নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হলেই দোষমুক্ত হওয়া যায়। -কলটন।
জমজমাট শিক্ষাবাণিজ্য
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১২ জানুয়ারি ২০২২, ৩:৩৬:০০ অপরাহ্ন

জমে উঠেছে কিন্ডারগার্টেন ব্যবসা। করোনার কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে গেছে। গত বছর সেপ্টেম্বর মাস থেকে আস্তে আস্তে স্কুলগুলো খুলতে শুরু করে। আর আভিভাবকরাও করোনার ভয় কাটিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্তান পাঠিাতে শুরু করেন। বিশেষ করে, বছরের শেষে অনেক শিক্ষার্থীই স্কুলে ফিরেছে। আর এই সুযোগে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে চলছে ব্যাপক “বাণিজ্য”। ভর্তি, ড্রেস, বই কেনাসহ নানান খাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে হাজার হাজার টাকা।
দেশে করোনা মহামারিতে গত দেড় বছরে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায় তিন হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুল। বেকার হয়ে পড়েন প্রায় তিন লাখ ৬০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারি। এই পরিসংখ্যান বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের। শিক্ষকদের মধ্যে কেউ কেউ গার্মেন্টস কর্মী, সবজি বিক্রেতা, কাপড় বিক্রেতা, দোকানদার, পাঠাও চালক হিসেবে কাজ করছেন। স্কুলের ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ চালাতে না পেরে অনেক প্রতিষ্ঠানের মালিক স্কুল বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। এসোসিয়েশনের তথ্য মতে, দেশে কিন্ডারগার্টেনের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ছয় লাখ এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৭৫ লাখ। দেশের মোটামুটি বিত্তশালী পরিবারের সন্তানেরা এইসব স্কুলে লেখাপড়া করে। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো,এই স্কুলগুলোর ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। তারা ইচ্ছেমতো বিভিন্ন ফি নির্ধারণ করে। উল্লেখ করা যেতে পারে, এসব স্কুলের জন্য ২০১১ সালে বেসরকারি প্রাথমিক (বাংলা ও ইংরেজি) বিদ্যালয় নিবন্ধন বিধিমালা করে সরকার। এরপর এগুলো নিবন্ধনের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু ২০১৫ সাল পর্যন্ত চার বছরে মাত্র ৩০২টি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করে। পরে স্কুলের শুমারি করতে ২০১৬ সালে বিভাগীয় কমিশনারদের নেতৃত্বে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। তখন তিন মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত নিবন্ধন আর শুমারির কোনোটিই হয়নি। আর নিবন্ধন না থাকায় স্বাভাবিক কারণেই সেগুলোর ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই এসব স্কুলের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। তবে সরকার অবশ্য বলছে, শিক্ষা আইন হলে এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা যাবে। কারণ, জাতীয় শিক্ষানীতিতে দেশের সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাইরে সারা দেশে বাণিজ্যিকভাবে অসংখ্য নার্সারি, কেজি ও প্রিপারেটরি বিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। কেজি স্কুল হিসেবে পরিচিত এসব শিশু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই ব্যক্তিমালিকানাধীন। এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনো নিয়মনীতির বালাই নেই। জানা গেছে, কেজি স্কুলের মধ্যে যেগুলো মাধ্যমিকের পাঠদান করে সেগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে হওয়ার কথা। সেখানে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ভর্তি সংক্রান্ত নীতিমালা প্রযোজ্য।
শিক্ষার ক্ষেত্রে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো যথেষ্ট অবদান রাখছে, এটা ঠিক। তবে এইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। কোন ধরণের নিয়মনীতি না থাকায় এগুলো ইচ্ছেমতো ভর্তি ফি, টিউশন ফি ইত্যাদি আদায় করছে। অভিভাকরা বাধ্য হয়ে সেগুলো পরিশোধ করছে। আমরা চাই প্রচলিত (২০১১ সালের) নীতিমালা অনুযায়ি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিবন্ধন করা হোক।