শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক, সিলেট
তরুণদের ‘স্বপ্ন’ ভেঙে দিতে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে ‘স্টেপ ২১’
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ মার্চ ২০২১, ৩:১৬:৩৮ অপরাহ্ন

নূর আহমদ::
‘সিলেট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক’ কিংবা ‘নতুন এক সম্ভাবনার নাম সিলেট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক’ সহ নানা শিরোনামে যখন তরুণদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে বিভিন্ন গণমাধ্যম, তখন নতুন রূপে ধরা পড়েছে ‘স্টেপ ২১ লিমিটেড’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান। তরুণদের ‘স্বপ্ন’ ভেঙ্গে দিতে ওই প্রতিষ্ঠানটি প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে। হাই-টেক পার্কে ‘স্পেস’ বরাদ্দ নিয়েই দিয়েছে ৫ শতাধিক তরুণদের চাকুরীর বিজ্ঞাপন। এতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন সিলেটের তরুণরা। নিয়োগ পরীক্ষাও শেষ। মৌখিক পরীক্ষার পর জানিয়ে দেয়া হয়েছে চাকুরীর জন্য প্রত্যেককে দিতে হবে ৫০ হাজার টাকা। এবার টাকা গ্রহণের পালা। আর সবকিছু হচ্ছে হাইটেক কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই। গ্রাম্য ডাক্তার থেকে নিয়ে পাথর ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক দলের কর্মী, বিশেষ বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট দাবিদার রয়েছেন এই সিন্ডিকেটে। অবশ্য তরুণদের স্বপ্ন দু:স্বপ্নে রূপ নেয়ার আগেই প্রতারণার আঁকা ছক ধরা পড়েছে সিলেটের ডাক এর অনুসন্ধানে। বেরিয়ে এসেছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য।
এক নজরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক, সিলেট
সিলেট অঞ্চলে তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক, সিলেট। এই পার্ককে প্রযুক্তিভিত্তিক কর্মসংস্থানের একটি ডিজিটাল ইকোনমিক হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায় সরকার। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার খলিতাজুরি বিলেরপাড় মৌজায় মোট ৩৩৬ কোটি ৪২ লক্ষ ৪৯ হাজার টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক, সিলেট প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই হাই-টেক পার্কটি এখন বিনিয়োগের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। ভারতের সেভেন সিস্টার’স এর বাজারে প্রবেশের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকায় দেশি-বিদেশি অনেক কোম্পানী এই পার্কে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে। ফলে পার্শ¦বর্তী এলাকায় আরো ৬৪০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করার উদ্যোগ নিয়েছে পার্ক কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ৮৫ একরের প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যেখানে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনার কথা বলছে সরকার। সেই সম্ভাবনায় গুড়ে বালি দিতে যাচ্ছে ‘স্টেপ ২১ লিমিটেড’ নামক প্রতিষ্ঠানটি।
‘ভিশন ২১’ কে ফলো করে ‘স্টেপ ২১’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক, সিলেটের প্রথম স্পেস বুঝে নেয় ‘স্টেপ ২১ লিমিটেড’। গত ২২ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক, সিলেট কর্তৃপক্ষের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে প্রথম বিনিয়োগকারী হিসেবে সামনে আসে স্টেপ ২১ এর নাম। পার্ক এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সচিব) হোসনে আরা ও স্টেপ ২১ লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুজ্জামান চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন। হাইটেক পার্ক ভবনে এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে হাইটেক পার্ক এর এমডি ছাড়াও কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউএনওসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। তখন সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপনের জন্য হাই টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ তিন বিঘা জমি বরাদ্দ দেয়ার সিন্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান আসাদুজ্জামান।
