জীবনের স্বপ্ন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ অক্টোবর ২০২১, ৪:৪৮:৪২ অপরাহ্ন

সুফিয়ান আহমদ চৌধুরী
মিষ্টি-মধুর সকাল বেলা। সূর্যের আলোর রঙিন হাসি ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। চোখে রোদ লাগতেই আরতি বিছানা ছেড়ে ওঠে। জানালাটা খুলে দেয়। একরাশ কনকনে হাওয়া ঘরে ঢোকে। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে দেখে রঙ-বেরঙের ফুলের মেলা বসেছে। ফুলবাগানে রঙিন প্রজাপতিরা ওড়াওড়ি করছে। গাছের ডালে এক জোড়া কাক বসে আছে। আনন্দের হাসি ওদের চোখে-মুখে। এমন সময় আরতি কাঁধে নরম হাতের স্পর্শ পেয়ে ঘুরে দাঁড়ায়। দেখে মা দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি বলেন, ‘কী রে আরতি, কী ভাবছিস?’
‘প্রকৃতির অপরূপ রূপ দেখছি, মা। কী মিষ্টি-মধুর তাই না?’ ‘হ্যাঁ, আরতি।’
পাশ থেকে মিউ মিউ শব্দ আসে। আরতি তাকায় সেদিকে। আদরের পুষি লেজ দুলিয়ে দুলিয়ে ডাকছে। আদর করে কোলে তুলে নেয় সে। বিছানায় নিয়ে বসিয়ে আদর করে হাত বুলায়। মা আবার ডাকেন, ‘আরতি নাস্তা করতে আয়, মা।’ ‘জি, মা আসছি।’
আরতি পুষিকে নিয়ে নাস্তার টেবিলে বসে। খিচুড়ি, ডিম ও পিঠা খায় বেশ মজা করে। করোনাভাইরাস চলছে আজ থেকে বেশ কয়েক মাস ধরে। প্রায় বছর হল ইশকুলে ক্লাস নেই। অনলাইনে পড়ালেখা চলছে। এমন জীবনে আরও কতদিন থাকতে হবে, তা কে জানে? আরতির মনজুড়ে শুধু ভাবনার জাল। বাইরে চোখ পড়ে আবার। খাঁচায় ময়না পাখি বন্দী। আস্তে আস্তে পা ফেলে সে পাশে দাঁড়ায়। ময়না পাখিটা খাঁচায় ভীষণ ছোটাছুটি করছে। আবার দৌড়ে আসে পুষিও।
আরতির মুখে কালো মেঘের ছায়া। এই ময়না পাখির জীবনের মতো কাটছে বিশ্বজুড়ে। সে ভাবে, বিশ্বের চলমান জীবন আঁধারে ঢেকে দিয়েছে একটি মাত্র ভাইরাস, নাম তার করোনা। শোক এখন দিনে দিনে বাড়ছে আর বাড়ছে। স্বজন-সুজন আজ যেন কেমন অচেনা মনে হয়। ওলট-পালট হয়ে গেছে জীবনের স্বপ্ন, আশা-ভরসা।
আরতির মন স্মৃতির দোলায় দোলে আর মনে পড়ে কী সুন্দর দিনগুলো যা এখন অতীত। এইতো গত বছর ইশকুলের বনভোজনে জাফলং গিয়ে কতই না মজা করেছিল সবাই মিলে। মেজো মামা বেড়াতে এলে পার্কে গিয়ে আনন্দে দিন কাটিয়েছিল। বিয়ে বাড়িতে হইচই, আনন্দ-ফূর্তি করেছিল। কত রঙিন ছিল দিনগুলো।
পুরাতন দিনগুলো চোখের পাতায় ঝকঝক করে ভাসছে আরতির। বাবা মায়ের সাথে ঘোরাঘুরি মিস করছে। এখন আর আগের মতো বাইরে ঘোরাঘুরি করা হয় না। সে সুযোগ নেই। সারা দিন ঘরবন্দি জীবন। মাঝে মাঝে কান্না আসে আরতির। চিৎকার করে বলে, ‘ফিরে আসুক আবার সোনালি রাঙা ভোর। স্বাভাবিক জীবনে যেন বিশ্ব হেসে ওঠে, সে প্রার্থনা করি।’