খাদ্যসংকট বিশ্বজুড়ে
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২১ জুন ২০২২, ৯:০৫:১১ অপরাহ্ন

খাদ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধিতে অতিষ্ট দেশের মানুষ। সেই সঙ্গে বাড়ছে সেবাখাতের দাম। কিন্তু খাদ্যপণ্যের এই দাম বৃদ্ধির প্রতিযোগিতা শুধু আমাদের দেশেই নয়,সারা বিশ্বেই রয়েছে। জানা গেছে, রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিদ্যমান খাদ্য সংকট আরও প্রকট হচ্ছে এবং বিশ্বজুড়ে খাদ্যের দাম বেড়ে অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) জানিয়েছে, চলতি বছরের মে মাসে সংস্থাটির খাদ্য মূল্যসূচক কমেছে।
একদিকে বৈশ্বিক মহামারি করোনা; তার সঙ্গে যুক্ত হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। সব মিলিয়ে সারা বিশ্বের অর্থনীতি বিপর্যস্ত। মানুষের আয়-রোজগার কমেছে, বেড়েছে খাদ্যপণ্যসহ সব ধরণের পণ্যের দাম। বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া বরাবরই বিশ্বের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য শস্য রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে একটি। এতোদিন আন্তর্জাতিক বাজারে মোট গমের চাহিদার ত্রিশ শতাংশেরও বেশি যোগান আসতো রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। শুধু গম নয় যব, সূর্যমুখী তেল ও সরিষা তেলেরও বড় যোগান আসতো এ দু’টি দেশ থেকে। ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার কারণেই এগুলোর উৎপাদন ও রপ্তানি কমেছে। খাদ্য সংকটের বিষয়ে এফএও’র বিশ্লেষক বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে জ্বালানির পাশাপাশি সাহায্য বিতরণের খরচও বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় তীব্র খাদ্য সংকটের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, করোনাকালিন প্রতিটি পণ্যের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা সমস্যায় পড়েছিল। বাদ ছিল না কৃষিও। যে কারণে ইউক্রেন আগ্রাসনের আগেই অনেক কৃষি পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছিলো। আর ইউক্রেন আগ্রাসন পরিস্থিতিকে নিয়ে যাচ্ছে আরও ভীতিকর অবস্থার দিকে। যুদ্ধের একটা তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়ছে খাদ্যশস্য সরবরাহ ব্যবস্থার ওপরে। বৈশ্বিক গম রপ্তানিতে ইউক্রেনের হিস্যা ১০ শতাংশ। দেশটি পৃথিবীর ১৩ শতাংশ ভুট্টা রপ্তানি করে। আর বিশ্বের গম রপ্তানির ২০ শতাংশ করে রাশিয়া। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইউক্রেন তার কোনো খাদ্যশস্য রপ্তানি করতে পারছে না। খাদ্য রপ্তানি করার বন্দর ওডেসায় ৫০ লাখ টন রপ্তানিযোগ্য গম মজুত আছে। আমাদের দেশে এখন বার্ষিক গমের চাহিদা এক কোটি টনের মতো, অর্থাৎ চালের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। এর প্রায় পুরোটাই আমদানি করতে হয়।কিন্তু চাহিদামতো আমদানি হচ্ছে না। তাই স্বভাবিকভাবেই দেশে গম থেকে উৎপাদিত খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে।
এই যদি হয় সার্বিক অবস্থা তখন দেখা দরকার আমরা কীভাবে খাদ্যসংকট মোকাবেলা করবো। দেশে গমের যে চাহিদা রয়েছে তার ৯০ শতাংশই বাংলাদেশ আমদানি করে। চালেও বাংলাদেশ ক্রমাগত আমদানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। গত কয়েক বছর বাংলাদেশ বিশ্বের সর্বোচ্চ চাল আমদানিকারক দেশ ছিল। আর গত বছর ২৬ লাখ টনের বেশি চাল আমদানি করে। গত মাস পর্যন্ত সরকারের কাছে ১১লাখ টন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। এই মজুদ আগামি মওসুম পর্যন্ত চাহিদার তুলনায় সন্তোষজনক নয়। এই অবস্থায় কী করণীয়, সেটা খুঁজে বের করতে হবে।