তিন বন্ধু
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ অক্টোবর ২০২১, ৪:৫০:৩৭ অপরাহ্ন

জাহিদা চৌধুরী
হাবলু, লাভলু এবং বাবলু। ওরা তিন বন্ধু। যেদিকে যায় তিনজন একই সাথে যায়। একবার তাদের গ্রামে এক বিরাট মেলা বসেছিলো তিনবন্ধু মিলে মেলা দেখতে গেলো। মেলাতে এতো সুন্দর সুন্দর জিনিস দেখে তাদের লোভ হলো, কিছু একটা কিনবে বলে। কিন্তু কারো কাছেই টাকা নেই। তিনজন তখন খুব চিন্তায় পড়লো।
তিনবন্ধুর মধ্যে হাবলু ছিলো ভীষণ হাবা। বাবলু, লাভলু তাই হাবলুকে দিয়ে তাদের সুবিধা মতো কাজগুলো করাতো। দুই-বন্ধু ছাড়া হাবলু কারো কথা খুব একটা শুনতো না। একদিন বাবলু, লাভলু ফন্দি এঁটে হাবলুকে বললো হ্যাঁ রে হাবলু এতো সুন্দর মেলাতো আমরা দেখলাম, কিন্তু কিছুই তো কিনতে পারলাম না। হাবলু বলে চলো আমরা কিছু একটা কিনে আনি।
এ কথা শুনে বাবলু, লাভলু বললো, আরে বোকা কি দিয়ে কিনবো? কিনতে হলে তো টাকা লাগে, টাকা আমরা কোথায় পাবো? হাবলু বলে, ঠিকই তো। আমারও তো টাকা নেই। কিছুক্ষণ পর সে বলে, আমার না থাকলে কি হবে, আমার মায়ের তো টাকা আছে।
তখন দুই বন্ধু সুযোগ বুঝে হাবলুকে বলে, তোর মাকে বলে মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আয়, আমরা একটা বল কিনে আনবো, তিনজন মিলে বল খেলবো।
হাবলু তাদের কথায় খুশী হলো মহা আনন্দে। হাবলুকে নিয়ে তার মায়ের মনে অনেক চিন্তা, সে কিছুই বুঝে না। ঘরের জিনিস পত্র বা টাকা পয়সা সুযোগ মতো পেলে কাউকে দিয়ে দেয় বা নষ্ট করে ফেলে।
কিন্তু বল কেনার কথা মাকে বললে মা রাজী হন। মায়ের কাছে তার আবদার গ্রহণযোগ্য হয়েছে দেখে হাবলু তো মহা খুশী। দৌড়ে বন্ধুদের কাছে যায় এবং মায়ের দেয়া টাকা তাদের হাতে তুলে দেয়। টাকা পেয়ে তিন বন্ধুতে মেলাতে গেলো।
হাবলুকে তারা বললো, হাবলু তুই এই গাছের নীচে এক জায়গায় বসে অপেক্ষা কর। আমরা বল কিনে নিয়ে আসি। তারপর বাড়ি যাবো। হাবলু ঠিকই তাদের কথামতো গাছতলায় বসে অপেক্ষা করছিলো, আর ভাবছিলো বল আনলে সারাদিন খেলতে পারবে।
এ সময় হঠাৎ হাবলুর সাথে তার এক মামার দেখা হলো। হাবলুকে এভাবে একা বসে থাকতে দেখে মামা খুব অবাক হন। শত হলেও তো ভাগ্নে।
তিনি হাবলুর কাছে যান। হাবলুর কথা শুনে তাকে এভাবে বসে থাকার জন্য এক ধমক দেন এবং তার সঙ্গে হাবলুকে তাদের বাড়িতে যেতে বলেন।
হাবলু বলে, মামা আমি যাবো না। আমার বন্ধুরা বল নিয়ে আসবে। আমরা বল খেলবো। মামা বললেন- তোকে আমি বল কিনে দেবো, তুই চল আমার সাথে, এই বলে হাবলুকে নিয়ে তাদের বাড়িতে যান।
এদিকে বাবলু লাভলু বল কিনে এলে হাবলুকে না পেয়ে ভীষণ চিন্তায় পড়লো। সারাদিন তারা হাবলুকে খুঁজে না পেয়ে মন খারাপ করে যার যার বাড়ি গিয়ে বসে থাকলো। হাবলু তার মায়ের সাথে দেখা করে মামা বাড়িতে গিয়ে বেশ ক’দিন আনন্দে কাটালো। মামা তাকে আদর যত্ন করে খুব বুঝালেন। তাকে অনেক জায়গায় বেড়াতে নিয়ে গেলেন।
মামা বললেন, তুই কতো সুন্দর ছেলে, ভালো ছেলে। তোকে কেনো সবাই হাবা বলে? তুই তো হাবা না।
মামার কথা শুনে হাবলু সত্যিই ভাবে এবং বলে মামা মা আমাকে নিয়ে কতো ভাবে, কিন্তু আমি কি করবো।
মামা বলেন, তোর বুদ্ধি আছে ঠিকই। কিন্তু তুই সারাদিন ঘুরে বেড়াস, মায়ের কষ্ট বুঝিস না। তুই একটি মাত্র ছেলে। তুই পড়ালেখা করে বড় হবে। তোকে কেনো সবাই হাবা বলে।
রাত্রে মামার সাথে ঘুমাতে গিয়ে অনেক কিছু জানতে চাইলো। সে মামাকে বললো, বাবলু, লাভলুর মতো আমিওতো একটি ছেলে। ওরা খেলাধুলা করলেও, ভালোভাবে পড়ালেখা করে। মামা বললেন, ওরা আবার কারা? হাবলু তখন মামাকে সব খুলে বললো। মামা সব শুনে বললেন, আজ থেকে তুমি তাদের মতো পড়ালেখা করবে, খেলবে। তোমার যা প্রয়োজন মায়ের কাছে, আমার কাছে বলবে।
মামা আরো বললেন, আমি তোকে একটা ছড়া শিখিয়ে দিচ্ছি, তুই এখন থেকে ঐ ছড়াটা বলবে। বাড়িতে গিয়ে তোর বন্ধুদের ছড়াটি শুনাবে।
‘পড়ালেখা করবো আমি
দেবো যে সাগর পাড়ি,
ঘুরাফেরা আর করবো না,
হাবা আমি থাকবো না।
মায়ের কথা শুনবো
ভালো হয়ে চলবো।
হাবলুকে নিয়ে মামা তার মায়ের কাছে আসেন এবং সব কথা খুলে বলেন। মা বললেন, পড়ালেখা করে বড় হবি ভালো হবি, সে তো আমি চাই।
তুই পড়ালেখা করে বড় হলে শুধু আমার গৌরব নয়। প্রতিটি মায়ের গৌরব। হাবলু তার বন্ধুদের সাথে দেখা করে। তার এ পরিবর্তন দেখে সবাই হতবাক। তারা বলে, আমরা যাকে হাবা বলি সে-তো আসলে হাবা নয়। সে ছড়া বলতে পারে, ঠিকমতো সব বুঝতে পারে।
হাবলু তার বন্ধুদের সাথে হাত মিলায়। তারা সবাই বলে পড়ালেখা করে আমরা সবাই ভালো হবো। সবাই আমাদের ভালো বলবে। আজ থেকে আমরা তিনজন একসাথে পথে চলবো। সবার বিপদ আপদে আমরা এগিয়ে যাবো। বড়দের সম্মান ও শ্রদ্ধা এবং ছোটদের স্নেহ করবো।