পরিবহন খরচ বৃদ্ধি ও কাঁচামালের দুষ্প্রাপ্যতা মূল কারণ
খাদিম বিসিকে আড়াই বছরে সানটেকসহ ৬ শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ নভেম্বর ২০২২, ৪:৪৭:৫৩ অপরাহ্ন

নূর আহমদ
সিলেটের খাদিম বিসিক শিল্পনগরীতে গত আড়াই বছরে ৬টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। সর্বশেষ চলতি বছরের জুন থেকে বিদেশে টায়ার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সানটেক টায়ার লিমিটেড তাদের উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া শিল্প ইউনিটের মধ্যে চারটি কেমিক্যাল ও একটি টেক্সটাইল ও একটি খাদ্য ও খাদ্যজাত ইউনিট রয়েছে। কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কাঁচামালের দুষ্প্রাপ্যতা ও অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে শিল্প ইউনিটগুলো বন্ধ হবার পেছনে মূল কারণ।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, খাদিমনগরে বিসিক শিল্পনগরীর যাত্রা শুরু ১৯৯৬ সালে। এটি সিলেটের ২য় শিল্পনগরী। এখানে ৭৪টি শিল্প ইউনিটের মধ্যে ৬৫টি পুরোদমে চালু রয়েছে। বাকি ৯টির মধ্যে ৬টি বন্ধ রয়েছে ও ৩টিতে চলছে অবকাঠামো নির্মাণ। এসব শিল্প কারখানায় মোট বিনিয়োগ ১৬০ কোটি টাকা। বার্ষিক উৎপাদন হচ্ছে ৩৯২ কোটি টাকা। ৫ হাজার ৭শ’ ৩০ জন মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে খাদিমনগর বিসিকের বিভিন্ন শিল্প কারখানায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২০ সাল থেকে এ বছর পর্যন্ত খাদিম শিল্পনগরীতে ৬টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে মেসার্স ইসলাম টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড বন্ধ রয়েছে ২০২০ সালের ১৫ মে থেকে। কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, লোকসান, পরিবহন ব্যয় ও জ্বালানি ব্যয় বৃদ্ধির জন্য বন্ধ করে দেয়া হয় প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কারখানাটির মালিকানা হস্তান্তর করে দিতে চান। একই বছরের ২০ ডিসেম্বর বন্ধ হয়ে যায় মেসার্স নোভা কেমিক্যাল নামক শিল্প কারখানাটি। একই কারণ দেখিয়ে মালিক আব্দুল লতিফ খাদ্য ও খাদ্যজাত প্রতিষ্ঠান দুধওয়ালার কাছে মালিকানা হস্তান্তর করে দিয়েছেন। দুধওয়ালা মালিকানা পেলেও প্রতিষ্ঠানটি চালুর ব্যাপারে আরো সময় নিয়েছে।
২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর মেসার্স ছিদ্দিকী চারকল বন্ধ হয়ে যায়। এই শিল্প ইউনিটটি হস্তান্তরিত হয়েছে পিউরিয়ার কাছে। শিগগিরই তাদের কার্যক্রম চালুর কথা রয়েছে। মেসার্স রয়েল ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ বন্ধ হয়ে যায় একই বছরের ৮ ডিসেম্বর। এই প্রতিষ্ঠানটি চালুর কোন সম্ভাবনা নেই। আগামী এলএসি মিটিংয়ে করণীয় ঠিক করবে বিসিক কর্তৃপক্ষ।
সর্বশেষ খাদিম শিল্প নগরীর বিদেশে রপ্তানিকারক বড় একটি প্রতিষ্ঠান সানটেক টায়ার লিমিটেড তাদের উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। দুটি শিল্প ইউনিট নিয়ে গঠিত সানটেক টায়ার এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম নুরুল হক বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য করোনা ভাইরাস ও যুদ্ধের কারণে কাঁচামালের দুষ্প্রাপ্যতা ও অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তারা নতুন করে চালুর জন্য বিসিকের কাছে ২ মাস সময় চেয়েছেন।
এছাড়া, এই শিল্পনগরীর তিনটি রুগ্ন শিল্প ইউনিটকে সচল করার উদ্যোগ নিয়েছে বিসিক। যার মধ্যে হিমায়িত মাছ ও সবজি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ইউরোক্রস ফ্রোজেন ফুডস লিমিটেড একটি। ২০১৫ সালে প্লট পেলেও এর নির্মাণ কাজ মাত্র ১৫% হয়েছে। বারবার তাগিদ দিয়েও কাজ শেষ করতে পারছে না উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান।
জুতা/সু তৈরিকারক প্রতিষ্ঠান আলরাজি ফুটওয়্যার প্রাইভেট লিমিটেড ২০১৯ সালের প্লট বরাদ্দ নিয়ে এখনো ২৫% কাজ করেছে। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানিয়ে আরো সময় চেয়েছে তারা। ২০২০ সালের হস্তান্তরিত প্লট নিয়ে কাজ শুরু করে কিষোয়ান স্ন্যাক্স লিমিটেড ৯৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন করেছে। তবে গ্যাসের জন্য উৎপাদনে যেতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি।
খাদিম বিসিকে খাতওয়ারি শিল্প ইউনিটের মধ্যে খাদ্য ও খাদ্যজাত ৩৪টি, বস্ত্র ও বস্ত্রজাত ১টি, প্রকৌশল ১১টি, ইলেকট্রনিক্স ১টি, রাসায়নিক ১০টি, চামড়া ১টি, প্যাকেজিং ও প্রিন্টিং ২টি, ঔষধ ১টি, রাবার ৪টি, প্লাস্টিক ৩টি, ফার্নিচার ২টি ও ড্রাইক্লিন ৪টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
খাদিম বিসিকের শিল্পনগরী কর্মকর্তা মো: তোফাজ্জল হোসেন বলেন, বন্ধ হয়ে যাওয়া শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালুর ব্যাপারে প্রতিষ্ঠান মালিকদের বার বার তাগিদ দেয়া হচ্ছে। এর বেশ সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। যারা একেবারেই উৎপাদনে আসার সম্ভাবনা নেই-তাদের অন্য উদ্যোক্তাদের হস্তান্তরের তাগিদ দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে তিনটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান উৎপাদনে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া, বিসিকের অভ্যন্তরে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নেও কাজ করছে বিসিক।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন বিসিক শিল্প সহায়ক কেন্দ্রের উপ মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী ম. সুহেল হাওলাদার বলেন, আমরা রুগ্ন বা নিষ্ক্রিয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো চালুর ব্যাপারে উৎসাহ দিচ্ছি। আবার কোন কোন উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান চালাতে না পারলে অন্যদের সুযোগ করে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। যার ফলে ফুলকলি, পিউরিয়াসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান উৎপাদন শুরু করতে পেরেছে। তিনি বলেন, আরো শিল্প প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ কাজ চলছে। দুধওয়ালার মতো নতুনদেরও সুযোগ করে দিচ্ছি। তিনি বলেন, শিল্প বান্ধব পরিবেশ বজায় রাখতে কাজ করছে বিসিক।
ম. সুহেল হাওলাদার বলেন, নতুন একটি বিসিক গড়ে তোলার ব্যাপারে কাজ চলছে। তিনটি জায়গা চিহ্নিত করে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে নতুন করে তিনি তাগিদ দিবেন বলে জানান।