জীবনের ছন্দে
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ৮:১৮:২৭ অপরাহ্ন

সুফিয়ান আহমদ চৌধুরী
গাবতলী বাস স্টেশন। ভীড়ে ঠাসাঠাসি। ভীড়ে সুজন একপাশে দাঁড়িয়ে বাঁশি বিক্রি করছে। বাঁশিতে সুর তোলে মনের সুখে। জীবনের গান। চারপাশে ঘিরে লোকজন। লোকজন নিরবে দাঁড়িয়ে শুনছে। সেই সকালে ঘর ছেড়েছে। ঘরে অসুস্থ মা। মায়ের মুখ চোখে। মার ঔষধ নিয়ে যাবে। মনে মেঘলা আকাশের ওড়াওড়ি।
সেই ছোটোবেলা বাবাকে হারিয়েছে। কমলাপুর রেলস্টেশনে বাবা কুলির কাজ করতো। খুব ভোরে ছুটে আসতো বাবা। ট্রেন ধরার জন্যে তাড়াতাড়ি। একদিন নেমে আসে ঝড়। সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় বাবা। সেই থেকে পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। মায়ের মায়া ও মায়ের ছায়ায় বেড়ে ওঠে সে। মা বাসা বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে। হাড় খাটুনি পরিশ্রম। পাঠশালার পড়ালেখায় ইতি ঘটে সুজনের। মায়ের সাথে সে জীবনের মিছিলে হাঁটতে থাকে। মাকে ঘরে রেখে এসেছে জ্বর ও কাশি। পাশের ফার্মেসীর ডাক্তার বলেছেন, টাকা নিয়ে আয় ঔষধ দেবো। বাঁশি সুরে জীবনের কান্না করুণ হয়ে বাজছে। সুজনের বাঁশির সুরে চলার পথে কেউ কেউ থমকে দাঁড়ায়। কিনে নেয় বাঁশি। চোখে জল টলোমলো। সে কি করুণ মায়ের মুখের মলিন ছবি মনকে আলোড়িত করে।
একসময় বাঁশি বিক্রি শেষ হয়। ঘুরে দাঁড়ায়। কমলাপুর রেলস্টেশনের বস্তিপাড়ায় থাকে। পা বাড়ায় সে দিকে। পথে ফার্মেসী থেকে মায়ের জন্য ঔষধ নেয়। ঘরে ফিরে দেখে মা নিরব নিস্তব্ধ ঘুমিয়ে আছে। মাথায় হাত বুলায়। মা চোখ তুলে চায়। সুজন মাকে ঔষধ তুলে দেয় মুখে। মা আদরে বুকে টেনে নেয়। কপালে চুমু দেয়। মায়ের বুকে পরম শান্তিতে মুখ রাখে সুজন।
কানে আসে রেলের হুইসেল। পাশের রেল লাইনে রেল চলার আওয়াজ। সুজন মুড়ি ও পিয়াজি কিনে নিয়ে এসেছে আসার পথে। মা নিয়ে খেয়ে নেয়। জীবন কি যে ওলট পালট হয়ে গেলো তার। বাবাকে হারিয়ে এতিম হয়ে আজ জীবনের ছন্দে সে।বস্তির ঘরে আলোর লুকোচুরি। মায়ের পাশে শুয়ে পড়ে। ঘুম আসে না চোখে।
ভাবনার রাজ্যে হারিয়ে যায়। মন ঘিরে সুখের দিনগুলোর রঙিন চিত্রে। সেই কানামাছির খেলার দিনে যায় মন ছুটে। হৈ হুল্লোড় করে ছুটোছুটির রঙিন দিন মনে নাড়া দেয়। মনে পড়ে প্রিয় সাথীদের।
বাবা পকেট ভরে নিয়ে আসতো চকলেট। কত আদর করতো। সেই সব ভাবতে গিয়ে কান্না আসে। মনে পড়ে কলোনীর মাঠে কত আনন্দে থাকতো সাথীদের নিয়ে। নাটাই ও ঘুড়ি হাতে ছোটাছুটি মাঠে। সেই সব স্মৃতির দোলনায় দুলছে মন। মায়ের ডাকে সুজন ওঠে বসে। মা পানি খেতে চায়। সুজন কলসি থেকে পানি এনে দেয়। মা পানি খেয়ে আবার শুয়ে পড়ে। মায়ের শরীরে হাত দিয়ে দেখে নেয় সুজন। এরপর ঘুমিয়ে পড়ে।
সকালে কাকের কা কা শব্দে ঘুম ভাঙ্গে। মাকে মুড়ি ও চা দেয়। নিজেও খায়। মার কাছ থেকে বিদায় নেয়। মায়ের শরীরে হাত বুলায় পরম আদরে। মাকে একটু ভালো লাগছে। বাঁশির ব্যাগটা নিয়ে পা বাড়ায় গাবতলী বাস স্টেশনের দিকে। জীবনের ছন্দে সুজন হাঁটছে এই বয়সে——–।