গ্রামীণ মহিলাদের সন্তানও প্রসব হচ্ছে
তাহিরপুরে গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবায় ভূমিকা রাখছে কমিউনিটি ক্লিনিক
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ মার্চ ২০২১, ১২:৪১:২০ অপরাহ্ন

শাহজাহান চৌধুরী, সুনামগঞ্জ থেকে::
সুনামগঞ্জের পিছিয়ে পড়া জনপদ তাহিরপুর উপজেলার গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবায় ভ‚মিকা রাখছে কমিউনিটি ক্লিনিক। স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, শিক্ষা ও সচেতনতার অভাবে সরকারের অগ্রাধিকারকৃত তৃণমূলের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ও হাত ধৌত করার ব্যবস্থা অকার্যকর থাকায়, স্বাস্থ্যসেবা চরমভাবে বিঘিœত হচ্ছিল।
নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানার দূরাবস্থার ফলে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মী ও আগত রোগীদের জন্য নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করা এবং উপযুক্ত পরিবেশে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা অসম্ভব ছিল। তাহিরপুর উপজেলায় ২০টি কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রমের ফলে এ উপজেলার দরিদ্র জনগোষ্ঠী প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার সুফল ভোগ করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তাহিরপুর উপজেলায় ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ২০টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মিত হয়। পরবর্তীতে সরকার পরিবর্তনে কমিউনিটি ক্লিনিক সমূহের কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় তাহিরপুর উপজেলার সবগুলো কমিউনিটি ক্লিনিকের নলকূপ অকার্যকর ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নষ্ট হওয়ায় ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। পাশাপাশি কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রাণ কমিউনিটি গ্রæপ ও কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রæপের কি দায়িত্ব, তা বুঝেই উঠতে পারেনি। ২০০৯ সালে আবার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো আবারো চালু করা হয়।
উপজেলার বড়দল উত্তর ইউনিয়নের চানপুর গ্রামের স¤্রাট মিয়া জানান, ২০১৬ সালের এপ্রিলে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইরা, ওয়াটার এইড বাংলাদেশ’র অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতায় ওয়াস ইন হেলথ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় প্রত্যেকটি কমিউনিটি ক্লিনিকের অন্তর্গত কমিউনিটি গ্রæপ সদস্যদের দায়িত্ব-কর্তব্য, কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত দায়িত্ব সম্পর্কে ধারণা প্রদান করা হয়। ফলে কমিউনিটি গ্রæপসমূহের নিয়মিত সভায় আগ্রহ তৈরি হয়, পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মীদের ওয়াস এবং ওয়াসের সাথে স্বাস্থ্যের সম্পর্ক বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
উপজেলার ভাটি তাহিরপুর গ্রামের সুফিয়া ইসলাম জানান, কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়মিত মা সমাবেশ, কমিউনিটি গ্রæপের মাসিক সভা এবং কমিউনিটি সার্পোট গ্রæপের দুই মাস অন্তর সভার কাজের উপর জোর দেয়া ও নিয়মিত মনিটরিং করা শুরু হয়। পাশাপাশি গ্রাম পর্যায়ে নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা, হাত ধৌত করার উপকারিতা, শিশুর মল ব্যবস্থাপনা, নারীদের মাসিক পরিচর্যা ও শিশুর পুষ্টি বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের চন্দন কুমার দে জানান, বাড়ি পাশে কমিউনিটি ক্লিনিক হওয়ায় যেকোন অসুখ-বিসুখে গ্রামের মানুষকে হাওরের দীর্ঘপথ মাড়িয়ে উপজেলা সদর কিংবা জেলা সদরে যেতে হয় না। কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়েই তাদের অসুখ-বিসুখ ভালো হয়।
একই ইউনিয়নের খলিমজুরি গ্রামের খুকি জানান, কোনো প্রসূতিকে (সন্তানসম্ভবা) কে নিয়ে এখন আর উপজেলায় কিংবা জেলায় যেতে হয় না। গ্রামের পাশে কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে ডেলিভারী (বাচ্চা প্রসব) করা হয়। কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মী ও ধাত্রীরা অত্যন্ত দক্ষ।
সূত্রটি আরো জানায়, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সংস্কারের আগে দৈনিক গড়ে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণকারী ছিল ৩৬ জন এবং সংস্কার কার্যক্রমের পর সেবা গ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে গড়ে ৫১ জন। পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সিদ্ধান্ত মোতাবেক নিরাপদ প্রসবের জন্য পর্দা, বেড এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ডেলিভারী (বাচ্চা প্রসব) শুরু হয়ে ২০২১ সালের ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত মোট ২৫৬টি ডেলিভারী উপজেলার ক্লিনিকগুলোতে হয়েছে। এতে শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যু কমিয়ে আনা ও স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহযোগী হচ্ছে।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণাসিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান, তাহিরপুর উপজেলায় কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম অত্যন্ত ভালো। কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মকান্ড এখন ডেলিভারী (বাচ্চা প্রসব) করা হচ্ছে। এতে গ্রামের দরিদ্র ও নি¤œ আয়ের মানুষ গ্রামেই মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। তবে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে সরকার আরও লজিস্টিক সাপোর্ট দিলে এলাকার মানুষের আরও স্বাস্থ্য সুরক্ষা হবে।