খুশির খবর
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০২ জুন ২০২২, ৪:৩৪:১৭ অপরাহ্ন

আল আমিন মুহাম্মাদ
টুনো আর টুনি। ফুটফুটে দুটো ছানা নিয়ে আমগাছের ডালে বাস করে। কিন্তু ঠিকমত খেতে পায় না বাচ্চাগুলো। এজন্য টুনো আর টুনি খুব কষ্ট পায় মনে। শুধু যে গরীব হওয়ার কারণে তাদের এই সমস্যা তা নয়। সমস্যা হচ্ছে, এই বনের ভিতরে একটি মাত্র দোকান আছে প্যাঁচার; সে সবকিছুর দাম ন্যায্য মূল্য থেকে অনেক বেশি নেয়। যার দরুন এই বনের গরীব ও মধ্যবিত্তদের অবস্থা খুব নাজুক। এমতাবস্থায় টুনি একদিন টুনোকে বলল- আচ্ছা এই অবস্থা থেকে সবাই কিভাবে রক্ষা পাবে তার একটা ব্যবস্থা করলে হয় না?
-হুম ঠিকই বলেছো। এর একটা ব্যবস্থা করতেই হবে সবাই মিলে। আমরা আর পারছি না!
-আচ্ছা তুমি কয়েকজনের সঙ্গে এই ব্যাপারে একটু আলাপ করো তো।
-ঠিক বলেছো। আমি এখনি কাক, শালিক আর দোয়েল ভাইদের সঙ্গে কথা বলছি।
সঙ্গে সঙ্গেই চলে গেলো তাদের সঙ্গে কথা বলতে। সবকিছু বলার পর কাক বলল- এর একটা ব্যবস্থা অবশ্যই সবাই মিলে করতে হবে। তবে তার আগে তাকে সাবধান করে দিতে হবে। যদি সে শোনে, তাহলে তো ভালো; আর না শুনলে, শোনার ব্যবস্থা করতে হবে।
টুনো সেখান থেকে চলে আসলো স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। দোয়েল তখন কাককে বলল- আচ্ছা টুনোর কথা যে সত্য তার একটা প্রমাণ জোগাড় করতে হয় যে।
-ঠিকই বলেছো। এই বলে কাক, শালিককে বলল- আচ্ছা তুমি মধুপুর বনে গিয়ে দেখত টুনির কথা সত্য কি না।
কথামত শালিক চলে গেলো মধুপুর বনে। গিয়ে দেখতে পেলো, এখানে সবকিছুর দাম তাদের বন থেকে অনেক অনেক কম।
শালিক মনমরা হয়ে ফিরে আসলো বনে। চোখ-মুখের ভাব দেখেই কাক বুঝতে পেরেছে টুনোর কথাই সত্য। যা হোক সবকিছু খুলে বলার পার ওরা প্যাঁচার দোকানে চললো কিছু কিনতে আর তাকে সাবধান করে দিতে।
কাক, শালিক ও দোয়েল সবকিছু কেনার পর মূল্য পরিশোধ করতে গিয়ে দেখে সবকিছুর দাম ন্যায্য মূল্য থেকে অনেক বেশি নিচ্ছে প্যাঁচা। হতবাক হয়ে গেলো সবাই। সবাই সবার দিকে একসঙ্গে তাকালো। তারপর কাক বলল- ভাই, তুমি সবকিছুর দাম এত বেশি নিচ্ছো কেন?
-আরে না ঠিকই নিচ্ছি। প্যাঁচার এই কথা শুনে সবাই রাগান্বিত ও অবাক হয়ে গেলো। তারপর কাক বলল- প্যাঁচা ভাই, তুমি সবকিছুর দাম আর বেশি নিতে পারবে না। নিলে খবর আছে কিন্তু! আর কিছু বললাম না। এই বলে ওরা ওখান থেকে বাড়ি ফিরে গেলো। প্যাঁচা চিন্তা করতে লাগলো ব্যাপারটা কী! দরকার হলে এমনিতেই আসবে, ঢং কত!
পরদিন টুনোকে ডেকে পাঠালো কাক। সেখানে শালিক, দোয়েল ও বনের অন্যান্য পাখিরাও আছে। সবাই মিলে প্যাঁচাকে শায়েস্তা করার একটা ফন্দি আঁটলো। ফন্দিটা হলো, বনের সবাই আজ থেকে তিন দিন পর্যন্ত প্যাঁচার দোকান থেকে কিছু কিনবে না। এই ক’টা দিন সবাই কাকের বাড়িতেই খাবে-দাবে। সবাই আনন্দচিত্তে একসুরে বলল- আচ্ছা ঠিক আছে তা-ই হবে।
কী ব্যাপার কেউ দোকানে আসছে না, কোন কিছু বিক্রিও হচ্ছে না! ভারি সমস্যা তো। প্যাঁচার ভাবনা বেড়ে গেলো। দু’দিন ধরে কিছুই বিক্রি না হওয়ায় প্যাঁচা পড়ে গেলো মহা বিপদে। বিক্রি না হলে আমার ব্যাবসা হবে না, ছেলেমেয়েরা না খেয়ে থাকবে। তা তো হতে দেওয়া যায় না- ভাবতে ভাবতে প্যাঁচা চলে গেলো কাকের বাড়িতে। গিয়ে তার দুরাবস্থার কথা বলল কাককে। কাক বলল- তুমি যদি সবকিছুর মূল্য সঠিকভাবে নেও, তাহলে বনের সবাই তোমার কাছ থেকে কেনাবেচা করবো। আর যদি বেশি মূল্য নেও, তাহলে কেউ তোমার কাছ থেকে কিছুই কিনবো না।
প্যাঁচা তখন হাত জড়ো করে বলল- আচ্ছা ভাই ঠিক আছে আমি সবকিছুর দাম আর কখনো বেশি নেবো না।
-সত্যি তো?
– হুম সত্যি, সত্যি, সত্যি!
– আচ্ছা ঠিক আছে ভাই। শুনে খুব খুশি হলাম।
সেখানে উপস্থিত ছিলো গরীব টুনো। প্যাঁচার মুখ থেকে একথা শুনার পর খুশিতে আবেগাপ্লুত হয়ে উড়তে উড়তে চলে গেলো টুনির কাছে- এরকম খুশির খবরটা তাড়াতাড়ি দিতে হবে যে!