আতঙ্কে সমসার হাওরের কৃষকরা
তাহিরপুরে স্লুইস গেট দিয়ে প্রবেশ করছে পানি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১১ এপ্রিল ২০২১, ৮:১৭:৩০ অপরাহ্ন

তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ)থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা :
তাহিরপুর উপজেলার মেঘালয় সীমান্তবর্তী সমসার হাওরে ২০১৩ সালে একটি স্লুইচ গেট নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। হাওরটির উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের মদনপুর গ্রাম সংলগ্ন স্থানে কোটি টাকা ব্যয়ে এ স্লুইচ গেটটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু নির্মাণ ত্রুটির কারণে এ গেটটি চালু হওয়ার সময় থেকেই দুর্ভোগ বাড়ে কৃষকদের। তাই, হাওর বান্ধব এ প্রকল্পটিকে ‘মরণ গেট’ বলছেন হাওরপাড়ের কৃষকরা।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মেঘালয়ে বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঝর্ণা দিয়ে আসা পানি প্রবেশ করে সমসার হাওরটিতে। নদীতে পানি কম থাকলে ঝর্ণার পানি হাওর থেকে নদীতে বের করে দেওয়া যায় এ গেট দিয়ে। তাছাড়া, শীতকালে ধান রোপণের সময় অতিরিক্ত পানি হাওর থেকে নদীতে বের করা হয়। কিন্তু যখন নদীতে পানি বেড়ে যায় তখন স্লুইচ গেটের কপাট বন্ধ করে নদী থেকে হাওরে পানি প্রবেশ আটকাতে হয়। তখনই দেখা দেয় বিপত্তি। নির্মাণ ত্রুটির কারণে ¯ুøইচগেটের ৫টি কপাট বন্ধ করলেও ফাঁক থেকে যায়। এ সময় কপাটের ফাঁক দিয়ে নদীর পানি হাওরে প্রবেশ করে। বৃষ্টি জনিত পানি আর কপাটের ফাঁক দিয়ে প্রবেশ করা পানিতে ডুবে যায় হাওরের নীচু এলাকায় রোপিত বোরো ধান। হাওরে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। নদীর পানি বৃদ্ধির সময় দীর্ঘায়িত হলে পুরো হাওরে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে।আতংকিত হয়ে যায় সমসার হাওরের কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় জানায়, সমসার হাওরে তিন হাজার একর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়। তবে স্লুইচগেটের এ সমস্যার কথা কেউ তাদের জানায়নি।
স্থানীয় ইউপি’র ৪ নং ওয়ার্ড সদস্য সুধাংশু দাস জানান, নির্মাণের সময়ই স্লুইচগেটে ত্রুটি ছিল। নদীতে পানি বাড়লে গেটের কপাট বন্ধ করি। কিন্তু কপাট ঠিকমতো বন্ধ হয়না, তাই হাওরে পানি প্রবেশ করে। বিগত সপ্তাহে বৃষ্টি জনিত কারণে নদীতে পানি বাড়ে। কপাট বন্ধ করলেও পানি প্রবেশ করছিল। তাই, আমরা কপাটে বস্তা দিয়ে চেষ্টা করেছি পানি আটকাতে। প্রতি বছরই আমাদের এমন করতে হয়। তবুও নদীতে পানির চাপ থাকলে এ গেট দিয়ে হাওরে পানি প্রবেশ করে।
সমসার হাওরপাড়ের কৃষক কলাগাঁও মইয়াজুরি কৃষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুরশিদ আলম সাদ্দাম বলেন, হাওরের ৪০ কেদার জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছি। প্রতি বছর যখনই নদীতে পানি বৃদ্ধি পায়, এ গেটটি দিয়ে হাওরে পানি প্রবেশ করে। এটি হাওরের ‘মরণ গেট’। আমরা চাই এর দ্রুত সংস্কার নতুবা এটি বন্ধ করে স্থায়ী বেড়ী বাঁধ দেওয়া হোক।
স্লুইচ গেট দেখভালের দায়িত্ব পালনকারী সংগঠন সমসার হাওর চুনখলা বিল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক আফজল হোসেন বলেন, ২০১৩ সাল থেকেই আমি দায়িত্ব পালন করছি। স্লুইচ গেট নির্মাণের সময়ই ত্রুটি ছিল, তাই এ অবস্থা চলছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে বার বার জানালেও কোন কাজ হচ্ছে না।
উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খসরুল আলম বলেন, নদীতে পানির চাপ বাড়লেই স্লুইচ গেট দিয়ে হাওরে পানি প্রবেশ ঠেকাতে কপাটে বাঁশ বস্তা দিতে হয়। ১৭ বছর ধরেই এ সমস্যা চললেও সমাধানের উদ্যোগ নেই।
এলজিইডি’র তাহিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী ইকবালুর রহিম বলেন, দ্রুতই স্লুইচ গেটটি সংস্কার করে সমস্যাটি সমাধানের উদ্যোগ নেব।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান-উদ-দৌলা বলেন, খোঁজ নিয়ে সমস্যা সমাধানের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেব। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ বলেন, সমস্যা সমাধানে দ্রুতই উদ্যোগ নেওয়া হবে।