কনকনে শীতে
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ ডিসেম্বর ২০২১, ৪:২৩:৩১ অপরাহ্ন

মোঃ মনজুর আলম
এই শীতে সবুজ ও সাথীর কষ্টের শেষ নাই। তারা ছোট ছোট ছেলে মেয়ে। বাবা দিন মজুর। প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামে তারা ভাড়া ঘরে থাকে। তাদের মূল বাড়ি ভাটি অঞ্চলে। তাই একটু ভালো থাকার জন্য আর কাজ করে ছেলে, মেয়ে, স্ত্রী প্রতিপালনের জন্য নিজ বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসা। তা আবার এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে।
সবুজ সাথীর বাবা মফিজ মিয়া যে বাড়িতে এসেছেন সে বাড়িতে চারটি ঘর একটি ঘরে কেহ থাকে না তাই এ ঘরটি মালিক ভাড়া দিয়েছে। মাটির বেড়া আর টিনের ছাউনি। শীতের সময় এমন ঘরে ঠান্ডা আরো বেশি অনুভব হয়। ঘরের দরজার ফাঁক দিয়ে বাতাস এসে ঘরে ঢুকে। সবুজ ও সাথীদের ঘরে একটি মাত্র চৌকি চারজন গাদাগাদি করে ঘুমায় তবুও শীতে তারা সবাই কষ্ট পায়। সকাল বেলা সবুজ ও সাথী সূর্যের অপেক্ষায় থাকে। কখন সূর্য উদিত হবে। তাদের মা সকালে উঠে নামাজ শেষে যা জোগাড় হয় তা রান্নার চেষ্টায় ব্যস্ত থাকেন। ওদিকে মফিজ মিয়া কাজে যাওয়ার জন্য তৈরি হতে থাকেন। কাজে বহুদূর যেতে হয়। গ্রামগঞ্জে সাধারণত মানুষ নিজের কাজ নিজেই করে থাকেন। তাই কামলা খাটাতে কেহ চায় না। বহু দূর গিয়ে তাই মফিজ মিয়াকে কাজ করতে হয়।
সবুজ ও সাথী রোদ পোহাতে একটু উচু জায়গায় বসে থাকে। সূর্য উঠলে তারা ভারী খুশি। সূর্যের তাপে তাদের কষ্ট দূর হয়। তারা যেন রোদ থেকে আসতে চায় না। তারা দীর্ঘক্ষণ সূর্যের তাপে বসে থাকতে চায়। তাদের মা খাবার নিয়ে ডাকলেও তারা আসতে চায় না। তাদের শরীরে আরাম লাগে তাদের বাবা শীতের গরম কাপড় ক্রয় করতে গেলে তার একটা দিন খোঁয়া যাবে। তখন খাবে কি? আর টাকারও প্রয়োজন আছে।
একদিন খবর এলো এলাকার একটি সংগঠন শীতবস্ত্র বিতরণ করবে। প্রায় প্রতি ঘরেই টোকেন দেওয়া হয়েছে। যারা টোকেন পেয়েছে তারা টোকেন প্রদর্শন করে শীতবস্ত্র আনবে। সবুজ ও সাথী একটু খুশি হলো। এবার বুঝি তাদের শীত কষ্ট দূর হবে। দেখতে দেখতে শীতবস্ত্র বিতরণের তারিখ এসে গেলো। মফিজ মিয়ার ঘরে কোনো টোকেন আসল না তারা ক্লাবের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বলল আমরা এলাকার লোকজনকে শীতবস্ত্র দেব। আর যারা এ এলাকার ভোটার তারাই পাবে। মফিজ মিয়া তবুও ঐদিন তার ছোট বাচ্চাদের সেইখানে পাঠিয়ে দেয়। যদি কেহ ঐ বাচ্চাদের দেখে শীতবস্ত্র দিয়ে দেয়।
কিন্তু না। তারা দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও সবুজ, সাথীকে একটিও শীতবস্ত্র দেওয়া হলো না, সবুজ বলে উঠল ভাড়াটিয়াদের বুঝি শীত কষ্ট নেই। তারা কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি চলে আসে। ক্লাব কর্তৃপক্ষের চোখ খুলে যায়। তারা সিদ্ধান্ত নেয় আগামী বছর থেকে এমন বৈষম্য করা যাবে না। হতদরিদ্রের শীত বস্ত্র দেয়া হবে সে এলাকার হোক না হোক মফিজ মিয়া মনে কষ্ট পেয়ে সে তৈরি হয় হাট থেকে সে তার বাচ্চাদের জন্য শীতবস্ত্র নিয়ে আসবে। তবে হাটবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সে এলাকায় শনিবার ও মঙ্গলবার সপ্তাহে দুই দিন হাট বসে। শীতবস্ত্রের দামও খুব বেশি নয়। পুরানো বা স্পটেড মাল ২০-৫০ টাকায় পাওয়া যায়। সবুজ সাথীকে মফিজ বলল, আগামী মঙ্গলবার তোমাদের জন্য শীতের কাপড় আনব। ওমনি তারা বাবাকে জিজ্ঞেস করল ভাড়াটিয়াদের কাছে বিক্রি করবে তো! বাবা নিরুত্তর।