লজ্জাজনক কাজের জন্য অনুতাপ করা জীবনের পরিত্রাণ স্বরূপ।-ডেমোক্রিটাস
দুর্নীতির পরিণতি কী?
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ৯:২৩:২২ অপরাহ্ন

ঘুষ খেলেন, দুর্নীতি করলেন; কিন্তু এই অবৈধ কর্মকান্ডের চূড়ান্ত পরিণতি কী? একজন মানুষ সর্বোচ্চ ৮০/৯০ বছর বেঁচে থাকে। এর পর চূড়ান্ত পরিণতি মৃত্যু। ঘুষ খেয়ে দুর্নীতি করে সৃষ্টিকর্তার কাছে কী জবাব দেবেন? সম্প্রতি হাইকোর্ট বেঞ্চ একটি দুর্নীতি মামলার শুনানিকালে দুর্নীতিবাজদের উদ্দেশ্যে একথা বলেন। হাইকোর্ট আরও বলেন, দায়িত্ববোধ না থাকলে দেশের উন্নতি হবে কীভাবে? যেখানে দুর্নীতি হয় সেখানে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দুর্নীতি বন্ধে কি কোন পদক্ষেপ নিয়েছেন? দুর্নীতি বন্ধে সরকার ও আদালতকে জানাতে হবে। তাছাড়া বড়দের অঙ্গুলি হেলান ছাড়া পিয়ন-চাপরাসিদের কি দুর্নীতি করা সম্ভব?
হাইকোর্টের এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞগণ স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রচলিত কথা উচ্চারণ করেছেন। আর সেটা হলো ‘চোরা নাহি শুনে ধর্মের কাহিনী।’ আর এটাই বাস্তবতা। দুর্নীতিবাজ-বাটপারদের কাছে নীতিবাক্য বলে কোন লাভ নেই। দুর্নীতি-লুটপাট-আত্মসাৎ মিশে গেছে যাদের রক্তে তাদের সামনে ধর্মের কথা বলা আর উলুবনে মুক্তো ছড়ানো একই বিষয়। এদের ধর্মের দোহাই আর মানসম্মানের ভয় দেখিয়ে কী হবে, এরা এইসব কিছু বিসর্জন দিয়েই নেমেছে এই পথে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা জনসেবার পবিত্র ব্রত নিয়ে কাজে যোগদান করে জনসেবা নয় বরং জনগণ ও সরকারের সর্বনাশ করতেই নিজেদের অর্জিত ‘জ্ঞান ও মেধা’কে কাজে লাগাচ্ছে। দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে সরকারি চাকরিজীবিরা অনেকেই দুর্নীতিতে ডুবে যাচ্ছে। তারা সরকারি সম্পদ লুটপাটের সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে টাকা ছিনিয়ে নিচ্ছে ঘুষ হিসেবে। ঘুষের লেনদেন হয় প্রকাশ্যেই। আদালত প্রশ্ন করেছেন, যেখানে দুর্নীতি হয় সেখানে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কি কোন পদক্ষেপ নিয়েছেন? কিন্তু কে নেবে কার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ? যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা সে নিজেই তো দুর্নীতিতে আকন্ঠ নিমজ্জিত।
সুতরাং ‘সর্বাঙ্গে ব্যথা ওষুধ দেবো কোথা?’-এই অবস্থার মধ্যেই আমাদের বসবাস করতে হচ্ছে। সরকারি দপ্তরের উর্ধ্বতন পর্যায় থেকে শুরু করে পিয়ন-দারোয়ান পর্যন্ত দুর্নীতির নেটওয়ার্ক বিস্তৃত। ঘুষের অর্থ কিংবা চুরি করা সরকারি অর্থ সম্পদ ভাগ-বাটোয়ারা হয় নিচু স্তর থেকে উচ্চতর স্তর পর্যন্ত। এই যে বছরের পর বছর দুর্নীতি-লুটপাটের জাল বিস্তৃত হচ্ছে একে ছিন্ন করা রীতিমতো চ্যালেঞ্জের বিষয় বলেই মনে হয়। তবে দূরূহ নয়। এজন্য চাই কার্যকর উদ্যোগ। যিনি এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিবেন, প্রথমে নিজেকে শুধরে নিতে হবে। কারণ একজন দুর্নীতিবাজ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চাইলে সেটা হবে স্রেফ লোক দেখানো।