার্ড, বাংলাদেশ এর পক্ষ হতে কয়েকটি প্রস্তাব পাওয়া যায়। প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) সীমানা পরিবর্তন (সম্প্রসারণ ও সংকোচন) বিধিমালা, ২০১৩ অনুযায়ী মতামত প্রদানের জন্য জেলা প্রশাসক, সিলেট-কে অনুরোধ করা হয়েছিল। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, সিলেট হতে জানানো হয়, প্রস্তাবিত এলাকার মধ্যে সিলেট জেলার সদর উপজেলার নিম্নবর্ণিত ৩টি ইউনিয়ন এবং দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ২টিসহ নিম্নবর্ণিত ৫টি ইউনিয়নের ১৮টি মৌজা সম্প্রসারণের জন্য এ বিধিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত মানদণ্ডসমূহ পূরণ করে পরবর্তীতে এ বিধিমালার বিধি ৫ অনুযায়ী উল্লিখিত এলাকার অধিবাসীদের কাছ থেকে পরামর্শ / আপত্তি আহ্বান করে গণবিজ্ঞপ্তির জারি, আপত্তি বিষয়ে শুনানী অনুষ্ঠানপূর্বক চূডান্ত প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ হতে জেলা প্রশাসক, সিলেট-কে অনুরোধ করা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক, সিলেট কর্তৃক বিগত ৯ আগস্ট এ সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয় মর্মে স্থানীয় সরকার বিভাগকে অবহিত করেন। সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র, তথ্য-উপাত্ত ও সংশ্লিষ্ট এলাকার অধিবাসীদের অভিমত পর্যালোচনায় সিলেট জেলাধীন সিলেট সদর উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন এবং দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের উল্লিখিত এলাকাকে সিসিকের সীমানা সম্প্রসারণের জন্য জেলা প্রশাসক, সিলেট কর্তৃক সুপারিশ করা হয়। একটি সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসক কর্তৃক সুপারিশকৃত এলাকাই নিকারের বৈঠকে অনুমোদিত হয়েছে।