জগন্নাথপুরের নলজুর নদী খননের পর খাল হচ্ছে!
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ মার্চ ২০২১, ৩:৩১:১৩ অপরাহ্ন

জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা :
জগন্নাথপুর উপজেলার নলজুর নদীটি খননের পর খালে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে নদী খননের পুরোপুরি সুফল না পাওয়ার শঙ্কায় রয়েছে জগন্নাথপুরবাসী। এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, উপজেলা সদরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নলজুর এক সময় স্রোতস্বিনী নদী ছিল। এ নদী দিয়ে লঞ্চ, স্টিমারসহ বড় বড় নৌযান চলাচল করতো। নদীর দুই পাশ বেদখল করে গড়ে উঠেছে নামে বেনামে অসংখ্য ঘরবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, আবাসিক হোটেল, দোকান। দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী নদী খননের দাবি জানিয়ে আসলে পানি উন্নয়ন বোর্ড এবার নদী খননের উদ্যাগ নেয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জগন্নাথপুর উপজেলা কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলা সদরের বাদাউড়া থেকে এরালিয়া বাজার পর্যন্ত সাড়ে ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৫০ ফুট প্রস্থের নদী খননের উদ্যাগ নেয়া হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশন টেক লিমিটেড সাড়ে ৫ কোটি টাকার এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ১৮ জানুয়ারি কাজ শুরু হয়েছে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান খনন যন্ত্র দিয়ে মাটি কেটে নদীর একপাশে মাটি ফেলায় নদীটি খালে পরিণত হচ্ছে। বৃষ্টি হলে খননকৃত মাটি আবার নদীতে মিশে যাবে।
জগন্নাথপুর বাজার বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমেদ জানান, নদীর দুই পাশ বেদখল করে গড়ে উঠা স্থাপনার কারণে নদীটির স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘ্নিত হয়ে ক্রমশ বিলীন হতে যাচ্ছে। খননের পর নদীটি আবারও আগের রূপে ফিরে যাবে আশা ছিল। এখন দেখছি নদী আরো সংকুচিত হয়ে খালে পরিণত হচ্ছে। জগন্নাথপুর বাজারের প্রবীণ ব্যবসায়ী সুধাংশু শেখর রায় জানান, নলজুর নদী দিয়ে লঞ্চ, স্টিমারসহ বড় বড় নৌযান চলাচল করত। এখন আর সেই চিত্র নেই। নদী খনন হলে আবার সেই চিত্রে ফেরার আশা থাকলেও যেভাবে নদী খনন হচ্ছে তাতে আর সেই সুযোগ থাকবে না। জগন্নাথপুর উপজেলা নাগরিক ফোরাম আহ্বায়ক নুরুল হক বলেন, নলজুর নদীটি ভরাট ও দখলের পরও কিছু কিছু অংশে কমপক্ষে ২০০ থেকে ৩০০ ফুট প্রস্থ রয়েছে। এখন খনন হচ্ছে মাত্র ৫০ ফুট। ফলে নদীর বুকের অবৈধ স্থাপনা বহাল থাকছে।
এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইয়াসির আরাফাত বলেন, নলজুর নদীতে ৪৯ জন দখলদার রয়েছে। গত বছর তাদের উচ্ছেদের জন্য উচ্ছেদ মামলা দায়ের করা হয়েছে। উচ্ছেদের আদেশ হলে উচ্ছেদ করা হবে। তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, নলজুর নদী ৫০ ফুট প্রস্থ খনন হলে দখলদাররা আবারো দখলে উৎসাহী হবে। পাউবো জগন্নাথপুর উপজেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী হাসান গাজী বলেন, পাউবো’র নদী খননের সাথে সম্পৃক্ত প্রকৌশলীর ডিজাইন ও প্রাক্কলনের প্রেক্ষিতে নদী খনন কাজ হচ্ছে। তারা কাজ তদারকি করছেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী কামরুজ্জামান খান বলেন, আমরা প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ করছি। নদীর দুই পাশে বাঁধের মতো হবে। নদীর ওপর অংশে ৩৫ মিটার নীচে ১৫ মিটার খনন হবে। জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, নলজুর নদীর খননকৃত মাটি সরাতে তারা উদ্যোগ নিয়েছেন। খননকৃত মাটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজে লাগলে স্ব উদ্যোগে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে।