গোলাপি চিরুনি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১১ নভেম্বর ২০২১, ৪:২৪:২৬ অপরাহ্ন

তাহসিনা এনাম তৃষা
এক ছিল গোলাপি চিরুনি। ভারি সুন্দর। গায়ে তার ছোট্ট পুতুল আঁকা। রোজ সকাল আর বিকেলে গোলাপি চিরুনি দিয়েই মামণি খুকির ঘন কালো রেশমি চুল আঁচড়ে দিতেন। এতে কী খুশি গোলাপি চিরুনি! খুকি যখন তার মাথার ছোট্ট বেণি দুটো নাড়াতো খুকিকে তখন ভারি মিষ্টি দেখাতো। গোলাপি চিরুনির তখন গর্বে বুক ফুলে উঠতো। ড্রেসিং টেবিলে সাজিয়ে রাখা খুকির আলতা, চুড়ি, নেইলপলিশের কৌটোকে সে ডেকে বলতো, ‘দেখেছো খুকিকে আমি কেমন করে সাজিয়েছি।’
তখন পাশ থেকে রঙিন ফিতে বলতো, ‘শুধু তুমি কেনো, আমি খুকির বেণি বেঁধেছি। আমরা মিলেমিশেই খুকিকে মিষ্টি করে সাজিয়েছি।’
এসব গোলাপি চিরুনির মোটেও ভালো লাগতো না। সে জানে যে সে-ই খুকির চুলকে সুন্দর করে। তাই সে বলে, ‘কী যে বলছো তুমি। ওই তো সেদিন খুকি যখন ফুপির বাড়ি বেড়াতে গেলো কই তখন তো সে চুল সাজাতে তোমাকে আনেনি। খুকি বেণি করুক কি চুলে পুতুল-অলা ক্লিপ পরুক, ওর সবসময় আমাকেই চাই।’
গোলাপি চিরুনির সাথে কেউ আর কথা বাড়ায় না। সবাই জানে, গোলাপি চিরুনির বড্ড অহংকার। এই তো সেদিন, খুকিদের বাড়ির কাজের মাসির সাথে এসেছিল তার মেয়েটা। বয়স খুকির মতোই হবে। নাম মিনু। খুকির ঘরে কী একটা রাখতে এসে মিনুর চোখ পড়লো গোলাপি চিরুনির দিকে। এমন সুন্দর চিরুনি মিনু কখনও দেখেনি। ড্রেসিং টেবিলের ওপর থেকে চিরুনিটা হাতে নিল সে। নিজের চুল আঁচড়ানোর জন্য মাথার কাছে নিতেই রাগে যেনো ফেটে পড়লো গোলাপি চিরুনি। চেঁচিয়ে বললো, ‘এই নোংরা মেয়ে, ছেড়ে দাও আমাকে। আমি শুধু খুকির চিরুনি। আমি শুধু ওর নরম চুলই আঁচড়াবো। তোমার চুল খুব বাজে। আমাকে রেখে দাও।’ রঙিন ফিতে বললো, ‘এমন করে বলো না। মেয়েটা শুনলে কষ্ট পাবে।’ কিন্তু মানুষ কি আর চিরুনির কথা শুনতে পায়। মিনুও পেলো না। চুলে দিতেই চিরুনি শক্ত করে টেনে দিল মিনুর চুলগুলো। বড্ড ব্যথা পেয়ে চুল থেকে চিরুনিটা ছাড়িয়ে রেখে মিনু চলে গেলো। এমন করেই গোলাপি চিরুনির দিন কেটে যায় একে-ওকে বাজে কথা বলে। কেউ গোলাপি চিরুনির সাথে কথা বাড়ায় না। অনেক পরের কথা। খুকি একটু বড় হয়েছে। নিজেই চুল আঁচড়াচ্ছিল। এমন সময় হাত থেকে চিরুনিটা পড়ে গেলো। গোলাপি চিরুনি ব্যথায় কেঁদে উঠলো। খুকি তাকিয়ে দেখলো, চিরুনির একটা দাঁত ভেঙে গেছে। চিরুনি ভাবলো, এখন বুঝি খুকি তাকে একটু আদর করবে। গোলাপি চিরুনি তাকিয়ে রইলো খুকির দিকে। খুকি চিরুনিটা রান্নাঘরের ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিল। গোলাপি চিরুনি চিৎকার করে উঠলো, ‘আমাকে ফেলে দিও না খুকি। আমি না তোমার প্রিয় চিরুনি। এখানে বড্ড নোংরা। আমাকে নিয়ে যাও।’ কিন্তু খুকি শুনলো না তার কথা। ময়লার সঙ্গে গোলাপি চিরুনি পৌঁছে গেলো এক বড় রাস্তার পাশে। সেখানে আরও বেশি নোংরা। গোলাপি চিরুনি খুব কাঁদলো। খুকি তাকে নিতে এলো না।
পরদিন সন্ধ্যায় কে যেনো ময়লা থেকে তাকে তুলে ধুয়ে পরিষ্কার করলো। গোলাপি চিরুনি যেনো প্রাণ ফিরে পেলো। আলোর কাছে যেতেই দেখতে পেলো মিনুকে। মিনু বললো, ‘আহ! চিরুনিটা কী সুন্দর!’ তারপর তার চুলগুলো আঁচড়ানোর জন্য চিরুনিটাকে মাথায় দিল। এবার আর গোলাপি চিরুনি মিনুর চুল টেনে দিল না। চুল আঁচড়ে দিল পরম মমতায়।