তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃত্যু ৬ হাজার ছাড়িয়েছে
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ৮:৩৩:১৮ অপরাহ্ন

ডাক ডেস্ক : হিমশীতল আবহাওয়া ও ভূমিকম্প পরবর্তী আফটারশকের মধ্যেই তুরস্ক এবং সিরিয়ার উদ্ধারকারীরা গতকাল মঙ্গলবার ধসে পড়া ভবনে চাপা পড়া জীবিত লোকদের উদ্ধারে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত ৬ হাজারের বেশি লোক নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও কয়েক হাজার মানুষ।
দুর্যোগ সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে এএফপি’র খবরে বলা হয়, একটি বিস্তীর্ণ সীমান্ত অঞ্চলের শহরগুলোতে কয়েক হাজার ভবন ধসে সমতলে মিশে গেছে। ইতোমধ্যে যুদ্ধ, বিদ্রোহ, উদ্বাস্তু সংকট এবং সাম্প্রতিক কলেরা প্রাদুর্ভাবে জর্জরিত এই অঞ্চলে আরো চরম দুর্দশা নেমে এসেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গতকাল মঙ্গলবার সতর্ক করে বলেছে যে, ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুকূপে পরিণত এই এলাকায় ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
ডব্লিউএইচও’র সিনিয়র জরুরি কর্মকর্তা অ্যাডেলহেইড মার্শাং জাতিসংঘের স্বাস্থ্যসংস্থার নির্বাহী কমিটিকে বলেছেন যে ভূমিকম্প এলাকার মানচিত্রে দেখা যায়, ওই এলাকায় ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি, এদের মধ্যে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
সোমবার ভোররাতে প্রথম ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পের সময় বহুতল ভবনের বাসিন্দারা খালি হাতেই ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত পরিবার পরিজন, বন্ধুবান্ধব এবং ভিতরে ঘুমন্ত অন্য কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল। সে সময়ে সীমান্তের ওপারের তুর্কি অংশে, হাতায়ে শহরের এক মর্মন্তুদ চিত্র ভেসে ওঠে প্রাপ্ত এক বর্ণনায়, যখন ধসে পড়া বিল্ডিংয়ের মধ্যে থেকে মুখ, চুল এবং পাজামায় ধুলোবালি মাখা সাত বছরের দিশাহারা এক কণ্যা শিশু বিচলিত কন্ঠে জিজ্ঞাসা করেছে- “আমার মা কোথায় ?” ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল- কাহরামানমারাস এবং গাজিয়েন্টেপের মধ্যবর্তী এলাকা। সেখানেই ঘটেছে সবচেয়ে প্রবল ধ্বংসযজ্ঞ। দুই মিলিয়ন লোকের একটি গোটা শহরেরই ধ্বংসস্তূপ এখন শুভ্র তুষারে ঢেকে আছে।
তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থা ‘আফাদ’ জানায়, গতকাল মঙ্গলবার তুরস্কের ১০টি প্রদেশে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪,৫৪৪ দাঁড়িয়েছে। এছাড়া সিরিয়ায় এ পর্যন্ত ১৭৮২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ৮১২ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানা জানিয়েছে আর বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় নিহতের সংখ্যা ৯৭০-এর বেশি বলে জানিয়েছে উদ্ধারকারী গোষ্ঠী ‘হোয়াইট হেলমেট’। এ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৬,৩২৬- এ পৌঁছেছে ।
তুর্কি সরকার, হোয়াইট হেলমেট এবং সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের পরিসংখ্যান অনুসারে, এ পর্যন্ত দু’দেশে কমপক্ষে ৩০ হাজার ৪৭৪ জন আহত হয়েছে।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, মৃত্যুর সংখ্যা আরো বাড়বে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা অনুমান করেছেন, এই ধ্বংসযজ্ঞে ২০,০০০ পর্যন্ত মারা যেতে পারে। আহতদের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যিপ এন্দোয়ান ১০টি রাজ্যকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করে ঐসব এলাকায় তিন মাসের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন
তীব্র ঠান্ডা, দুর্বল ইন্টারনেট ও রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ায় উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে।
ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ভয়েস মেসেজ পাঠাচ্ছেন আটকাপড়া মানুষ
