জগন্নাথপুর-বিশ্বনাথ সড়ক সংস্কার কাজ শুষ্ক মৌসুমে শেষ হচ্ছে না
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ জানুয়ারি ২০২১, ২:১৮:৩০ অপরাহ্ন

> জগন্নাথপুর অংশের ৩১ মার্চ ও বিশ্বনাথ অংশের মেয়াদ ১০ মে শেষ হবে > ধীরগতিতে কাজ চলায় যাত্রীরা নাকাল-দুর্ভোগের শেষ নেই
কাউসার চৌধুরী:
বহুল প্রত্যাশিত জগন্নাথপুর-বিশ্বনাথ সড়ক সংস্কার কাজ চলতি শুষ্ক মৌসুমে শেষ হচ্ছে না। ধীরগতিতে কাজ চলায় কয়েক উপজেলার যাত্রীদেরকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ১৩ মাস ধরে কাজ করা হলেও এখনো কার্পেটিং করার মতো কোনো জায়গা তৈরি হয়নি। প্রতি কিলোমিটারে প্রায় ২ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও কাজ হচ্ছে নিম্নমানের। কর্তৃপক্ষের দেখভালের অভাবে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান অনিয়ম করে যাচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব আলম ও সিলেটের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ ফজলুল হক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পুরো কাজ সম্পন্নের ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, শুকনো মৌসুমে কাজ প্রায় শেষ হওয়ার কথা। এলজিইডি সিলেট বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ নজরুল ইসলাম সিলেটের ডাককে জানিয়েছেন, শুকনো মৌসুমে কাজ শেষ না হলে সময় বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। কাজে কোনো অনিয়ম হলে কঠোরভাবে দেখা হবে।
নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে না
এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, জগন্নাথপুর-বিশ্বনাথ সড়কের জগন্নাথপুর অংশের ১৩ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের কাজ পায় মাদারীপুরের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হামিম ছালেহ (জেভি)। ২০ শতাংশ অতিরিক্ত দরে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয় এলজিইডি। এরপর নানা টালবাহানা শেষে গত বছরের মার্চের শুরুতে সংস্কার কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। করোনাকালীন কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকলেও পরে পুনরায় শুরু হয়। কার্যাদেশ দেয়ার পর ইতোমধ্যে ১২ মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। কার্যাদেশ অনুযায়ী আগামী ৩১ মার্চ এই কাজের মেয়াদ শেষ হবে।
বিশ্বনাথ অংশের ১৩ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের কাজ পায় রাজধানী ঢাকার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান শাওন এন্টারপ্রাইজ। ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর শাওন এন্টারপ্রাইজকে কার্যাদেশ দেয় এলজিইডি। আগামী ১০ মে তাদের কাজের মেয়াদ শেষ হবে। এলজিইডির দেয়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সড়কটির সংস্কার কাজ শেষ হবে না। কাজ শেষ হওয়ার ব্যাপারে খোদ এলজিইডির কর্মকর্তারাও সংশয় প্রকাশ করেছেন।
সড়কটির বর্তমান চিত্র
বিশ্বনাথ বাইপাস সড়কের সংযোগ থেকে জগন্নাথপুর পর্যন্ত সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ইতোমধ্যে গর্ত করে নিচ থেকে পুরনো বোল্ডার বা পাথর তোলা হয়েছে। জগন্নাথপুর অংশে প্রায় দেড় কিলোমিটার ও বিশ্বনাথ অংশে প্রায় ১ কিলোমিটার ইতোমধ্যে আরসিসি ঢালাই করা হয়েছে। বিশ্বনাথ বাইপাসের সংযোগ থেকে বাগিচা বাজারের পশ্চিম পর্যন্ত পুরো সড়কটি প্রায় ২ ফুটেরও বেশি নিচ থেকে বোল্ডার তুলে পুনরায় বালু ও মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। বাগিচা বাজারের পশ্চিম থেকে ময়নাগঞ্জ পর্যন্ত সড়কের একদিকে গর্ত করে বোল্ডার উত্তোলনের কাজ চলছে।
