টুপাটুপি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ মার্চ ২০২১, ৪:০১:৩৫ অপরাহ্ন

মো: মনজুর আলম
ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মনের উচ্ছ্বাস মিশিয়ে আয়োজন হয় টুপাটুপির। সাধারণত গ্রাম বাংলায় এ আয়োজন দেখা যায়। কোভিড-১৯ এর কারণে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটে। অনলাইন ক্লাসে সবাই অংশগ্রহণ করতে না পারায় ছাত্র-ছাত্রীরা অলস সময় কাটিয়েছে। তাই একদিন সামিয়া, ইকরা ও জাহানারা মিলে বুদ্ধি করল স্কুল বন্ধের এ সময়ে নিজ বাড়িতে কিছু একটা করে একটু আনন্দে সময় কাটানো যায় কি-না। তারা প্রথমে চিন্তা করল দূর কোথাও বড়দের সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া যায় কি-না। পরামর্শ করে বড় কারো সাথে বুঝতে গেলেই সবাই বলে না এ করোনার মধ্যে কোথাও যাওয়া ঠিক হবে না। করোনা মহামারীতে সবার জন্যই ঝুঁকি আছে। তারাও বুঝতে পারল যে করোনার কারণে ত স্কুলই বন্ধ। আমরা সহপাটীদের সাথে মিশতে পারছি না, মানুষ বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাচ্ছে না। এবার তারা ঠিক করল বাড়িতেই কিছুর আয়োজন করতে হবে। তারা গেল তাদের মাস্টার চাচার কাছে। মাস্টার চাচা বললেন তোমরা যা-ই কর তোমাদের পড়ালেখা ঠিক রেখে একটু আনন্দ, ফূর্তি করতে কোনো বাঁধা নেই। তোমরা নামাজ পড়বে, কোরআন তেলাওয়াত করবে। বড়দের সম্মান করবে আর এ করোনার সময় তোমাদের মা বাবার সেবা বেশি করে করবে। সামিয়া, ইকরা ও জাহানারা বলল ঠিক আছে চাচা আমরা ত তা করি। আমরা বাড়ির সবাই মিলে আনন্দ, ফূর্তি করতে চাই। তবে তোমরা টুপাটুপির আয়োজন কর তাতে করে সবাই অংশগ্রহণের সুযোগ হবে এবং বেশ আনন্দে দিনটি কাটবে। তাদের সাথে থাকা মাহি, আমান, শাহান, সিফাত, শাদমান, শায়মন সবাই আনন্দে ওয়াও বলে উঠল।
টুপাটুপি সম্বন্ধে সবারই পূর্ব ধারণা আছে তবুও তারা মাস্টার চাচাকে দিক নির্দেশনা দেবার অনুরোধ করল। মাস্টার চাচা বললেন তোমরা সবাই বাড়ির সকলকে তোমাদের মনোভাবনা বল তারা সেই মতোই বলল। সবাই আনন্দচিত্তে রাজি হলো। সবাই যার যার ঘর থেকে টাকা দিয়ে শরিক হলেন। টাকা হাতে আসাতে সে টাকা এখানে জমা রেখে তারা চাল সংগ্রহ করল সবার ঘর থেকে। এভাবে ছোটদের এ আয়োজনে বড়রাও অংশগ্রহণ করল। মাঝে মধ্যে এক দাদু জিজ্ঞেস করেন তোমাদের টুপাটুপি খাবার কোন দিন হবে? উত্তরে ইকরা, সামিয়া ও জাহানারা বলল সবাই যেদিন বাড়িতে থাকবেন সেদিন এ আয়োজন হবে। দেখা গেলো শুক্রবারে সবাই বাড়িতে থাকেন। সে মোতাবেক আয়োজন হলো। সবার মনে আনন্দের জোয়ার কি মজা সবাই রান্না করবে, সবাই তরিতরকারী কাটবে। ভারী মজা হবে। দেখতে দেখতে অনেক টাকা সংগ্রহ হলো। অনেক চালের আশ্বাস পাওয়া গেলো সকল ঘরের সবাই সাড়া দিল। অবশেষে তাদের এক চাচী বললেন আমি পাক/রান্না করে দেব। তবে বাটনা বাটা, কুটনা কুটায় তোমরা সবাই সাহায্য করবে। বাড়ির গাছ পালার ডাল, পাতা সংগ্রহ করে লাকড়ীর ব্যবস্থা করা হলো। অবশেষে শুক্রবার টুপাটুপির রান্না চুলায় বসল। মৌলা চাচা সব মুরগি দিলেন। টাকা দিয়ে তেল, মসলা, সবজি ক্রয় করা হলো। রান্না হচ্ছে সবাই খুশি। কেহ কেহ কাটাকাটি এবং রান্নার দৃশ্য কামেরাবন্দী করলেন। জুমার নামাজ শেষে সবাই মাস্টার চাচার বারান্দায় খেতে বসলেন। কেহ কেহ কিছু খাবার ঘরে নিয়ে গেলেন। এ একটি দিন বড়ই আনন্দে কাটল। ছোটদের আনন্দে সবাই আনন্দিত। উপভোগ্য একটি দিন ছিল।