চাকুতে করাতের ধার
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ মে ২০২২, ৬:০৬:০৫ অপরাহ্ন

সুলতান মাহমুদ
দুপুর দুটোয় একরামুল হক সাহেব খবরটা পেলেন। মহা এ দুঃসংবাদে মুহূর্তের মধ্যেই তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন। সমস্ত বডি যেনো তার প্যারালাইজড হয়ে গেল। চেয়ারে যেভাবে বসেছিলেন ঠিক সেভাবেই যেন পাথরের মূর্তি হয়ে গেলেন। অফিসের পিওন চেরাগ আলী বিষয়টি লক্ষ করল। সে তার বস একরামুল হক সাহেবের কাছে এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করলো ” স্যার কি হয়েছে আপনার? এমন বিমর্ষ দেখাচ্ছে কেন আপনাকে? জটিল কোন সমস্যা স্যার?” একরামুল হক সাহেব কোন উত্তর দিতে পারলেন না। মুখ দিয়ে শুধু অস্বাভাবিক কন্ঠে বিড়বিড় করে কি যেন বলার চেষ্টা করলেন। তার হাত পা অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপছে। চেরাগ আলী ভয় পেয়ে চেঁচামেচি করে অফিসের সকলকে বিষয়টি অবহিত করলো। হুঁড়মুড় করে স্টাফের সবাই একরামুল হক সাহেবের কাছে ছুটে এলেন। কি হয়েছে, কি হয়েছে? অফিসের মধ্যে একটা হুলুস্থুল কান্ড বেঁধে গেল। সবার সেবা শুশ্রƒষায় এবং মাথায় ঠান্ডা পানি দেওয়াতে একরামুল হক কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলেন। সবার জিজ্ঞাসার মুখে তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বললেন ” আমার ছোট ছেলেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।” স্টাফের একজন বলল : আত্মীয় স্বজনদের বা কোন বন্ধুর বাসায় বেড়াতে যেতে পারে। এ নিয়ে এত টেনশান করছেন কেন?
আত্মীয় স্বজনদের বাসায় বা তার কোন বন্ধুদের বাসায় সে যায়নি। সব স্থানে তন্ন তন্ন করে খোঁজা হয়েছে। কোথাও না কোথাও আছে, অবশ্যই খুঁজে পাওয়া যাবে, আপনি হতাশ হবেন না। অন্য একজন সহকর্মী তাকে শান্ত¦না দেওয়ার চেষ্টা করলো। একরামুল হক সাহেব হাঁউমাউ করে বাচ্চাদের মত কেঁদে উঠলেন।” তাকে কেউ কিডন্যাপ করেছে। আমি বোধ হয় ছেলেকে আর জীবিত ফেরত পাব না। আবার কান্না। সবার মাঝে শোকের ছায়া নেমে এল। একরামুল হক পল্লী উন্নয়ন অফিসে এক কর্মকর্তা হিসাবে কর্মরত আছেন। জিলা শহরে তার অফিস। এখানেই তিনি নিজ নামে একটি ফ্ল্যাট বাসা বাড়ি কিনে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তার দুই ছেলে। বড় ছেলে মাহমুদুল হাসান কলেজে পড়ে। ছোটটি জিলা স্কুলে ক্লাস এইটে পড়ে। ছাত্র হিসাবে দুটোই খুব টেলেন্ট। একরামুল হক সাহেব পৈতৃক সূত্রে অনেক ষধহফ ঢ়ৎড়ঢ়বৎঃরবং র মালিক। গ্রামের বাড়িতে তিনি বেশ বড় আকারের একটি গরুর ফার্ম গড়ে তুলেছেন। লক্ষ লক্ষ টাকার কারবার সেখানে। বেশ ‘ক’জন কর্মচারী সেখানে কাজ করে। শহর থেকে তার গ্রামের বাড়ি তেমন দূরে নয়। তিনি নিজে নিয়মিতভাবে ফার্মের দেখভাল করেন। তিনি ডায়াবেটিস এবং প্রেসারের রুগী। অল্প শোকেই তিনি কাতর হয়ে পড়েন। অফিসের সবাই তাকে শান্ত¦না দিতে লাগল, “আপনে ভেংগে পড়বেন
