ক্ষুদে হকার
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ জুন ২০২১, ৯:৪৯:৫৬ অপরাহ্ন
মো. মনজুর আলম
প্রতিদিনের মতো ভোরে ঘুম থেকে উঠে সাদিক সবজি মার্কেটের দিকে হেঁটে হেঁটে ছুটে। পাইকারী সবজি কিছু কিনে সে রাস্তায় কিংবা ফুটপাতে বিক্রি করে। কখনো বসে কখনো হেঁটে। সাধারণত কাঁচা মরিচ ও ধনিয়া পাতা প্রতিদিন সে বিক্রি করে। তবে মাঝে মধ্যে অন্য সবজিও সে বিক্রি করে। তার পুঁজি কম সে বয়সেও ছোট। তাই একটি টুকরিতে যা ধরে, বা যা সে কাঁধে করে নিয়ে বহন করতে পারে, সে পরিমাণ সে কিনে এনে বিক্রি করে।
সাদিকের বয়স ১৪/১৫ হবে। তার মা বাবাও কাজ করে তবে সংসার চলে না। একটু বাড়তি আয়ের জন্য তার এ প্রচেষ্টা। সাদিক সবজি মার্কেটে এসে কিছু সময় ঘুরাঘুরি করে বাজারের দাম দর দেখে। তার পর কাঁচা মরিচ, ধনিয়া পাতা ও লেবু কিনে। তার টুকরিতে দুই তিনটি ব্যাগে পুরে দুই তিন ভাগ করে নিয়ে আসে জন বহুল স্থানে বা ফুটপাতে। বেলা তিনটার পর সে বিক্রি শুরু করে। সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারে। তবে মাঝে মধ্যে একটু রাত হয়ে গেলে তার বাবা এগিয়ে আসে। প্রতিদিন কে বা কারা এসে বিশ টাকা করে চাঁদা নেয়। তবে সাদিক একা এই চাঁদা দেয় না। রাস্তায় বা ফুটপাতে যতজন বিক্রি করে, প্রত্যেকেই চাঁদা দিয়ে রাস্তায় বা ফুটপাতে বসে তাদের জিনিস বিক্রি করে।
রাতে ঘরে গিয়ে তার অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করে। কত ক্রেতা কত কথা বলে। কেউ কম দিতে চায়। কেউ ছোট বালক দেখে কত কথা জিজ্ঞেস করে। কেউ বলে তোমার মা বাবা নেই? তারা কী করে। যতই কথা হোক সেও যা বলুক, তবে চাঁদা প্রতিদিনই দিতে হয়। এভাবে চলছিল সাদিকের ক্ষুদে ও ভাসমান দোকান। কিন্তু ফুটপাতে বা রাস্তায় যে সে অবৈধস্থানে ব্যবসা করছে বা অন্যরাও করছে তা বুঝতে পারেনি। সাদিক মনে করেছে এটা তার ব্যবসা করার স্থান, যেভাবে অন্য আরো কতলোক ব্যবসা করছে। একদিন পুলিশ বড়ই কঠোর হলো। তারা গাড়ী চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে এমন কাজেও ফুটপাত হকারমুক্ত করণ কাজে হাত দিল। শুরু হলো হকার উচ্ছেদ অভিযান। সাদিক পড়ল বড়ই বিপাকে। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে সাদিক সেদিন আর ব্যবসা করতে পারে না। পুলিশ চলে গেলে আবারো ছাদিকসহ অন্যরা দোকান সাজাতে চায়। কিন্তু পারে না আবারো পুলিশের হানা। এভাবে বেশ কয়দিন চলতে থাকে। তার ব্যবসায় ভাটা পড়ে।
সাদিক অন্য কিছু করতে চায়। কিন্তু তার পুঁজি নাই। হকারদের পক্ষ থেকে বলা হয় পুনর্বাসনের কথা। সাদিক তা বুঝতে পারে না। পরে একজন বলল আমাদেরকে অন্য জায়গায় ব্যবসা করার স্থান দিয়ে তারপর হকারমুক্ত করা হবে। সাদিক আশায় বুক বাঁধে।
আরো কয়েকদিন রাস্তায় বা ফুটপাতে ব্যবসা করা যাবে। আবারো শুরু হলো সাদিকের ব্যবসা। মা বাবার হাতে আবারো কিছু টাকা সাদিক দিতে শুরু করল। সাদিক ভোরে এসে সবজি মার্কেট থেকে কাঁচামরিচ ধনিয়া পাতা, লেবু ক্রয় করে দুপুরে বিক্রি করে রাতে সে বাসায় চলে যায়। এভাবে চলতে চলতে একদিন পুরো সড়ক আর ফুটপাত হকারমুক্ত ঘোষণা করা হলো। হকাররা অন্যত্র বসার স্থান পেল। কিন্তু সাদিক ছোট বলে পুনর্বাসন তালিকায় সে স্থান পেল না। এখন সাদিক বেকার। মলিনতায় মুখ।