এদিকে, হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পরপরই মূল মিশনে নামে স্টেপ ২১। প্রতিষ্ঠানটির এমডি আসাদুজ্জামানের মতে, সরকারের ‘ভিশন ২১’ কে ফলো করে কোম্পানীর নাম রেখেছেন স্টেপ ২১। সরকারের ভিশন ২১ বাস্তবায়নের সাথে তার প্রতিষ্ঠান কয়েক হাজার তরুণদের চাকুরী দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে শেখ হাসিনার পাশে দাড়াঁবেন তিনি। এর জন্য সিলেটের তরুণদের চাকুরী দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তার এই উদ্দেশ্য তুলে ধরেন।
অপরদিকে স্টেপ ২১ ওয়েব সাইট ঘুরে দেখা যায়, সিলেট নগরীর বন্দরবাজারের রঙমহল টাওয়ারের ৬ষ্টতলায় তাদের কার্যালয়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ওখানে শাহজালাল এক্সপোর্ট ইমপোর্ট লিমিটেড নামের ও স্টেপ ২১ আইটি ইনস্টিটিউট নামের একিভুত দুটি প্রতিষ্ঠানের দুই পাশে দুটি সাইনবোর্ড ঝুলছে। তবে, এই দুটি প্রতিষ্ঠানের কোনটিই এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেনি।
যেভাবে প্রতারণার শুরু
গত ২২ জানুয়ারী হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সাথে চুক্তি হয় স্টেপ ২১ এর। তবে, এর আগ থেকেই তাদের ফেসবুক পেইজ ও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর সিলেটের একটি পত্রিকায় প্রথমে ৫০ জনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। এরপর পুনরায় বিভিন্ন পত্রিকায় আরো ১০০ জনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। এরপর হুমড়ি খেয়ে পড়েন সিলেটের তরুণরা।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্র্ক সিলেট কর্মস্থলের জন্য ১০০ জন (পুরুষ) জুনিয়র এক্সিকিউটিভ (ডিজিটাল মার্কেটিং) পদে নিয়োগ দেয়া হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম এইচএসসি/ সমমান, কম্পিউটার বেসিক জ্ঞান আবশ্যক। চাকুরীর ধরন ফুলটাইম (৮ ঘণ্টা), মাসিক বেতন: ১০০০০-১২০০০ টাকা। গত ২১ জানুয়ারীর মধ্যে আবেদনের শেষ তারিখ ছিলো।
এদিকে, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর তরুণদের যেন ঢল নামে স্টেপ ২১ এর কার্যালয়ে। চাকুরীর প্রত্যাশায় ভিড় করেন সেখানে। হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সাথে স্টেপ ২১-এর করা চুক্তি অনুষ্ঠানের ছবি চাকুরী প্রত্যাশীদের বিশ্বস্ততা অর্জনে কাজে লাগায় ওই চক্র। এতে ৭ শতাধিক চাকুরী প্রত্যাশী আবেদন করেন। গত একমাস ধরে সিলেটর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত চাকুরী প্রত্যাশীরা সিলেটের রঙমহল টাওয়ারে অফিসে এসে কম্পিউটারের বেসিক পরীক্ষা দেন। সেখান থেকে ১৩৮ জনকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করা হয়। তাদের মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকলে বেরিয়ে আসে স্টেপ ২১ এর আসল উদ্দেশ্য।
টাকা দিলে নিয়োগ, নইলে বাতিল
চাকুরী প্রত্যাশীদের কম্পিউটার বেসিক পরীক্ষা রঙমহল টাওয়ারে নিলেও মৌখিক পরীক্ষার জন্য হাই-টেক পার্ক এর কার্যালয় বেছে নেয় ‘স্টেপ২১ লিমিটেড’। গত ৭ ও গতকাল ৮ মার্চ হাই-টেক পার্কে মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়। তবে, নিয়োগপত্র হাতে নিয়ে চমকে উঠেন পরীক্ষার্থীরা। একেকজন করে মৌখিক পরীক্ষা শেষে তাদের জানানো হয় পাশ করেছেন। তবে, প্রত্যেককে জামানত হিসেবে ৫০ হাজার টাকা করে দিতে হবে। সবার হাতে একটি কাগজ ধরিয়ে দেয়া হয়। তাতে উল্লেখ রয়েছে জুনিয়র এক্সিকিউটিভ (ডিজিটাল মার্কেটিং) পদে জামানত (ফেরত যোগ্য) প্রদান সাপেক্ষে আপনাকে নির্বাচিত করা হলো। আগামী ১৪ মার্চ ২০২১ তারিখের মধ্যে ৫০ হাজার টাকা পূবালী ব্যাংক লি: মহিলা কলেজ শাখা,সিলেট (হিসাব নং ২৪৪৬৯০১০২৫৬০৭. হিসাবের নাম স্টেপ ২১ লি:) জমাদান পূর্বক নিয়োগপত্র গ্রহণ করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। নির্ধারিত তারিখের মধ্যে টাকা জমা না দিলে প্রাথমিক নিয়োগপত্র বাতিল বলে গণ্য হবে বলেও উল্লেখ করা হয়। হিসেব করলে দেখা যায় আগামী ১৪ মার্চের মধ্যে ১০০ জন ৫০ হাজার টাকা করে জমা দিলে ওই একাউন্টে প্রায় অর্ধকোটি টাকা কেবল জামানত হিসেবে জমা পড়বে।
