তুতুলের শীতের পিঠা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ ডিসেম্বর ২০২১, ৪:২৫:০৬ অপরাহ্ন

মনিরা মিতা
চারিদিকে ঘন কুয়াশা। মিতুল আর তুতুল বাবার হাত ধরে স্কুলে যাচ্ছে। মিতুলের বয়স নয় বছর। সে ক্লাস থ্রিতে পড়ে। তুতুলের বয়স পাঁচ বছর সে শিশু শ্রেণিতে পড়ে। পড়ে বললে ভুল হবে, সে বরং সবাইকে পড়ায়। সকাল সকাল সারি বেঁধে বসে থাকা কাক গুলোকে সে গণনা শেখায়। দুপুরবেলা ঘরের কোণে অলস শুয়ে থাকা বেড়াল ছানাটাকে’ সে ছড়া শেখায়। বিকালে ছাদে লাগানো টবের গাছগুলোকে নামতা শেখায়। রাতে তার খেলনাগুলোকে অ, আ শেখায়। সবাই তার ছাত্র। কখনো লাঠি হাতে শাসন করে, আবার কখনো আদর করে তাদের পড়া শেখায়। পড়া না পারলে ভিষণ ক্ষেপে যায় সে। মা-বাবা ওর কাণ্ড দেখে হেসে লুটোপুটি খায়।
তো যাই হোক, শীতের সকালে প্রতিদিন স্কুলে তারা হেঁটেই যায়। এতে শরীর গরম হয়, শীত কম লাগে। প্রতিদিনের মতো আজও দুই ভাই-বোন তাদের গল্পের ঝুড়ি খুলে বাবার মাথা নষ্ট করছে আর পথ চলছে। ওদিকে বাবা বাধ্য শিশুর মতো সবটা শুনে হু হা করছে আর মাথা নাড়ছেন। হঠাৎ মিতুল বললো “দেখেছো বাবা রাস্তা কেমন কুয়াশার চাদর মুড়িয়ে রয়েছে! এজন্যই রাস্তা দেখাই যাচ্ছে না।
ব্যাস, ওমনি তুতুলের বায়না আমিও রাস্তার মতো কুয়াশার চাদর নেব।’
আচ্ছা বিপদ হলো তো! মিতুল আর বাবা তাকে যতোই বলে কুয়াশার চাদর আসলে হয় না, ওটা কথার কথা। ততই তুতুল বেঁকে বসে। আসলে বাবা আর আপু তাকে কুয়াশার চাদর কিনে দেবে না বলে এমনটা বলছে। কিন্তু সে ছোট খোকা নয়, সে মস্ত বড় টিচার। সে সব বোঝে, তাকে ফাঁকি দেয়া এতো সহজ নয়। সুতরাং কুয়াশার চাদর তার চাই-ই-চাই। অবশেষে কি আর করা, বাবা বাধ্য হয়ে দোকানে নিয়ে গেলেন।
কুয়াশার চাদর লাগবে শুনে দোকানিরা তো হেসেই অস্থির। ওদিকে পুরো মার্কেট ঘুরে কাক্ষিত চাদর না পেয়ে বেচারা তুতুলের মুখ লাল হয়ে গেল। রাগে গজগজ করতে করতে সে ক্লাসে গেল। বাড়ি ফিরেও সে কুয়াশার চাদরের কথা ভুলতে পারলো না।
গাল ফুলিয়ে, ঠোট বাঁকিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে সে তার মায়ের কাছে নালিশ করলো। সব শুনে মা তো আকাশ থেকে পড়লো। কুয়াশা নিয়ে এমন মাতামাতি শুনে তার বড় হাসি পেল কিন্তু হাসার উপায় নেই।
কুয়াশার চাদরের কথা ভুলাতে বাবা বললো তুতুল আজ আমরা শীতের পিঠা বানাবো। তুমি কি পিঠা বানাবে আমাদের সাথে? ‘বাহ! শীতের পিঠা। তুতুল তো মহা খুশি। সেও বানাবে শীতের পিঠা।
বিকাল হতেই চালের গুঁড়া, নারিকেল কোরা, দুধ, খেজুরের গুড় এসব নিয়ে বসে গেল মা-বাবা, মিতুল আর তুতুল। তারা পিঠা বানাবে। চিতোই পিঠা আর ভাপা পিঠা। পিঠা বানানো শুরু হলো। একটুপর মা তৈরি করলেন মজার সব পিঠা। কিন্তু তুতুলের মন খুশি হতে পারছে না, সে মুখ ভার করে বসে আছে। শীতের পিঠা বলছে সবাই কিন্তু পিঠার ভেতর শীত তো দিলো না!
বাবা-মা আর মিতুল এই কথা শুনে তো হেসেই খুন। সবার এমন হাসির কারণ তুতুল খুঁজে পায় না। সে তো ভুল কিছু বলছে না। শীতের পিঠা মানে তো শীত দিয়ে তৈরি পিঠাই হবে তাই না!
এক সময় বাবা হাসি থামিয়ে বললো, তুতুল শীতের পিঠা মানে শীতকালে তৈরি পিঠা। শীতকালে খেজুরের গুড় আর রস পাওয়া যায়। চালের গুঁড়ার সাথে খেজুরের রস, গুড়, নারিকেল কোরা এগুলো দিয়ে যে পিঠা তৈরি হয় সেগুলোকেই শীতের পিঠা বলে।’
বাবার কথা শুনে তুতুলের মন ভালো হয়ে গেল। সে প্লেট নিয়ে দৌড়ে মায়ের কাছে গিয়ে পিঠা নিয়ে এলো। তারপর সবার সাথে সেও মজা করে খেতে লাগলো শীতের পিঠা। আর হ্যাঁ, সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় তার বন্ধুদের জন্যও নিয়ে যাবে শীতের পিঠা।