আমরা সবাই আছি। তন্ন তন্ন করে সমস্ত শহর খুঁজে অবশ্যই আপনার ছেলেকে ফিরিয়ে আনবো। বেশি সময় তো আর হয়নি। যাবে কোথায়? অফিসের দু’জন একরামুল হককে নিয়ে ডাক্তার এর কাছে গেলেন। ডাক্তার সাব তার প্রেসার এবং ডায়াবেটিস চেক করে বললেন, উনাকে দ্রুত বাসায় নেন। যে ঔষধ গুলো দিলাম, এ গুলো এক্ষণি খাইয়ে দিন। পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে উনাকে। সব চেয়ে ভাল হয় যদি উনাকে ঘুমিয়ে রাখা যায়।
রাত দশটার পর ফোন এল একরামুল হক সাহেবের ফোন নাম্বারে। তিনি তখন গভীর ঘুমে। ফোন ধরলেন তার স্ত্রী আয়েশা হক। তার হাত কাঁপছে। আননোন নাম্বার। মিসেস আয়েশা হক মনে ভয় এবং আতংক নিয়ে ফোনটা ধরলেন।
আপনি কে? আমি একরামুল হক সাহেবের স্ত্রী।
ও আচ্ছা। আপনাদের ছেলেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, মিসেস আয়েশা হক কান্নায় ভেঙে পড়লেন। কান্নাজড়িত কন্ঠে ঘটনার বিবরণ দিলেন। আপনি কে?
দেখুন, আমি কে, সত্যি পরিচয় দিলেও তো আমাকে আপনি বিশ্বাস করবেন না। আসলে আমি যে-ই হই না কেন, অন্ততঃ এটা আপনাকে বলতে পারি, আমি আপনার ছেলের গুমের সাথে জড়িত নই। তবে ছেলেটা গুম হয়েছে। এখনো ভাল আছে। নিরাপদে আছে এতটুকু আপনাকে বলতে পারি। হাঁউমাউ করে কান্না জড়িত কন্ঠে মিসেস রহমান বলতে লাগলেন।
আপনে যে-ই হন না, আপনে হতে পারেন আমার ছোট ভাইয়ের মত, আপনে হতে পারেন আমার ছেলের মত, ছেলে হারা মায়ের কান্নাটা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন। ওর বাবা তো প্রায় প্যারালাইজড হয়ে গেছে ছেলের শোকে। আমার ছেলেকে যদি ফেরৎ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন যে কোন কিছুর বিনিময়ে হউক আমরা দিতে প্রস্তুত। আপনাকে আপা বলেই ডাকি। অবশ্যই।
আমি সরাসরি আপনাকে বলি, বেশি কথা বলার সময় আমার নেই। খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু নির্দেশনা মূলক কথা বলছি, যা সঠিক ভাবে যদি পালন করতে পারেন তবে আপনার ছেলেকে আপনে অবশ্যই ফেরৎ পাবেন। আপনে নিজেও খুব ভাল ভাবেই জানেন যারা মানুষকে গুম করে তাদের প্রধান লক্ষ্যই থাকে টাকা। এই টাকা যদি তারা অতি সহজে ঝামেলাহীনভাবে পেয়ে যায় তবে তারা গুম ব্যক্তিকে নিরাপদে ফেরৎ দেয়। যদি টাকা দিতে বাহানা করে, আইনের আশ্রয় নিয়ে কানামাছি খেলতে যায়, তবে গুমকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে যায়,তখন তারা নিজেদের জান বাঁচানোর জন্যে গুম হওয়া ব্যক্তিটিকে মেরে ফেলে। আমি চাই আপনে আপনার সন্তানকে স্ব শরীরে ফেরৎ পান। সে জন্যে আপনাকে আগামী চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে