জাতীয় শোক দিবস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ আগস্ট ২০২২, ৭:২৬:২৫ অপরাহ্ন

আমাদের জাতীয় জীবনে একটি শোকাবহ দিন জাতীয় শোক দিবস আজ। ১৯৭৫ সালের এই দিনে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে নারকীয় এ জঘণ্যতম ঘটনা সংঘটিত হয়। সেই দিন ভোরে মুয়াজ্জিনের কন্ঠে আজানের ধ্বনির সঙ্গে একাকার হয়ে যায় রাইফেল, কামান, মর্টারের আওয়াজ। বিশ্বের বুকে একটি ঘৃণিত হত্যাকাণ্ড ঘটে তখন। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে সেদিন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক কুচক্রীদের মদদে একদল বিপথগামী সৈনিক এই পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এই দিন সপরিবারে হত্যা করা হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ধানমন্ডীর ৩২ নম্বর বাড়িতে রক্তের বন্যা বয়ে যায়। যাঁর বজ্রকন্ঠে ভীত-সন্ত্রস্ত ছিলো পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী, যার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এ দেশের সাড়ে সাত কোটি বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতার যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে, যিনি মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নিজের কথা না ভেবে এই জাতির মুক্তির কথা-স্বাধীনতার কথা বলেছেন, তাঁরই বুকে অস্ত্র ধরে বিপথগামী বিভ্রান্ত বাঙালি সৈনিকেরা। উন্মত্ত খুনীদের বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে গেলেন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, আর রচিত হলো ইতিহাসের এক কলংকজনক অধ্যায়।
পঁচাত্তরের আজকের এই দিনে খুন করা হলো একজন রাষ্ট্রপতিকে, একটি দেশের স্থপতিকে, একজন মুজিবকে। হত্যা করা হলো তাঁর নিকটাত্মীয়দেরও। তাঁর স্ত্রী পুত্রসহ ৩২ নম্বর বাড়িতে সেদিন যারা ছিলেন তাদের সকলকে। রেহাই দেয়া হয়নি বঙ্গবন্ধুর সর্বকনিষ্ঠ পুত্র শিশু রাসেলসহ অন্যান্য শিশুদের। দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রের নীল নকশা বাস্তবায়ন হলো পঁচাত্তরের রক্তাক্ত আগস্টে। বিশ্ববাসী অবাক বিস্ময়ে চেয়ে দেখলো বাঙালিরা তাদের হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ পুরুষকে, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টাকে কী নির্মমভাবে হত্যা করলো সপরিবারে। যার আঙুলের ইশারায় সাড়ে সাত কোটি বাঙালি এক কাতার হয়ে মরণপণ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, সেই অমিততেজী বীর পুরুষের বুক ঝাঁঝরা করলো এদেশেরই কিছু মানুষরূপী হায়েনা। ব্রিটিশ শাসিত পরাধীন দেশেই জন্ম হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর। দেশপ্রেমে বলীয়ান এই ক্ষণজন্মা পুরুষের আবির্ভাব হয়েছিলো এই দেশের নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষের মুক্তিদাতা হিসেবে। এদেশের মাটি ও মানুষের জন্যই তিনি সংগ্রাম করেছেন সারাজীবন। পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্তিলাভের অবিচল লক্ষে তাঁর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলো জাতি। টুঙ্গিপাড়ার পল্লীতে জন্ম নেয়া শেখ মুজিব একদিনেই ‘মহামানব বঙ্গবন্ধু’ হয়ে ওঠেননি। স্কুল জীবনেই তাঁর রাজনৈতিক সচেতনতা স্পষ্ট ছিলো। পরবর্তীতে শেরেবাংলা, সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা ভাসানীর মতো ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্যে এসে তিনি রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দক্ষতা অর্জন করেন। এভাবেই তিলে তিলে জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন বঙ্গবন্ধু।
স্বাধীন বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু একই সূত্রে গাঁথা। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ গড়ে তোলায় বঙ্গবন্ধুর অবদান ইতিহাস কখনও অস্বীকার করবে না। তবুও এদেশে ইতিহাস বিকৃত করার অপচেষ্টা থেমে নেই। মীমাংসিত সত্যকে বিতর্কিত করার অপকর্ম করে সাময়িকভাবে কোন মহল লাভবান হতে পারে। কিন্তু ইতিহাস কাউকে কোন দিন ক্ষমা করবে না। বঙ্গবন্ধুবিহীন আজকের এই বাংলাদেশে তাঁর অনুপস্থিতি উপলদ্ধি করতে বেগ পেতে হয় না। রাষ্ট্রনায়ক শেখ মুজিবের সামনে ছিলো যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশ গড়ার বিরাট চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তিনি আত্মনিয়োগ করেন। কিন্তু ঘাতক দেশদ্রোহীদের বুলেট সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে দেয়নি। পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্টের পর ষড়যন্ত্র, অভ্যুত্থান, রক্তপাত, হানাহানি কম হয়নি এদেশে। এই ধারাবাহিকতার অবসান হোক। বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনীদের সাজা কার্যকরের মাধ্যমেই শুরু হোক সেই প্রক্রিয়া। আর সেই সঙ্গে স্বাধীনতা বিরোধীদের সব ধরনের ষড়যন্ত্র নস্যাতের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ জেগে উঠুক নতুন চেতনায়। এই হোক জাতীয় শোক দিবসের অঙ্গীকার।