অন্যের সম্পর্কে আগ্রহ না দেখালে তারা আপনার প্রতি আগ্রহ দেখাবে কেন? -ডেল কার্নেগি।
ডিসি’দের প্রতি নির্দেশনা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ জানুয়ারি ২০২২, ৫:০৯:০৩ অপরাহ্ন

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সরকারি সেবা নিতে সাধারণ মানুষ যেন কোনোভাবেই হয়রানি বা বঞ্চনার শিকার না হন, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। সরকারি অফিসগুলোতে সাধারণ মানুষ যেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বিঘ্নে যথাযথ সেবা পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। সেবাপ্রত্যাশীদের সন্তুষ্টি অর্জনই যেন হয় সরকারি কর্মচারিদের ব্রত। তিনি সম্প্রতি ডিসিদের সম্মেলন উদ্বোধনকালে একথা বলেন। তিনি বলেন, দেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছে যাওয়ায় দায়িত্ব বেড়ে গেছে সকলের।
সরকারি অফিসে সাধারণ মানুষ হয়রানি ও বঞ্চনার শিকার যাতে না হন সেদিকে নজর দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। অত্যন্ত সুন্দর একটি উপদেশ। এতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, সরকারি অফিস-আদালতে মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে, সরকারি কর্মচারিদের সেবায় মানুষ সন্তুষ্ট নয়। আর প্রধানমন্ত্রী এই ব্যাপারগুলো সম্বন্ধে অবহিত আছেন বলেই দেশের মানুষ আশাবাদি যে, এর একটা সুরাহা হবে।সরকারি দপ্তরগুলোতে কী ধরণের সেবা দেয়া হয় তার বর্ণনা দেয়ার কোন দরকার নেই। এক কথায় সরকারি দপ্তরগুলোতে অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষ, সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি, অশালীন ব্যবহার, অপমান, তুচ্ছ তাচ্ছিল্যে অতি সাধারণ বিষয। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অফিসের পিয়ন দারোয়ানই অপদস্ত করছে সাধারণ মানুষকে। এই অবস্থায় অহরহ বেতন ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগসুবিধা বাড়িয়ে তাদেরকে আরও বেপরোয়া করে তোলা হচ্ছে। বুদ্ধিজীবিদের প্রশ্ন-সরকারি কর্মচারিদের বেতনভাতা বাবদ প্রতি বছর বাজেটে বিপুল পরিমাণ বরাদ্দ বাড়ানোর সাথে সাথে সরকারি সেবার মানও কি বাড়ছে? উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চালু করা নতুন বেতন স্কেল অনুযায়ী সরকারি কর্মচারিদের মূল বেতন সর্বোচ্চ ১০১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। শুধু তাই নয়, পরবর্তী বছর তাদের জন্য বরাদ্দ করা অন্যান্য ভাতাও বাড়ানো হয়। তারা ফ্ল্যাট ও গাড়ি কেনার জন্য অল্প সুদে ঋণ নেওয়ার সুবিধাও ভোগ করেন। এই বেতন স্কেল দুই অর্থ বছরে কার্যকর করা হয়। এর জন্য সরকারকে আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ অর্থ বরাদ্দ করতে হয়। এই বেতন-ভাতা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কর্মচারিদের ঘুষ-দুর্নীতির মাত্রা বেড়েই চলেছে। এর লাগাম ধরা আদৌ সম্ভব হবে কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন। বাস্তবতা হচ্ছে, প্রশাসনের হাতের মুঠোয় অনেকটাই বন্দি হয়ে আছে সরকার। এব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য হচ্ছে, সরকারি কর্মচারিরা জনগণের টাকায় জমিদারের মত জীবন যাপন করছেন। আমরা আমাদের প্রাপ্য সেবাগুলো পাচ্ছি না। তাহলে বেতন বাড়ানোর উদ্দেশ্য কী ছিলো? জবাবদিহি ও কর্মদক্ষতার ক্ষেত্রে কোনো উন্নতি হয়নি পুরোটাই চোখে ধুলো দেওয়ার মতো ব্যাপার’।
সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে, যে ডিসিদের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী সরকারি কর্মচারিদের প্রতি জনসেবার মান বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন, সেই ডিসি’রাই জনগণের সেবক নয় ‘প্রশাসক’ হয়েই নিজেদের আসনে বসে আছেন।তাদের দপ্তর সবার জন্য ‘উন্মুক্ত’ নয়। শুধু ডিসি নয়, ছোট বড় প্রায় সব কর্মচারির দপ্তরেই সাধারণ মানুষের প্রবেশ নির্বিঘ্ন নয়। অথচ তারা সকলেই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি; তারা সাধারণ মানুষের ট্যাক্স এর টাকায়ই মোটা অংকের বেতন-ভাতা ভোগ করছেন। আমরা আশাবাদি, সরকারি কর্মচারিরা যাতে সীমাহীন ঘুষ-দুর্নীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে জনগণের প্রকৃত সেবক হিসেবে আবির্ভূত হন তার জন্যই কঠোর পদক্ষেপ নেবে সরকার।