অপরদিকে ওই কাগজে যে মোবাইল নাম্বারটি রয়েছে, সেটি একজন নারীর। তিনি নড়াইল কামারখালি গ্রামের বাসিন্দা। সাজেদা নামের ওই নারী জানান, হাই টেক পার্কে নিয়োগের ব্যাপারে তার কোন তথ্য জানা নেই। অনেকেই তার নাম্বারে ফোন দিয়ে জানতে চাচ্ছেন। আসলে তিনি কিছুই জানেন না। কে বা কারা ওই নাম্বারটি ব্যবহার করেছে।
স্টেপ ২১ এর সাথে জড়িত যারা
হাই-টেক পার্ক এর প্রথম বিনিয়োগকারী প্রচারকারী স্টেপ ২১ এর সাথে জড়িত কারা?- এ তথ্য খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির এমডি আসাদুজ্জামান কোম্পানীগঞ্জের সীমান্ত দিয়ে ইমপোর্ট এক্সপোর্ট ব্যবসা করতে আসেন সিলেটে। মূলতঃ তিনি পাথর ব্যবসায়ী। তবে, তিনি হাইটেক পার্ক এর সম্ভাবনার গল্প শোনে যেন লোভ সামলাতে পারেননি। নেমে পড়েন ধান্ধায়। এক পর্যায়ে হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষকে বাগিয়ে আদায় করে নেন স্পেস। প্রচার করতে থাকেন তিনিই প্রথম বিনিয়োগকারী। কোম্পানী ক্যাটাগরিতে স্টেপ ২১ এর নামে পূবালী ব্যাংক মহিলা কলেজ শাখায় খুলেন ব্যাংক একাউন্ট। ওই ব্যাংকে দেয়া তথ্য অনুযায়ী তার মূল বাড়ি ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাশিলা। হাউজ নং ২৪৭। সিলেটের ঠিকানা- শাহজালাল উপশহরের ১৮ নং রোডের ৫৩ নং হাউজ এর ৪র্থ তলা উল্লেখ করা হয়েছে। একাউন্টটি কোম্পানীর নামে হলেও একাই আসাদুজ্জামানের স্বাক্ষরে লেনদেনের ক্ষমতা দেয়া রয়েছে।
স্টেপ ২১ লিমিটেড এর ডিএমডি বদরুল আজাদ রানা। তিনি সিলেটের ছাত্রদলের পদবীধারী নেতা। বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে। শাহজালাল উপশহরের বাসিন্দা। স্টেপ ২১ লিমিটেড এর ওয়েব সাইটে ডিএমডি হিসেবে তার পরিচয় দেয়া রয়েছে। স্টেপ ২১ লিমিটেড এর ফেসবুক পেইজে হাই-টেক পার্ক ভবনে স্টেপ ২১ এর ব্যানার সহ ছবি রয়েছে তার।
পরিচালক প্রশাসন এম এম আহসান হাবিব। তিনি নিজেকে অবসরপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট পরিচয় দেন। তার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলায়। সিলেটে বসবাস করছেন বেশকিছু দিন থেকে। আহসান হাবিব জানান, তার এক ভাই প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব। তার মাধ্যমে সিলেট বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক এর পিডিকে ম্যানেজ করে স্টেপ ২১ এর নামে জায়গা বরাদ্দ পেয়েছেন। তিনি তরুণদের কর্মসংস্থানে কাজ করছেন বলে জানান।
অপর পরিচালক সিরাজুল ইসলাম সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কালিবাড়ি এলাকার বাসিন্দা। তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক। শিক্ষাগত যোগ্যতা আন্ডার মেট্রিক। মূল ব্যবসা পাথর ব্যবসা। অপর পরিচালক আব্দুল আউয়ালও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কালিবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পেশায় একজন গ্রাম্য ডাক্তার। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ৮ম শ্রেণী পাশ। তিনিও পাথর ব্যবসায়ী। তার মূল বাড়ি নাটোর জেলায়। এছাড়া শামিম হোসেন ও আবুল খায়ের নামের আরো দুজন পরিচালকের ছবি রয়েছে স্টেপ ২১ এর ওয়েবসাইটে।
ভোক্তভুগি যা বলেন