তুরস্কের ইস্তাম্বুলভিত্তিক এক সাংবাদিক জানিয়েছেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়া ব্যক্তিরা বাঁচার আকুতি জানাচ্ছেন। তারা বাঁচার আকুতি জানিয়ে মোবাইলে ভিডিও, ভয়েস মেসেজ ও নিজেদের অবস্থানের লোকেশন পাঠাচ্ছেন।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির সঙ্গে কথা বলার সময় ইব্রাহিম হাসকোলোগু নামের এক সাংবাদিক এই কথা বলেন। তিনি বলেন, ধসে যাওয়া ভবনের নিচে এখনো মানুষজন আটকা পড়ে আছে। তাদের সাহায্য দরকার।
বিবিসিকে তিনি বলেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকাপড়া মানুষ আমাকে এবং অন্য সাংবাদিকদের ভিডিও, ভয়েস মেসেজ এবং তারা যেখানে আটকা আছেন সেই লোকেশন পাঠাচ্ছেন। তারা কোথায় আছেন তা আমাদের জানাচ্ছেন, কিন্তু আমরা কিছু করতে পারছি না।
ধ্বংসস্তূপে জন্ম নেওয়া নবজাতকের কেউ বেঁচে নেই
তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ধসে পড়া ভবনের নিচ থেকে ফুটফুটে এক নবজাতককে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে শিশুটির মায়ের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা। এমনকি ওই নবজাতকের পরিবারের কোনো সদস্যকেই বাঁচানো যায়নি।
সিরিয়ার আলেপ্পো শহরে এ ঘটনা ঘটেছে। সিরিয়ার আলেপ্পো অঞ্চলের জিনদায়ার্স শহরে একটি ধ্বংসস্তূপে সোমবার ওই শিশুটি জন্ম নেয়।
আল-জাজিরার ফেসবুক পেজ থেকে নবজাতকটিকে উদ্ধারের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়। সেখানে দেখা যায়, এক উদ্ধারকারী শিশুটিকে হাতে নিয়ে দৌড়াচ্ছেন। এ সময় নবজাতকটিকে ঢাকতে অপর এক উদ্ধারকারী তার দিকে একটি চাদর ছুঁড়ে দেন।
তবে শিশুটি বেঁচে রয়েছে কি না তা নিশ্চিত করতে পারেনি আল-জাজিরা। কিন্তু তার মাসহ পরিবারের আর কেউ বেঁচে নেই।
ভূমিকম্পে ধসে গেল তুরস্কের ঐতিহাসিক মসজিদ
ভূমিকম্পে ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বাদ যায়নি তুরস্কের ঐতিহাসিক ইয়েনি মসজিদটিও। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মালতিয়া প্রদেশের প্রতীক হয়ে ওঠা ১২৩ বছর বয়সী ওই মসজিদের বেশ ক্ষতি হয়েছে। মসজিদটি ২০২০ সালের ২৪ জানুয়ারি ইলাজিগের সিভরিস জেলায় সংঘটিত ৬ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
সোমবারের প্রথম ভূমিকম্পে ঐতিহাসিক মসজিদের বেশ ক্ষতি হয়। আর সোমবার দ্বিতীয় দফায় ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পে মসজিদটি সম্পর্ণরূপে ধসে যায়। যা নাগরিকদের মধ্যে ‘তেজে মসজিদ’ নামেও পরিচিত ছিল। ইয়েনি মসজিদটি ১৮৯৪ সালের ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যাওয়া হাকি ইউসুফ মসজিদের জায়গায় নির্মিত হয়েছিল।
নিখোঁজ ২ বাংলাদেশি উদ্ধার
ভূমিকম্পে তুরস্কের আজাজ শহরে নিখোঁজ দুই বাংলাদেশিকে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া নুর আলম ও গোলাম সাইদ রিংকু সুস্থ আছেন এবং বর্তমানে চিকিৎসাধীন।
ইস্তাম্বুলে বাংলাদেশ কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ নুরে আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কনসাল জেনারেল মোহাম্মেদ নুর আলম জানান, তুরস্কের স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যায় নুর আলমকে ও নিখোঁজের ৩৮ ঘণ্টা পর বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টায় রিংকুকে উদ্ধার করা হয়। তারা দু’জন তুরস্কের আজাজ শহরে বসবাস করতেন।
নিখোঁজ বাংলাদেশি রিংকুর বাড়ি বগুড়ায় ও নুর আলমের বাড়ি চাঁদপুরে।
কনসাল জেনারেল আরও বলেন, ‘ওই অঞ্চলে অল্পসংখ্যক বাংলাদেশি থাকেন। আমরা এখন পর্যন্ত আর কোনো হতাহতের খবর পাইনি। এ ছাড়া সাত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে ভূমিকম্প বিধ্বস্ত গাজিয়ানতেপ অঞ্চলের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এখন ওই অঞ্চলে আবহাওয়া প্রায় শূন্য ডিগ্রির কাছে। বৈরী পরিস্থিতির কারণে উদ্ধার তৎপরতা কিছুটা ধীরগতিতে চলছে।’