বিশ লক্ষ টাকা জোগাড় করে হাতের কাছে রাখুন। কখন কোথায় কিভাবে টাকা দেবেন এবং আপনার ছেলেকে ফেরৎ নেবেন, পরবর্তী ফোনে আপনাকে জানানো হবে। খবরদার আপনি যদি থানা পুলিশ করতে যান অথবা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা দিতে ব্যর্থ হন তবে ছেলে কিন্তু লাশ হয়ে যাবে। এই বলে ফোন কেটে দিল। হাঁউমাউ করে কান্না শুরু করে দিলেন আয়েশা বেগম। তার ঘরে তার স্বামীর খুবই ঘনিষ্ঠ দু চার জন বন্ধু এবং নিকট আত্মীয় ক জন ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।
আবুল হুসেন বিক্ষিপ্তভাবে ঘোরাফিরা করছিলেন। জায়গাটা বন জঙ্গলে ঘেরা। এখানে জন বসতি নাই। আবুল হুসেনের মনটা বেজায় খারাপ হয়ে আছে। সকাল বেলা সে বাড়ি থেকে রাগ করে বের হয়ে এসেছে। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছে সংসারে আর ফিরে যাবে না। এ জঙ্গলেই কোথাও একটা ডেরা বেঁধে সেখানেই সে বসবাস করবে। ফল মুল খাবে, পাখি ধরে আগুনে পোড়ায়ে সিদ্ধ করে খাবে। সে ভয় পায় না। বনে তো হিংস্র কোন প্রাণী নেই যে তার জীবন বিপন্ন হতে পারে। সে ক্লাস নাইনের ছাত্র। ছাত্র হিসেবে সে মোটামোটি ভালই। সবাই বলে ভাল মত পড়াশুনা করলে তার কপালে অ+ জোটবে। তার সাধ্য মত চেষ্টা সে চালিয়ে যাচ্ছিল। তার পরেও তার বাবা মার অতি মাত্রার শাসনে সে ভীষণভাবে ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে পড়েছিল। সেদিন তার শরীরটা ভাল যাচ্ছিল না। স্কুলে যাবে না বলে স্থির করে মাকে বিষয়টা জানাল। মা বিষয়টাকে পাত্তা না দিয়ে আবুল মিয়াকে রীতিমতো গালাগাল দিতে শুরু করলেন। তোর লক্ষণ তো মোটেই ভাল লাগছে না। পড়াশুনা ভাল লাগছে না, স্কুলে যেতে মন চায় না, ব্যাপারটা কী? তোর মন কী চায়? বন জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে তো খুব ভাল লাগে? তখন তো শরীর কেমন কেমন করে না। যত সব আপদ আমার কপালে জোটেছে।
মা তুমি এত কথা বলছ কেন? একদিন স্কুলে না গেলে কি এমন মহা ক্ষতি হয়ে যাবে? : কী বললি? স্কুল কামাই করে আবার মুখে মুখে তর্ক। বেয়াদপ ছেলে, “এতটুকু বলেই মা হাতে একটা লাঠি নিয়ে ছেলেকে রীতিমতো পুলিশের আদলে পেটাতে লাগলেন। আবুল হুসেন যেন খুনী দাগী আসামী। মা যেন তাকে রিমান্ডে নিয়েছেন। মারের ধাক্কা আর কত সহ্য করা যায়। আবুল হুসেন সেখান থেকে পালালো। প্রতিজ্ঞা করল আর বাড়ি ফিরবে না। মা বাবা ভাই বোন কেউ তাকে ভালোবাসে না। দুনিয়াতে কেউ কারো নয়। এ জঙ্গলটি তাদের বাড়ির কাছেই। সারা দিন বনে বনে ইচ্ছে মত ঘুরে বেড়াল। গাছের পেয়ারা খেল, আমড়া খেল। স্বচ্ছ স্ফটিক ঝর্ণার জল খেল তৃপ্তি মনে। সারাদিন তার ভালই কাটলো। নানা রকমের গাছ পালা দেখে রং বেরংগের ফুল দেখে সে মুগ্ধ হল। হরেক রকমের পাখ পাখালীর বিচিত্র শব্দে সে অভিভুত হয়ে পড়ল। সে ভাবতে লাগল আমাদের প্রকৃতি এত সুন্দর। অথচ আমরা মানব জাতি এতোই খারাপ যে এগুলো কেঁটে কুটে দেশটাকে মরুভূমি বানাচ্ছি। খোদা তায়ালার এ চির সুন্দর পৃথিবীকে বসবাসের অযোগ্য করে ফেলছি। এ সব কথা সে তার স্যারদের মুখে অনেকবার অনেক ভাবে শুনেছে।