ঝগড়াটে জুতা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ৪:২২:০৩ অপরাহ্ন

আহমেদ রিয়াজ
এক সকালে হঠাৎ শুরু হয়ে গেল ঝগড়া। কার সঙ্গে কার?
ডান পাটি জুতার সঙ্গে বাঁ পাটির। আর বাঁ পাটি জুতার সঙ্গে ডান পাটির ঝগড়া। তুমুল ঝগড়া।
ডান পাটি জুতা গায়ের ধুলা ঝাড়ছিল। হঠাৎ সেই ধুলা গিয়ে পড়ল বাঁ পাটির গায়ে। সঙ্গে সঙ্গে রেগে গেল বাঁ পাটি জুতা। চেঁচিয়ে উঠল, ‘আমার গায়ে ধুলা দিলি কেন?’
‘ইচ্ছে করে দিইনি। বাতাসে উড়ে গিয়ে পড়েছে।’
খেপে গেল বাঁ পাটি, ‘বললেই হলো? আমি দেখেছি, তুই ইচ্ছা করে দিয়েছিস। দাঁড়া, আমিও দিচ্ছি।’ বলে নিজের গায়ের ধুলা ঝাড়তে লাগল বাঁ পাটির জুতা। সেই ধুলা গিয়ে পড়ল ডান পাটির গায়ে। এবার ডান পাটি চেঁচাল, ‘আমার গায়ে ধুলা দিলি কেন?’
মুচকি হেসে বাঁ পাটি বলল, ‘আগে তুই দিয়েছিস। তাই আমিও দিলাম। শোধবোধ।’
‘আমি এত বেশি দিইনি। তুই বেশি দিয়েছিস।’
এবার খেপে গেল বাঁ পাটি, ‘আমি বেশি দিয়েছি, না? বেশি কাকে বলে দেখাচ্ছি।’
বলে নিজের গা ঝাড়তে লাগল বাঁ পাটির জুতা। জোরে জোরে। কিন্তু কোথায় ধুলা? গায়ে যে আর ধুলা নেই তাই বলে ডান পাটিকে এমনি এমনি ছেড়ে দেবে? কখনোই না। হুংকার দিল বাঁ পাটির জুতা, তবে রে ঘুষি বাগিয়ে ডান পাটির দিকে এগিয়ে গেল বাঁ পাটি। ডান পাটিও তৈরি, তবে রে ব্যস। মুখোমুখি দুই পাটি জুতা। মারামারি শুরু হলো বলে। তবে হলো না।
হঠাৎ মারামারি রেখে সাজগোজ করতে শুরু করল ডান পাটি। সারা গায়ে কালি মাখা হতে লাগল। তারপর বুরুশের ঘষা খেতে লাগল। ঘষাঘষ, ঘষাঘষ। ঘষা খেতে খেতে শেষে হয়ে গেল চকচকে। ঝকঝকে। সুন্দর।
এটা দেখে বাঁ পাটির রাগ আরও বেড়ে গেল। ইচ্ছে করছে ডান পাটির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু ডান পাটির জুতাটা বেশ দূরে।
আরে এ কী দূর থেকেই ওকে ভেংচি কাটছে ডান পাটি।
বাঁ পাটির মেজাজ এবার চরমে উঠল। খুব রাগ করলে জুতারা উপুড় হয়ে থাকে। উপুড় হয়ে রইল বাঁ পাটির জুতা। আজ ও সাজবে না।
বললেই হলো সাজবে না? হঠাৎ সোজা হয়ে গেল বাঁ পাটি। তারপর শুরু হয়ে গেল ওর সাজগোজ। ওরও সারা গায়ে কালি মাখা হতে লাগল। কালি মাখা শেষে বুরুশের ঘষা খেতে লাগল। ঘষাঘষ, ঘষাঘষ। ঘষা খেতে খেতে একসময় হয়ে গেল চকচকে, ঝকঝকে। ঠিক ডান পাটির মতো। না, ডান পাটির মতো নয়। ডান পাটির চেয়েও সুন্দর। সাজগোজ শেষ। বাঁ পাটির জুতা এসে দাঁড়াল ডান পাটির বাঁয়ে। ঝকঝকে জুতাজোড়া তখন পাশাপাশি।
বাঁ পাটিকে কাছে পেয়েই ডান পাটি বলল, ‘দেখেছিস, আমাকে কত সুন্দর লাগছে?’