সাইদুর রহমান সিলেট সরকারি এমসি কলেজের অনার্স ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। হাই-টেক পার্ক চাকুরীর সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি। মনে হয়েছে এই বুঝি কিছু একটা করা যাবে। তবে মৌখিক পরীক্ষা শেষে ৫০ হাজার টাকা প্রদানের দাবি শোনে তার সেই স¦প্ন ভেঙ্গে যায়। তিনি বলেন, এ কেমন চাকুরী!। চাকুরীতে কবে যোগদান করবো তার উল্লেখ নেই, আবার ৫০ হাজার টাকা আগে একাউন্টে জমা দিতে হবে। এক সাথে ১শ জন ব্যাংকে জমা দিলে শুন্য একাউন্ট দ্রুত ফুলে ফেঁপে উঠবে। তিনি বলেন, স্টেপ ২১ এর কার্যক্রম নিয়ে দ্রুত নজর দেয়া দরকার। না হয় সিলেটী তরুনদের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেবে ওই চক্র।
পরিচালকরা যা বলেন
স্টেপ ২১ লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুজ্জামান জানান, কোম্পানীর নামে একাউন্ট খোলা হলেও তাকে একাই লেনদেনের ক্ষমতা দিয়েছেন তার পরিচালকরা। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া। ভিশন ২১ ঘোষণার পর আমরাও স্টেপ ২১ ঘোষণা করি।
চাকুরী পেতে ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে কেন জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন, অনেকেই কম্পিউটারের যন্ত্রপাতি নষ্ট করে ফেলে। এরজন্য আমরা জামানত হিসেবে ৫০ হাজার টাকা করে নিচ্ছি। তবে একবছর পর তাদের টাকা ফেরত দেয়া হবে। হাই টেক পার্কে স্পেস নেয়ার আগে টাকা নিয়ে চাকুরী দেবেন এমন চুক্তি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
ডিএমডি বদরুল আজাদ রানা দাবি করেন, যারা চাকুরীতে আসে তাদের বেশিরভাগ নতুন। এরা কাজ শিখে চলে যায়। এরজন্য তাদের কাছ থেকে আমরা জামানত নিচ্ছি। নিয়ম মেনে চলে যেতে চাইলে তাদের টাকা ফেরত দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
নিজেকে অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট দাবিদার এম এম আহসান হাবিব বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক, সিলেট প্রকল্পের পরিচালক ব্যারিস্টার মোঃ গোলাম সরওয়ার ভূঁইয়া তার বড় ভাইয়ের বেসমেট। মূলতঃ তার মাধ্যমে হাইটেক পার্কে স্পেস পান। তিনি দাবি করেন সবকিছু বৈধভাবেই হচ্ছে। জামানত নিয়ে চাকুরী কেন?- জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক সময় কম্পিউটারের যন্ত্রপাতি চুরি করে নিয়ে যায়, এরজন্য জামানত নিচ্ছি।
পরিচালক সিরাজুল ইসলাম ও আব্দুল আউয়াল জানান, পাথর ব্যবসার সূত্র ধরে স্টেপ ২১ এর এমডি আসাদুজ্জামান এর সাথে পরিচয়। এর সূত্র ধরে তাদের পরিচালক হিসেবে নাম ব্যবহার করা হয়েছে। বাস্তবে তারা চাকুরী সংক্রান্ত বিষয়ে কারো কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করেননি। একাউন্ট বিষয়েও তাদের কিছু জানা নেই।
ব্যাংক ম্যানেজারের বক্তব্য
পূবালী ব্যাংক সিলেট মহিলা কলেজ শাখার ম্যানেজার খায়রুল আলম জানান, যথাযথ নিয়ম নীতি অনুসরণ করেই একাউন্ট খোলা হয়েছে। ওই হিসাব নম্বরটি স্টেপ ২১ নামক কোম্পানীর নামে খোলা। তবে, এই একাউন্টে কত টাকা রয়েছে বা গত কয়েকদিনে কী পরিমাণ অর্থ জমা হয়েছে সে তথ্য জানা যায়নি।
হাই টেক কর্তৃপক্ষের ভাষ্য
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক, সিলেট প্রকল্পের পরিচালক ব্যারিস্টার মোঃ গোলাম সরওয়ার ভূঁইয়া জানান, স্টেপ ২১ লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে হাই-টেক পার্ক- এ নবনির্মিত ভবনের ২য় তলায় ১ হাজার স্কয়ার ফুট এর স্পেস ভাড়া দেয়া হয়েছে। বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে। তিনি জানান, স্পেস বরাদ্দ সংক্রান্ত কমিটিতে তিনি নেই। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সচিব) হোসনে আরা বেগম এই কমিটির প্রধান। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা কমটিতে সদস্য থাকেন। স্পেস ভাড়া নিয়ে কেউ অনিয়ম প্রতারণা করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ব্যারিস্টার মোঃ গোলাম সরওয়ার ভূঁইয়া স্টেপ ২১ লিমিটেডের এম এম আহসান হাবিব বা এমডির সাথে তার ব্যক্তিগত কোন সম্পর্ক নেই বলে জানান।
বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সচিব) হোসনে আরা বেগম এনডিসি বলেন, স্পেস ভাড়া নিয়ে তরুণদের সাথে প্রতারণা। এটা মেনে নেয়া হবেনা। তিনি বলেন, প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।