গঙ্গাবুড়ী ও পিঁপড়ে বাবু
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২০ জানুয়ারি ২০২২, ৪:০৯:৪১ অপরাহ্ন

আরিফুর রহমান সেলিম
শুভার পৃথিবীটা অনেক সুন্দর, অনেক রঙ্গিন। বাবার আদর, মায়ের ভালবাসা আর একমাত্র ভাই শুভকে নিয়ে তাঁর পৃথিবী। সেই পৃথিবীতে আরো আছে দাদাভাই, নানাভাই, দাদী, নানী, খালামণি আর ছোট্ট মামা। ছোট্ট মামাটা ভীষণ দুষ্টু, ভীষণ ভালো। শুভার জন্য চকোলেট, খেলনা, পুতুল কত কিছু নিয়ে আসে। শুভা মামাকে আদর করে পিচ্চি মামা ডাকে।
শুভারও একটা ডাকনাম আছে। এই নামে কে ডাকে তাকে? কে আর ডাকবে শুভার বাবা ছাড়া। শুভার বাবার দেওয়া সেই নামটি হলো গঙ্গাবুড়ী। বাবার কাছে সামিয়া সুলতানা শুভা নয় যেনো গঙ্গাবুড়ী নামটাই প্রিয়। গঙ্গাবুড়ী বলে ডাক দিলেই শুভা বুঝতে পারে তাঁর বাবা তাকে ডাকছে।
শুভর শার্ট পড়তে শুভার ভালো লাগে। শুভর ট্রেন গাড়ী, ঘুড়ী, এমন কি সাইকেলটার দখলও শুভার চাই। বাবা মার আদরের দখলও শুভার দখলে। শুভ কখনো রাগ করে আবার কখনো খুশি হয়। শুভ ভাবে থাক সব যদি শুভার অধিকারে থাকে তাতেও কোন দোষ নাই। শুভা তো আমার বোন। ও আছে বলেই তো ঘরটা এত আনন্দের।
শুভর বাংলা বইয়ের ছড়াগুলো শুভার মুখস্ত। বাবা বাড়ি এলেই ডাকবে কোথায় আমার গঙ্গাবুড়ী। আসো তো মা। আমাকে একটা ছড়া শুনাও। গঙ্গাবুড়ী তখন অভিনয় করে করে বাবাকে ছড়া শুনায়। মেয়ের কণ্ঠে ছড়া শুনে গঙ্গাবুড়ীর বাবা শিমুল সাহেব খুব খুশি হোন।
শুভ ইদানিং দেখছে তাঁর বাংলা বইয়ের পৃষ্টায় পৃষ্টায় ছবিগুলোতে কলম আর কাঠ পেন্সিলের কারুকাজ। সে বুঝতে পারে না এগুলো কে আঁকে। তাঁর ক্লাসমেট জসীম নাকি স্বাধীনের কাজ এগুলো। সে ভেবে পায় না। অনেক ছবিতে দেখা যায় ছোট ছেলের মুখে গোঁফ আকাঁ, দাড়ি আকাঁ। মেয়েদের কপালে লাল টিপ দেওয়া। গরুর ছবির নিচে দেওয়া ছোট ছোট দাগ যেন দেখে মনে হয় গরুটা হিসু করছে। গরুর হিসুর ছবিটা দেখে শুভর হাসি চলে আসে।
ঘরের চিনির ডিব্বাতে ইদানিং চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। শুভ, শুভার মা সুফলা সুলতানা তো ভেবেই পায়না চিনি গুলো কোথায় যায়। কে খায় চিনি গুলো। নাকি চিনি গুলো হাওয়া হয়ে যায়। শুভ মাকে বলে, ধরো চিনির দুটো হাত আছে। নয়তো পরীর মতো ডানা আছে। সেই ডানায় চড়ে চিনিগুলো প্রথমে সাত সাগরের তেরো নদীর পাড়ের রাজপুত্রের কাছে যায়। রাজপুত্রকে সাথে নিয়ে যায় চাঁদের দেশে। চাঁদের বুড়ী আর রাজপুত্র মিলে চিনিগুলো গপাস গপাস খেয়ে ফেলে। শুভর কথা শুনে শুভর মা হাসে। বলে শিশু মনের কত কল্পনা। চিনির কি কখনো ডানা হয়? আমাকে খুঁজে বের করতে হবে চিনিগুলো কোথায় যায়।
গঙ্গাবুড়ী তাদের বাড়ির ফুল বাগানে খেলতে যায়। সেখানে পাখি আসে, কিচির মিচির ডাকে, প্রজাপতি রঙ্গিন পাখা মেলে উড়াউড়ি করে। ফড়িংকে ধরতে যায় গঙ্গাবুড়ী। ফড়িংটার কাছে গেলেই সে ফুড়ৎ করে উড়ে যায়। গঙ্গাবুড়ী তাঁর পিচ্চি মামার দেওয়া চকোলেট মজা করে করে খায় বাগানে বসে। একদিন তাঁর মুখ থেকে চকোলেট মাটিতে পড়ে যায়। মাটিতে গড়াগড়ি খায় চকোলেটটা। মাটিতে ভরে গেছে তাই প্রিয় চকোলেটটা সে তুলে খেতে পারে না।