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল। তার মনের অবস্থাও আর আগের মত নেই। রাগ নেই, গোশ্বা নেই, বাড়িতে ফেরার জন্যে ভার মনটা কেমন যেন আনচান করতে লাগল। মা বাবা ভাই বোন সবাই হয়তো বা হন্যে হয়ে খুঁজছে তাকে। মা তাকে গালি দেয় বকা দেয় আবার আদরও তো করে। হয়তো বা মা বাবা তারা সবাই তার জন্যে এখন কাঁদছে, হন্যে হয়ে তাকে খুঁজছে। তার বাড়িতে ফিরে যাওয়া উচিৎ। তখন বিকেল হয়ে গেছে। হঠাৎই আকাশে মেঘ করেছে। দমকা হাওয়া বইছে। দিনের বেলায় অন্ধকার নেমে আসছে। তখনো সে জানে না তার জীবনে অকল্পনীয় এক ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়া শুরু হলো। আবুল হুসেন বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার জন্যে একটু আশ্রয় খুঁজতে লাগল। এখানে কোন বাড়ি ঘর সে দেখতে পেল না। ছোট ছোট ঝোঁপ জংগল, বড় কিছু গাছ পালা আছে তবে তার নিচে দাড়ালে বেশিক্ষণ শুকনো অবস্থায় থাকা যাবে না। এদিকে তুমুল বৃষ্টি এবং দমকা হাওয়ার দাপট প্রলয় আকার ধারন করছে। আবুল হুসেন বুঝতে পারছে, যে কোন মুহূর্তে শিলা বৃষ্টি শুরু হতে পারে। বিধাতার দেওয়া জীবনটাকে তখন বাঁচানো যাবে না। সে তখন হন্যে হয়ে মাথা গোঁজার একটু ঠাঁই খুঁজার চেষ্টায় দৌড়াতে লাগলো। চেষ্টা করলে কপালে কিছু না কিছু মিলে। আবুল তার অবস্থান থেকে অদূরেই দেখতে পেল একটি টিনের ছোটো ঘর। ঘরটি বড় বড় ঝোঁপ জংগলের ভিতরে। বাইরে থেকে সহজে বুঝার উপায় নেই যে এখানে একটি ঘর আছে। দৌড়ে সে ঘরের কাছে এলো। ঘরের কোন বারান্দা নেই। দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। ভিতরে কোন লোকজন আছে কী বুঝা যাচ্ছে না। তখনও আবুল হুসেন জানে না তার সামনে কী ভয়াবহ ঘটনা অপেক্ষা করছে। সে ঘরের দরজায় টোকা দিতে যাবে ঠিক তখনি ঘরের ভিতর থেকে তীক্ষ্ম ক্ষীণ কন্ঠের আর্তনাদ শুনতে পেল। আবুল হুসেন বুঝতে পারছে ভিতরে ভয়াবহ কিছু ঘটছে। আর্তনাদের ধরনে সে বুঝতে পারছে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার প্রাণান্ত শেষ চেষ্টা। সে সন্তর্পনে দরজায় কান পেতে ভিতরের শব্দ শুনার চেষ্টা করতে লাগলো। আবুল হুসেন শুনতে পেল কান্না জড়িত কণ্ঠ। ঃ না, না, তোমরা আমাকে মেরো না। আমার বাবা অবশ্যই তোমাদেরকে টাকা দিবে।। ধর ফোন, তোর বাপেরে বল আইজ রাতের মধ্যে সমস্ত টাকা না দিলে তুই লাশ হয়ে ঘরে ফিরবি। তার পর মারধরের শব্দ শুনলো আবুল হুসেন। তীক্ষ্ম আর্তচিৎকার । চীৎকারের ধরন শুনে অনুমান করা যায়, অল্প বয়স্ক একটা বাচ্চা হবে। ভয়ে ডরে আবুল হুসেনের গা কাঁপতে লাগল। তার মনে হতে লাগল বাচ্চাটাকে এরা অপহরণ করেছে টাকার জন্যে। সে অনেকবার টিভিতে এ ধরনের খবর দেখেছে। বন্ধু বান্ধবদের মুখেও এ ধরনের কথা শুনেছে। সে তাৎক্ষণিকভাবে বুঝতে পারল এখানে থাকলে সে নিজেই বিপদে পড়বে। যত দ্রুত পালানো যায় ততোই মঙ্গল। সে এদিক ওদিক ভাল ভাবে দেখে নিল।