ময়নাগঞ্জ থেকে জগন্নাথপুর অংশের কেউনবাড়ি পর্যন্ত সেই আগের চিত্র। বড় বড় গর্তের কোনো হিসেব নেই এখানে। কেউনবাড়ি থেকে ইসহাকপুর পর্যন্ত গর্ত করে বোল্ডার তোলার পর পুনরায় ভরাট করা হয়েছে। ইসহাকপুর থেকে পৌর পয়েন্ট পর্যন্ত সেই আগের মতোই। বিশ্বনাথ বাজার, মিরপুর বাজারের পূর্বে, রতিয়ারপাড়া ও জগন্নাথপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় করা হয়েছে আরসিসি ঢালাই। সম্প্রতি সড়কটির এমন দৃশ্য দেখা গেছে। পুরো সড়কটিতে ধুলো আর ধুলো উড়ায় যাত্রীদেরকে নানান রোগেও আক্রান্ত হতে হচ্ছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সড়কে পানি না ছিটানোর ফলেই যাত্রীদেরকে ধুলোয় মাখামাখি হতে হচ্ছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেন। হবিবপুর আলীয়া মাদ্রাসার নিকট ও মিরপুর বাজারের পশ্চিম ও রতিয়ারপাড়ার পূর্বে ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও ইসহাকপুর, হবিবপুরের পূর্বে দুটি ব্রিজের কাজ চলছে। তবে আগামী মার্চের শেষে বৃষ্টিপাত শুরুর আগে সড়কটির কাজ শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ধীরগতিতে কাজ করার ফলে এখনো কোনো জায়গা কার্পেটিং করার মতো তৈরি করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো। রতিয়ারপাড়ার বাসিন্দা এস এম সুহেল সিলেটের ডাককে বলেন, কাজের যে গতি তাতে শুকনো মৌসুমে কাজ শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেয়ার দাবি জানান তিনি। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি একই কথা বলেছেন।
অনিয়মের অভিযোগ
সরেজমিন দেখা যায়, ময়নাগঞ্জ এলাকায় মূল সড়কের দু’পাশে দেয়া হয়েছে কাদামাটি। কার্যাদেশ অনুযায়ী, বর্তমান সড়কের সকল মালামাল তুলে প্রথমে গর্তের মধ্যে ১ ফুট বালু ফিলিং, এরপর ৯ দশমিক ২৫ ইঞ্চি সাব বেইস, পাথরসহ নানা উপকরণ দিয়ে গর্ত ভরাট করার কথা। কিন্তু গর্তে বালুর পাশাপাশি পুরাতন সড়কের নিম্নমানের মালামাল দিয়েই পুরো সড়কটির খোড়া গর্ত ভরাট করা হয়েছে। এর ফলে কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সড়কের জগন্নাথপুর অংশের সংস্কারে ২০১৯ সালে ১৩ লাখ, ২০১৮ সালে ১০ লাখ ও ২০১৭ সালে ৩ কোটি টাকার কাজ হলেও সড়কটির কাজ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। লুটপাটের ফলে যাত্রীদেরকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে।
প্রতি কিলোমিটারে প্রায় ২ কোটি টাকা বরাদ্দ
এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের সংস্কারে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৪৮ কোটি ৫৫ লাখ ৬১ হাজার টাকা। এর মধ্যে জগন্নাথপুর অংশের ১৩ কিলোমিটারের জন্যে বরাদ্দ দেয়া হয় ২৫ কোটি ৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। বিশ্বনাথ অংশের ১৩ কিলোমিটারের জন্যে ২৩ কোটি ৪৭ লাখ ২৫ হাজার ৬৭১ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে এলজিইডি। হিসেব করে দেখা গেছে, প্রতি কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্যে দেয়া হয়েছে ১ কোটি ৮৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকারও বেশি।
এলজিইডির বক্তব্য
এলজিইডি জগন্নাথপুরের প্রকৌশলী গোলাম সারওয়ার সিলেটের ডাককে বলেন, ৩১ মার্চ কাজের মেয়াদ শেষ হবে। এর মধ্যেই কাজ শেষ করতে হবে। এরপরতো বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে। আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বলেছি। আশা করি, পুরো শেষ না হলেও শেষের কাছাকাছি চলে আসবে। সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব আলম বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে আপ্রাণ চেষ্টা করছি। যদি কাজ শেষ করা না যায় তাহলে ২০ পার্সেন্ট সময় বাড়ানো যাবে।
সিলেটের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ ফজলুল হক বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ প্রায় শেষ হয়ে যাবে। হয়তো কিছু বাকি থাকতেও পারে। নিচের বোল্ডার তুলে কাজ করায় সড়ক শক্ত হবে-আগের মতো সড়কে গর্ত হবে না। তিনি জানান, দিনে-দুপুরে কার্যাদেশ মেনেই কাজ করা হচ্ছে। এখানে অনিয়মের সুযোগ নেই।