গল্প: খাঁচার পাখির জীবন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০১ এপ্রিল ২০২১, ৩:০৪:৪৪ অপরাহ্ন

সুফিয়ান আহমদ চৌধুরী
আজ ক’দিন ধরে শিপলুর মন ভালো নেই। ঘরবন্দি জীবনকে মনে হয় খাঁচার পাখির জীবন। মনটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। মা-বাবার কথা মনে হয় খুব। মনে হয় প্রিয় স্বদেশের কথা। স্বদেশের সোনালি দিন ভেসে ওঠে চোখের পাতায়। ব্যাচেলার জীবন প্রবাসে। স্টুডেন্ট ভিসায় আসে। প্রায় তিন বছর। পড়ালেখার পাশাপাশি কাজও করে সে। আজ কয়দিন হয়ে গেলো কাজ নেই। কলেজের পড়াশোনাও অন লাইনে বাসা থেকে করে। জ্যাকসন হাইটসে ব্যাচেলার ম্যাচে থাকে আর চারজনের সাথে। টাকা সেইভ করে প্রতি মাসে দেশে পাঠিয়েছে। কাজ করতো রেষ্টুরেন্টে। রেষ্টুরেন্টে সবার প্রিয় ছিলো।
সবার সাথে ছিলো সুসম্পর্ক। অন লাইন পড়ালেখায় মন বসে না। মন বসাতেও পারে না সে। ছোট ভাই বোনের মুখগুলো ভেসে ওঠে। মনে পড়ে দুষ্টুমির সেই দিনগুলোর কথা। মনে পড়ে কানামাছি, লুডু খেলা, ক্যারেম খেলার দিনগুলোর কথা। মনে পড়ে বনভোজনে আনন্দের সময়ের মিষ্টি মুখর পরিবেশ। শীতের রাতে ব্যাডমিন্টন খেলা সাথীদের সাথে। হৈ-হুল্লোড়ে মেতে থাকার স্বর্ণালি সময়টা, ঠিক যেনো ফড়িং -এর ওড়াওড়ি।
সেই সব ছেড়ে আজ এই প্রবাসে। একাকি জীবনে। কেমন ভূতুরে পরিবেশে আজকাল। চারদিক-চারপাশ ঘিরে নিরব- নিস্তব্ধতা। প্রাণে নেই আনন্দের জোয়ার। শোকের খবরে মন ভেঙ্গে খান খান যেনো। লাশের মিছিল বেড়ে চলেছে। রাতে বিছানায় ঘুমোতে পারে না। রাজ্যের বিশাল ভাবনায় যেনো জড়িয়ে ধরে। বাবা মা’র সাথে ফোনে আলাপে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। শূণ্যতায় বুক খাঁ খাঁ এখন। মায়া ছায়া কোথাও নেই, যেনো নেই আশ্রয়। দেখার নেই কেউ, নেই কেউ শুনার। আহা! মন কী যে কেঁদে ওঠে। কী দুঃখ! খেতেও রুচি নেই। ভাবছে, শিপলু। এভাবে আর কতদিন। রঙ-তামাশা, হাসি-আনন্দ, কলরব থেমে গেছে। কেমন ভয়ে ভয়ে জড়োসড়ো মন। আতংক এখন বাড়ছে কেবল,বাড়ছেই। বিকেলে চেয়ারে বসে বই পড়ছে। মোবাইল ফোন বেজে ওঠে। শোকের খবরে বোবা কান্নায় কেঁদে ওঠে। আমেরিকা আসার পর প্রথম যে বাসায় ওঠে। শিলা আপা। সেই আপা করোনাভাইরাসে মারা গেছেন হাসপাতালে। কতো আদর করতেন আপা। দূর সম্পর্কের আত্মীয় হলেও মনে হতো আপন আপা। সেখান থেকে ম্যাচের জীবনে চলে এলেও খোঁজ খবর রাখতেন। সুযোগ পেলেই সে বেড়াতে যেতো। গেলে না খেয়ে আসতে পারতো না। দুলাভাইয়ের কান্না যেনো থামছে না। লাশ সিটির তত্ত্বাবধানে মাটি দেয়া হবে। শেষ সময়ে পাশে না থাকার আফসোস দুলাভাইয়ের। কী খারাপ লাগছে শুনতে, দম যেনো বন্ধ হয়ে আসছে শিপলুর। কিছু করার নেই। অস্থির মন নিয়ে শিপলু একাকি। স্বদেশে আর কবে যাবে সে জানে না। বাবা মা’র আদুরে ডাক শিপু কানে বাজে বারবার। পকেটের ম্যানিবাগ খুলে। পারিবারিক ছবি তুলে ধরে চোখের সামনে। বাবা-মা-সে ও ছোট ভাই বোন। ক’ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে টুপ টাপ করে। সে বোবার মতো বসে থাকে ঘরবন্দি জীবনে।