কেউ কোথাও নেই। আবুল হুসেন দৌড়াতে লাগলো বাইরে তখন ঝড় হাওয়া বইছে। এ সব আবুল হুসেন তোয়াক্কা করছে না। আগে নিজের জান বাঁচাতে হবে তার পর অন্য চিন্তা।
আয়েশা ভিলায় আজ আনন্দ উৎসব চলছে। একরামুল হক সাহেবের সকল আত্মীয় স্বজন ও অফিস স্টাফ বন্ধু বান্ধব সেখানে সমবেত হয়েছেন। বাড়িতে খুশীর ফোয়ারা বইছে। আজ থেকে ছয়দিন আগেও এ বাড়িতে ছিল বিষাদের ছায়া। গতকাল রাত বারোটায় একরামুল সাহেব তার গুম হয়ে যাওয়া ছেলেটাকে ফেরৎ পেয়েছেন অতি নাটকীয়ভাবে। ছেলেটিকে উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী। এ উদ্ধার কাজে নিজ জীবন বাজী রেখে যে ছেলেটি অতি সাহসের পরিচয় দিয়েছে সে হল আমাদের সেই আবুল হুসেন।। সেই বিকালের প্রচন্ড ঝড় তুফানের সাথে যুদ্ধ করে এক রকম দৌড়ের সাথে থানায় গিয়ে পুলিশকে সব কিছু খুলে বলে। ব্যাস, সাথে সাথে পুলিশ বাহিনী ছদ্মবেশে ঘটনা স্থলে হাজির হয়। চারিদিক থেকে পুলিশ বাহিনী ঘরটিকে ঘিরে ফেলে। তখন রাত হয়ে গেছে। ঝুড় বৃষ্টি তখনো অবিরাম চলছে। পুলিশ বাহিনীর সাথে আমাদের আবুল হুসেনও ছিলো। অপহরণকারীদের পালানোর কোন উপায় ছিল না।
আয়েশা ভিলায় আজকের এই আনন্দ দিনে সবার আদরের মধ্যমনি হল আবুল হুসেন। একরামুল হক সাহেব আনন্দ জোয়ারে ভেসে ভেসে বার বার আবুল হুসেনকে জড়িয়ে ধরছেন। আয়েশা হক তো আবুল হুসেনের গলা জড়িয়ে ধরে আনন্দের কান্না কেঁদে কেঁদে বলতে থাকেন ” আমি শুধু আমার এক ছেলেকে ফেরৎ পাইনি, পেয়েছি আমার দুই ছেলেকে। আবুল হুসেন হল আমার সবার ছোট ছেলে। ছোট ছেলেটি যেমন মা বাবার আদরের হয় তেমনি বাড়িতেও সবার চোখের নয়নের মণি হয়ে থাকবে। আমার এ ছোট ছেলেটি যে কাজ করেছে তা শুধু মা বাবার কাছে গৌরবের নয় সমগ্র দেশ ও জাতির জন্যে অহংকার। এ ধরনের ছেলে যদি বাংলার ঘরে ঘরে জন্ম হয় তবে জাতি হিসাবে আমরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ হয়ে থাকব। “সবাইকে শুনিয়ে শুনিয়ে তিনি গর্বে অহংকারে কথাগুলো বলছেন। আবুল হুসেনের আপন মা বাবা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তারাও ছেলের এ হেন কর্মে নিজেদেরকে গর্বিত ধন্য মনে করছেন। পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে আবুল হুসেনকে বিশেষ সম্বর্ধনা দেওয়া হবে। যে চাকু করাতের ধার রাখে তাকে তো আমরা হেলাফেলা করতে পারিনা। পুলিশের একজন বড় কর্মকর্তা সেখানে উপস্থিত থেকে এ ঘোষণা দিলেন।