ছুটির ঘন্টা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ নভেম্বর ২০২১, ৪:০৮:০০ অপরাহ্ন

সুফিয়ান আহমদ চৌধুরী
উত্তর দিক হতে কনকনে শীতের হাওয়া বইছে। সুমন সেই কাকডাকা ভোরে বিছানা ছাড়ে। ঠান্ডা পানিতে বাথরুমে ঢুকে গোসল করে। গোসল শেষে পড়ার ঘরে ঢোকে। বই, খাতা, ব্যাগে নিয়ে তৈরি হয়। ইশকুল ড্রেস পরে নেয়। চোখে-মুখে তার দারুণ আনন্দের ঝলক আজ।
এরইমধ্যে সুমনের মা এসে পাশে দাঁড়ান। দুধভর্তি গ্লাস তুলে দেন তার হাতে। সুমন হাসিমুখে দুধটুকু এক চুমুকে খেয়ে নেয়। কী চমৎকার স্বাদ, মাকে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ জড়িয়ে চুমু দেয় কপালে। মাও পরম আদরে বুকে টেনে নেন তার খোকাকে। সুমন কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বাবার রুমে ঢোকে। বাবাও সকাল সকাল ঘুম থেকে প্রতিদিনের অভ্যেসমত দৈনিক পত্রিকা পড়ছেন মনোযোগ দিয়ে। বাবাকে জড়িয়ে ধরে সুমন। বাবা পাশে বসান আদর করে সুমনকে। বহুদিন পর সুমনের ইশকুল খুলেছে। সে ইশকুলে যাবে, বাবা তা জেনে আনন্দে পুলকিত হন। পকেট থেকে একশো টাকার একটা নোট বের করে সুমনকে দেন। টাকা পেয়ে যেন সুমনের ইশকুলে যাওয়ার আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে যায় মুহূর্তে।
হঠাৎ দরজায় কড়া নড়ার শব্দ ভেসে আসে। সুমনের মা এগিয়ে গিয়ে দরজা খোলেন। দেখেন, সুমনের সহপাঠি সৌরভ ও নিরব দাঁড়িয়ে আছে। ওদের দেখে বাবা-মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ইশকুলের পথে পা বাড়ায় তিনজন। শহরের অলিগলি পেরিয়ে ইশকুলে পৌঁছে যায়। শ্রেণিতে ব্যাগপত্র রেখে সারিবদ্ধ লাইনে দাঁড়ায়। জাতীয় সংগীত গান গায়। কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে গানের সুর যেন সারা ইশকুলে ছড়িয়ে পড়ে। মন খুশিতে বাকবাকুম করে ওঠে।
জাতীয় সংগীত শেষ করে দলবেঁধে সবাই ক্লাসে ঢোকে আবার। দীর্ঘদিন পর সেই আঁকাআঁকি করা কাঠের বেঞ্চে বসতে পেরে পুলকিত হয়ে ওঠে মন। তারপর স্যার আসেন ক্লাসে। স্যার কুশলাদি জিগ্যেস করেন একে একে। সবাই যেন নতুন করে আবার নাম-পরিচয় জানিয়ে দেয়।
তারপর বই-খাতা খুলে বসে সবাই। অনেকদিন পর পড়ালেখার পরিবেশে সুমনের মনে সুখের বান ডাকে। সে মন দিয়ে ক্লাস করে। ক্লাসে স্যারের কাছ থেকে পড়ালেখা বুঝে নেয় সে। করোনায় চারদিকে-চারপাশে শূন্যতা ছিল এত দিন। সেই শূন্যতা, সেই ভয় নিয়েও ঘুরে দাঁড়াবার আপ্রাণ চেষ্টা সবার মনের ভেতর। ভ্যাকসিন নিয়ে ক্লাসে এসেছে সবাই। পকেটে সেই কার্ডও রেখেছে সাথে। এ এক ভিন্নরকম অভিজ্ঞতা সবার।
সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সময় গড়িয়ে যায়। ইশকুলে টানা ক্লাসের কারণে কীভাবে এতটা সময় চলে যায়, তা যেন কেউ টের পায় না। কত ভালো লাগে পড়ালেখার এই মুহূর্তটা, তা যেন কেউ কাউকে বোঝাতে পারে না। প্রিয় সাথীদের সাথে যেন মিলন মেলা জমে ওঠে। মুখোমুখি কথা হয়। জমিয়ে আলাপ হয়। নতুন করে একে-অপরের জানাজানি হয়। পরস্পরের দিনকাল কেমন কেটেছে, তাও জানা হয়। ভালো-মন্দ সব গল্প জমে ওঠে ইশকুল প্রাঙ্গনে ক্লাসের ফাঁকে।
বিকেল তিনটে বাজতেই ইশকুল ছুটি হয়। টংট শব্দে ইশকুলের ছুটির ঘন্টাটা বেজে ওঠে। এ যেন দপ্তরি দাদুর রোজকার কাজ। ঘন্টা শুনে বই-খাতা ব্যাগে ঢুকিয়ে নেয় সুমনসহ সবাই। কী যে মিষ্টি মধুর ইশকুলের সময়টা, আহা, ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে বাসার পথে পা বাড়ায় সুমন, সৌরভ ও নিরব। সূর্যের আলো আড়ালে যেন লুকিয়ে গেছে বিকেলের পড়ন্ত বেলায়।