জনির বিয়ে
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১০ জুন ২০২১, ১১:০৮:৫৯ অপরাহ্ন

মোঃ মনজুর আলম
সাত ভাই ও চার বোনের মধ্যে জনি সর্বকনিষ্ঠ। সবাই তাকে স্নেহ করে। মা-বাবার চোখের মণি সে। জনি যখন হাঁটি হাঁটি পা পা, তখন তাকে নিয়ে উদ্বেগের শেষ ছিল না। কোন সময় জানি বাড়ির গেট পেরিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। সবাই তাকে চোখে চোখে রাখে। তবে জনি শত চেষ্টা করেও গেট পার হতে পারে না। ভাই-বোন কারোনা কারো চোখে সে ধরা পড়ে। জনির ভাইদের ব্যবসা আছে। তারা রাতে বাড়ি ফেরার সময় জনির জন্য কিছু নিয়ে আসে। জনি ভাইদের থেকে কিছু পেয়ে বড়ই খুশি হয়। সে প্রতিদিনই কিছুনা কিছু খাবার উপহার পেয়ে থাকে। সবার ছোট বলে সবাই তাকে আদর করে।
জনির একটু একটু বুঝ হয়েছে। সে ভালো-মন্দ অনেক বুঝতে পারে। তবে সে চঞ্চল প্রকৃতির। সে মোটেও ঘরে থাকতে চায় না। তাদের বাড়ি সুরমা নদীর নিকটে তবে পাড় লাগুয়া নয়। বাড়ি হতে হেঁটে নদী তীরে যাওয়া যায়। নদীতে নৌকা বা লঞ্চ চললে ইঞ্জিনের শব্দ তাদের বাড়ি থেকে অনায়াসে শোনা যায়। জনির মন ছুটে চলে নদী তীরে। সে নদীর ঢেউ দেখতে আর নৌকার চলাচল দেখতে ছুটে চলে। কারো সাথে সে গেলেও মাঝে মধ্যে একা একা ছুটে চলে সুরমার তীরে। কালিঘাটে ব্যবসায়িক নৌকা আর লঞ্চের চলাচলে জনিকে মুগ্ধ করে। ছোট ছেলে কখনো কখনো একা একা নদী পাড়ে ছুটে বলে অনেক মানুষ তার বাবাকে অবগত করে। খাঁন সাহেবের ছেলে দেখে সবাই তাকে চিনে। জনির বাবা সামছুদ্দিন খাঁন বড়ই পরিচিত। তাই অনেকে তাকে বাড়ি দিয়ে আসে আর বলে খাঁন সাহেব, জনি নদী পাড়ে রওয়ানা দিয়েছে। জনি কিন্তু বৃষ্টির সময় ঘরেই বন্দি থাকে। সে জানালার গ্রীল ধরে বাহিরের বৃষ্টি পড়া অপলক দৃষ্টিতে দেখতে থাকে। রিমঝিম বৃষ্টির শব্দ।
তার মনে দারুণ রেখাপাত করে। জনি ব্যাঙের ডাক ও লাফালাফি দেখে আনন্দে চিৎকার দিয়ে উঠে। সে বৃষ্টিতে ভিজে গোসল করতে চায়। সবাই বলে তোমার সর্দি হবে। বারণ শুনে সে ক্ষান্ত হয়। দেখতে দেখতে জনি বড় হয়ে যায়। জনি এখন মা-বাবা হারা এক সন্তান। কিন্তু তাতে কি হয়েছে ভাই-বোন সবাই তাকে পরম আদর দিয়ে গড়ে তুলেছে। জনির মা-বাবা মারা গেলেই সে স্নেহ হারা হবে এমনটি ভাবা যায় না। কারণ সে সকলের ছোট সবাই তাকে মায়া করে। জনি পড়ালেখা শেষ করে ব্যবসায় মন দিয়েছে। টাকা রোজগার এখন তার ধান্ধা। সে এখন বিয়ে করবে। বেশ বড় হয়েছে জনি দেখতে খুবই স্মার্ট, ফর্সা, কোনো মেয়ের বাবা বা আত্মীয় জনিকে দেখলে পছন্দ না করে উপায় নেই। আর পাত্রীও পছন্দ করবেই।
জনির দুই ভাই প্রবাসে থাকে, তারাও জনির বিয়ের খবর শুনে আনন্দিত। সব ছোট ভাইয়ের বিয়ে কি ধুমধাম হবে কত ফূর্তি হবে। তারা লন্ডন থেকে আসবে কত ফূর্তি হবে। বাহ কি মজা কি মজা। ওদিকে সব ঠিকঠাক বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসছে জনির মনে ভাইরা লন্ডন থেকে আসবেত? এক কঠিন অবস্থা পার করছে বর্তমান বিশ্ব। গোটা দুনিয়া জুড়ে ‘করোনা ভাইরাস’। জনির মন বড় খারাপ একদিকে মা-বাবা নেই অন্যদিকে প্রবাসী ভাইরা দেশে আসা অনিশ্চিত। এরই মধ্যে এগিয়ে চলছে জনির বিয়ের আলাপন। মা-বাবার এতো আদর আর মা-বাবার অবর্তমানে ভাইদের স্নেহ সবমিলে জনির মন খারাপ বিয়ে তবু সে মন ভারী এসব ভেবে। তবে নববধু পেয়ে সে খুব খুশি।