জকিগঞ্জের আমলসীদ ত্রি মোহনায় ভাঙন ॥ অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২১ মে ২০২২, ৪:১৯:৪৯ অপরাহ্ন

জকিগঞ্জ (সিলেট) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : ভারতের বরাক নদী থেকে প্রবলবেগে পানি ঢুকছে সিলেটের জকিগঞ্জের আমলসীদ ত্রি মোহনা দিয়ে। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ভারত থেকে আসা বরাক নদীর তীব্র স্রোতে সুরমা-কুশিয়ারা ও বরাকের মিলনস্থল আমলসীদ ত্রি মোহনায় ভয়াবহ আকারে নদী ভাঙন দেখা দেয়। ঝুঁকিপূর্ণ এ স্থানে ভাঙনের কারণে পুরো উপজেলা জুড়ে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আমলসীদ ত্রি মোহনার এ ভাঙনের কারণে প্রায় অর্ধশতাধিক এলাকা প্লাবিত হয়েছে । এছাড়াও এ পর্যন্ত পুরো উপজেলায় প্রায় ৩০-৩৫টি স্থানে নদীর ডাইক ভেঙেছে। অনেক স্থানে সুরমা-কুশিয়ারা নদীর ডাইক উপচে পানি লোকালয়েও ঢুকছে। সুরমা-কুশিয়ারায় পানি এখনো বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদী ভাঙনের কারণে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থাও ব্যাহত হচ্ছে। জকিগঞ্জ-সিলেট সড়কও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বানবাসী বিভিন্ন এলাকার মানুষ এখন বিশুদ্ধ পানি আর খাবারের তীব্র সংকটে ভুগছে। হাজার হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। উপজেলা প্রশাসন থেকে ২৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ পর্যন্ত দুই দফায় ত্রাণ বরাদ্দ হয়েছে ৩৬ টন চাল ও একলাখ টাকা। তবে, এ বরাদ্দ একদম অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। গতকাল শুক্রবার বিকেলের দিকে বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মোশাররফ হোসেন ও জেলা প্রশাসক মো. মজিবুর রহমান। এ সময় তারা বানবাসীদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন।
বানবাসী মানুষের অভিযোগ, পানিবন্দি অবস্থায় থাকলেও কেউ খোঁজ নিচ্ছে না। শুকনো খাবার আর বিশুদ্ধ পানির বড় সমস্যা। অনেক এলাকার নলকূপ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক এলাকায় খাবারের ব্যবস্থা হলেও বিশুদ্ধ পানির সংকট তীব্র হয়েছে। গৃহপালিত গবাদি পশুপাখি নিয়েও বেকায়দায় রয়েছেন।
বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে. বন্যায় ভেসে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি, পুকুর, রাস্তাঘাট ও হাট বাজার। মৎস্য ও কৃষিখাতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে বানবাসী মানুষ। বানভাসী মানুষদের মাঝে শিশু খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (দায়িত্বপ্রাপ্ত) পল্লব হোম দাস জানান, ইতিমধ্যে বন্যা কবলিত এলাকায় ৩৬ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ভয়াবহ বন্যা কবলিত ৯টি ইউনিয়নের মানুষের জন্য এই ত্রাণ অপ্রতুল বলে তিনি মনে করেন। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের সাথে সবসময় যোগাযোগ রাখছেন। ভয়াবহ বন্যার মতো এত বড় মানবিক বিপর্যয় প্রশাসনের একার পক্ষে মোকাবেলা অনেকটা অসম্ভব। বেসরকারি সংস্থাসহ সর্বস্তরের মানুষকে বন্যার্তদের সাহায্যার্থে ত্রাণ তৎপরতায় এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
এদিকে, জকিগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় অর্ধলাখ মানুষ গত পাঁচদিন থেকে ভয়াবহ বন্যার পানিতে ভাসছে। ভারতের উজানের বরাক নদী হয়ে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতিতে বানবাসী লোকজন চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। সময় সময় নতুন নতুন এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। ভাঙন সৃষ্টি হচ্ছে সুরমা-কুশিয়ারার একাধিক স্থানে। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। চারপাশে অথৈ পানি থাকায় বাড়িঘর থেকে বের হতে পারছেন না বন্যা কবলিতরা। পানির স্রোতে ভেসে গেছে অনেকের ঘরের মজুদ খাদ্য। হাতে কাজ নেই, ঘরে নেই খাবার। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় চরম খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে বানবাসীদের মধ্যে। ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা বানবাসীরা কোনো নৌকা দেখলেই আশায় বুক বাঁধেন- এই বুঝি এলো ত্রাণের নৌকা। সাংবাদিক দেখে ছুটে যান নিজের নাম লেখানোর জন্য। ভেবেছেন, ত্রাণের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
জানা গেছে, বন্যাদুর্গত জকিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় সরকারি ত্রাণ বরাদ্দের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় একবারেই অপ্রতুল। এখন পর্যন্ত দুই দফায় মোট ৩৬ টন চাল ও নগদ একলাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। সরেজমিনে বেসরকারি ত্রাণ তৎপরতা খুব একটা চোখে পড়েনি। ত্রাণ তৎপরতা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন এলাকার বানবাসী মানুষেরা। প্লাবিত এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে জ্বর, আমাশয়, ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগ। বানবাসীরা রোগে-শোকে ভুগলেও দুর্গত এলাকায় এখনো মেডিকেল টিম পৌঁছেনি। শ্রমজীবী মানুষরা খাবার সংগ্রহ করতে না পারায় অর্ধহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। বন্যা কবলিত এলাকায় গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দেয়ায় গৃহপালিত পশু-পাখি নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।