বাঁ পাটি বলল, ‘ধুর আমাকে বেশি সুন্দর লাগছে।’
ডান পাটি চেঁচাল, ‘না আমাকে বেশি সুন্দর লাগছে।’
বাঁ পাটিও চেঁচাল, ‘আমাকে’
আরও জোরে চেঁচাল ডান পাটি, ‘আমাকে’
এবার আর চেঁচাল না বাঁ পাটি। ডান পাটির জুতাটা আগে সেজেছে। এতেই ওর মেজাজ চরমে উঠে আছে। হঠাৎ ডান পাটির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল বাঁ পাটির জুতা। ব্যস, শুরু হয়ে গেল মারামারি।
বাঁ পাটির জুতা ঘুষি দিতে লাগল ডান পাটির গায়ে। ডান পাটির জুতা সুবিধা করতে পারছিল না। তবে সুযোগ খুঁজছিল। আর সুযোগটা পেয়েই, বাঁ পাটির ফিতা ধরে দিল টান। সেই টানে ফিতাটা যে কোথায় গিয়ে পড়ল, কেউ জানে না।
ফিতা হারিয়ে অবাক হয়ে গেল বাঁ পাটি। চটপট সামলে নিল নিজেকে। বলল, ‘আমার ফিতা খুলেছিস? এবার তোর ফিতাও খুলব।’
বলেই ডান পাটির ফিতা ধরে যে-ই টান দিতে যাবে, হঠাৎ দেখল এক জোড়া গুটি গুটি পা এগিয়ে আসছে ওদের দিকে।
খুব খুশি হলো জুতাজোড়া। চটপট ডান পাটির ওপর থেকে সরে গেল বাঁ পাটি। দাঁড়িয়ে পড়ল। কিন্তু দাঁড়াল কোথায় ভুল করে ডান পাটির ডানে দাঁড়াল বাঁ পাটির জুতা।
পাজোড়া তখন জুতাজোড়ার একদম কাছে। একটা ডান পা। আর একটা বাঁ পা। এবার জুতার ভেতর ঢুকতে চাইল পা দুটি। আবার শুরু হয়ে গেল ঝগড়া।
ডান পাটি বলল, ‘আমি আগে।’
বাঁ পাটি বলল, ‘না, আমি আগে।’
কিন্তু একি কোনো পা-ই তো জুতার ভেতর ঢুকতে পারছে না
জুতার ভেতর ঢোকার চেষ্টা করতে লাগল পা দুটি। কোনোভাবেই ঢুকতে পারল না। এখন উপায়?
হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল পা দুটির গলা, ‘মা, জুতা পরতে পারছি না।’
‘কীভাবে পারবে? ডান পায়ের জুতা বাঁ পায়ে ঢুকবে?’
‘না।’
‘বাঁ পায়ের জুতা ডান পায়ে ঢুকবে?’
তাই তো জায়গা বদল করল জুতাজোড়া। ডান পাটি জুতা এল বাঁ পাটির ডানে। বাঁ পাটির জুতা এল ডান পাটির বাঁয়ে। আর অমনি সুড়সুড় করে জুতায় ঢুকে গেল পা। ডান পাটি জুতায় ঢুকল ডান পা। বাঁ পাটি জুতায় ঢুকল বাঁ পা।
আহ্ জুতা দুটি খুশি হলো। দারুণ খুশি। আজ ওরা বেড়াতে যাবে। হঠাৎ মা বললেন, ‘বাঁ পাটির জুতার ফিতা কোথায়?’
আরে, তাই তো বাঁ পাটি জুতার ফিতা কোথায়? শুরু হলো খোঁজাখুঁজি।
এখানে ওখানে সেখানে।
কিন্তু কোথায় ফিতা? খুঁজেই পাওয়া গেল না। আর তাতেই খুব খুশি হয়ে গেল ডান পাটি জুতো। ফিতা ছাড়া কি বেড়ানো যায়? বাঁ পাটি জুতা বেড়াতেই যেতে পারবে না। ও একাই বেড়াবে। আহ্ কী যে খুশি লাগছে ডান পাটির জুতার এবার মজা বোঝো বাঁ পা থেকে খুলে গেল বাঁ পাটি জুতা। দেখে আরও খুশি হলো ডান পাটির জুতা। মেঝেতে তাল দিতে লাগল খুশিতে।
ওদিকে পা থেকে ছিটকে বাঁ পাটির জুতা পড়ল ঘরের এক কোণে। ওটা দেখে ডান পাটির তো খুশির সীমা রইল না। ভাগ্যিস, সেলাইটা মজবুত। নইলে খুশির চোটে কখন ফেটে যেত হঠাৎ
একি ডান পাটি জুতাটাও পা থেকে খুলে গেল। তারপর ছিটকে গিয়ে পড়ল ঘরের কোনায়। একেবারে বাঁ পাটির গায়ের ওপর।
অবাক হলো ডান পাটি। ওর তো সবই ঠিক আছে। ঝকঝকে গা। ফিতাও আছে ঠিকঠাকমতো। তাহলে? ও কেন পা থেকে খুলে গেল?
একটু পর। আরেক জোড়া জুতা তৈরি হয়ে গেল চটপট। ডান পাটি জুতার ভেতর ঢুকল ডান পা। বাঁ পাটিতে ঢুকল বাঁ পা। তারপর পা দুটি নিয়ে বেড়াতে বেরিয়ে গেল জুতাজোড়া; ঝগড়াটে জুতা জোড়ার সামনে দিয়ে।