অতিদ্রুত বুঝতে চেষ্টা করো না; কারণ তাতে অনেক ভুল থেকে যায়। -এডওয়ার্ড হল।
গণঅভ্যূত্থান দিবস আজ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ জানুয়ারি ২০২২, ১:০১:৪৬ অপরাহ্ন

বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক দিন ২৪ শে জানুয়ারি। এই দিনটিকে গণঅভ্যূত্থান দিবস হিসেবে পালন করা হয়। আজ যথাযোগ্য মর্যাদায় সারাদেশে পালিত হচ্ছে গণঅভ্যূত্থান দিবস। ১৯৬৯ সালের অজকের এই দিনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের শাসক সামরিক জান্তা আয়ুব খান বিরোধী আন্দোলন রূপ নেয় তীব্র গণঅভ্যূত্থানে। সেদিন সারা পূর্ব বাংলায় পালিত হয় হরতাল। বিক্ষোভকারী ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া হয় পুলিশ। পুলিশের গুলিতে শহীদ হয় ঢাকার নবকুমার ইন্সটিটিউটের নবম শ্রেণির ছাত্র মতিউর। এই সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। দীর্ঘদিন যাবৎ পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামরত বাংলার ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক-জনতার বিক্ষোভ আরও জোরদার হয়। এর তিন দিন আগে ২০ শে জানুয়ারি ছাত্রদের মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান। মূলত এই ঘটনাবলীর মধ্য দিয়ে গণঅভ্যূত্থানের প্রেক্ষাপট সূচিত হয়। তাই প্রতি বছর আজকের এই দিনে পালন করা হয় গণঅভ্যূত্থান দিবস।
দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের ওপর থেকে বাঙালিদের মোহ কেটে যেতে থাকে। পশ্চিম পাকিস্তানীরা বাঙালি জাতির ওপর জাতিগত ও অর্থনৈতিক শোষণ চালিয়ে যেতে থাকে। আর তখন থেকেই শুরু হয় পশ্চিমাদের অনাচারের বিরুদ্ধে বাঙালিদের রুখে দাঁড়ানো। একে একে আসে ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৫৮ সালে আয়ুব খানের সামরিক শাসন জারি এবং ৬২ সালে শিক্ষা আন্দোলন। ঘটনার পরিক্রমায় এক পর্যায়ে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বিকশিত হতে থাকে। এমনি এক পর্যায়ে ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিব ঘোষণা করেন বাঙালির মুক্তিসনদ ছয় দফা। ১৯৬৮ সালে আইয়ুব খানের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলন তীব্র হতে থাকে। ১৯৬৯ সালের জানুয়ারী মাসের শুরুতে গঠিত হয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। শেখ মুজিবের ছয় দফা এবং ছাত্রদের ১১ দফা দাবীর ভিত্তিতে গণ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে ১৯৬৯ এর ২৪ শে জানুয়ারি। এই গণঅভ্যূত্থানের পথ ধরেই মুক্ত হন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী শেখ মুজিবসহ অন্যান্যরা। এরপর ১৯৭০ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়লাভ, পশ্চিমাদের ক্ষমতা হস্তান্তরে অনীহা ও ষড়যন্ত্র বাঙালি জাতিকে এক দফা অর্থাৎ স্বাধীনতা আন্দোলনের দিকে ধাবিত করে। আর এভাবেই অনিবার্য হয়ে পড়ে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ।
উনসত্তরের গণঅভ্যূত্থানের আন্দোলন শুধু ছাত্র সমাজ ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো না। বরং কৃষক, শ্রমিক, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছিলো এই আন্দোলন। এর ফলে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও আমলাদের প্রতি মানুষের আস্থা বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে গ্রাম ও শহরাঞ্চলে শ্রেণিচেতনার উন্মেষ ঘটে। এই গণঅভ্যূত্থানের মধ্য দিয়েই পূর্ব বাংলার জনগণের মধ্যে পৃথক রাষ্ট্র গঠনের আকাঙ্খা বৃদ্ধি পায়। তাই ৬৯-এর গণঅভ্যূত্থান আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের একটি মাইলফলক। এই দিবসে আমাদের শপথ হওয়া উচিত এই দেশের জন্য আত্মউৎসর্গকারী শহীদদের স্মৃতিকে অমলিন করে রাখতে একটি সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তোলার।