একটা অবাক কান্ড ঘটে সেখানে। কিছুক্ষণ পর গঙ্গাবুড়ী দেখে সেখানে তাঁর চকোলেট খেতে কিছু পিঁপড়া এসেছে। গঙ্গাবুড়ী অবাক হয় পিঁপড়া চকোলেট খায়! সে চুপি চুপি পিঁপড়াকে বলে আর কি খাও তোমরা? ভাত খাও? রুটি খাও? কেক খাও? চিনি খাও? একটা ছোট্ট পিঁপড়া বাচ্চা বললো, তুমি যা যা খাও আমরা তাঁর সবই খাই গঙ্গাবুড়ী। দেখোনা আমাদের খাবারের কি কষ্ট। গঙ্গাবুড়ী বললো কষ্ট পেও না পিঁপড়া বাবু। এখন থেকে আমি যা যা খাই তা রোজ তোমাদের খেতে দেব। গঙ্গাবুড়ীর কথা শুনে পিঁপড়ার বাচ্চা তো ভীষণ খুশি হলো।
পরদিন গঙ্গাবুড়ী তাঁর জন্য আনা একটা কেক নিয়ে গেলো বাগানে। কেকটা ভেঙ্গে ছোট ছোট করে মাটিতে রাখলো। ওমা পিল পিল পিল করে পিঁপড়া ও পিঁপড়ার বাচ্চারা কেক খেতে চলে এলো। সেই পিঁপড়ার বাচ্চাটাও এলো। কেক খেয়ে সে বললো বাহ্ গঙ্গাবুড়ী তুমি তো খুব মজার খাবার খাও। গঙ্গাবুড়ী বললো, পিঁপড়া বাবু তোমার ভালো লেগেছে কেক? সে কি বলো ভালো লাগবে না! তোমার খাবার তো খুবই মজা। ইশ আমি যদি তোমার বাড়ি যেতে পারতাম। তোমার বন্ধু হতে পারতাম। গঙ্গাবুড়ী বললো, আজ হতে তাহলে তুমি আমার বন্ধু।
শুভ আর শুভা বসে টিভি দেখছে। টিভিতে কাঁটুন দেখা অনেক মজা। হাসা হাসি করা যায়। একটি বিড়াল আর ইঁদুর যে কত দুষ্টামি করে। চিপস খেতে টিভি দেখছে তাঁরা। হঠাৎ গঙ্গাবুড়ীর মনে হলো তাঁর বন্ধু পিঁপড়ে বাবুর কথা। সে চিপসটা নিয়েই বাগানে চলে গেলো। একটা কোকিল তখন কুহু কুহু করে ডাকছিলো বাগানে। লাল পাঁচটা জবা ফুল মুখ হা করে ফুটে আছে। সে চিপসের প্যাকেট থেকে দুটো চিপস মাটিতে রাখলো। ঘ্রাণ পেয়েই পিঁপড়ে বাবু চলে এলো। সঙ্গে তাদের পুরো পরিবার। চিপসটা খুব চেটে পুটে খেলো তাঁরা। গঙ্গাবুড়ী শুধু পিট পিট করে দেখলো তাদের খাবার। পিঁপড়া বাবু বললো, তোমার কোন খাবার সবচেয়ে প্রিয় গঙ্গাবুড়ী? গঙ্গাবুড়ী বললো, আমার সবচেয়ে প্রিয় মিষ্টি। তাহলে আমাকেও মিষ্টি খাওয়াতে হবে। পিঁপড়া বাবু কেঁদে কেঁদে বললো। গঙ্গাবুড়ী বললো আচ্ছা।
গঙ্গাবুড়ী ঘরে এসে মাকে বললো, মা ফ্রীজে কি মিষ্টি আছে। একটা দাও না আমায়। খুব মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করছে। মা ফ্রীজ খুলে দেখলো ফ্রীজে একটাও মিষ্টি নাই। গঙ্গাবুড়ীর মন খারাপ হয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর গঙ্গাবুড়ী ভাবলো মিষ্টি না পেলে কি হয়েছে। ঘরে তো চিনি আছে। আমি তো মাঝে মাঝে চিনিও খাই। মিষ্টির মতোই স্বাদ। এক কাজ করি চিনিই নিয়ে পিঁপড়ে বাবুকে দেই। বেচারা কেঁদে কেঁদে বলেছে মিষ্টি খাবে। তারপর মুঠো ভরে চিনি নিয়ে গঙ্গাবুড়ী বাগানে গেলো। চিনি মাটিতে দিতেই পিঁপড়া বাবু এসে হাজির। চিনি খেয়ে তো সে নাচতেই লাগলো। গঙ্গাবুড়ীর কাছে এসে পিঁপড়া বাবু বললো, তুমি হলে আমার শ্রেষ্ঠ বন্ধু। গঙ্গাবুড়ী এ কথা শুনে খুব খুশি হলো।