দৃষ্টিপাত: প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ এপ্রিল ২০২১, ৫:০৫:১১ অপরাহ্ন

রুকাইয়া মিজান মিমি
‘করোনা ভাইরাস’ পৃথিবীর বুকে একটি আতঙ্কের নাম ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম শনাক্ত হওয়া এ ভাইরাসটি খুব দ্রুতই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। ইতিমধ্যেই বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এর ভয়াল থাবা থেকে রক্ষা পায়নি বাংলাদেশও এদেশেও হাজার হাজার মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছে, শত শত মানুষ মারা গেছে। প্রায় বছরখানেক পর ভ্যাকসিন কার্যকর করা হলেও বারবার রূপ বদলে কোডিড-১৯ ভাইরাসটি গবেষকদেরও দুশ্চিন্তায় ফেলে দিচ্ছে।
৮ মার্চ ২০২০, বাংলাদেশে প্রথম শনাক্ত হয় এ ভাইরাসটি। এরপর সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশ সরকার ১৭ এপ্রিল দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় এবং সবার জন্য মাস্ক ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে। এরপরও পরিস্থিতি প্রতিকূলে গেলে দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করে, এমনকি অন্তঃজেলা পরিবহনসমূহের চলাচল ও যাত্রী ব্যবস্থাপনাতেও বিভিন্ন বাধানিষেধ প্রণয়ন করে। পাশাপাশি করোনা সংক্রমণের মাত্রা অনুযায়ী গোটা দেশকে তিনটি জোনে ভাগ করে যথাযথ ব্যবস্থাও গ্রহণ করেন। সরকার শুধু লকডাউন দিয়েই খান্ত থাকেনি, গৃহবন্দি মানুষদেও দোরগোড়ায় খাবার, ওষুধ ও নগদ অর্থও পৌঁছে দিয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে অনলাইন পাঠদান কার্যক্রম শুরু করে এবং অটোপাশ দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিড়ম্বনা থেকেও মুক্তি দেয়। এসব বেশ প্রশংসার দাবি রাখে এবং উদ্যোগগুলো সফল হওয়ায় দেশে করোনা সংক্রমণ হারও কমে আসে।
চলমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ধীরে ধীরে জেলাসমূহ থেকে লকডাউন তুলে নেওয়া হয়। দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ পুনরায় খোলার প্রক্রিয়াও নেওয়া হচ্ছিল। ঠিক এমন সময়ই আবারও ভয়াবহভাবে বেড়ে যাচ্ছে সংক্রমণ এর মূল কারণটিই হলোযথাযথ সচেতনতার অভাব। সরকার ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ চালু করলেও তার বাস্তবায়ন মিলছে না প্রায়ক্ষেত্রেই অধিকাংশ মানুষ মাস্ক ছাড়া খুব স্বাচ্ছন্দ্যেই ঘোরাফেরা করছে এবং তারা জেনে-বুঝেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছেন না।
এছাড়া শহরের বস্তি অঞ্চলে ও গ্রামের বেশির ভাগ মানুষের মধ্যেই করোনা নিয়ে এখনো সচেতনতার যথেষ্ট ঘাটতি রয়ে গেছে। বরং তাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে করোনা নিয়ে নানা ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কার। আবার দেখা যাচ্ছে, ঋতু পরিবর্তনজনিত সামান্য জ্বর-সন্দিতেও মানুষ আতঙ্কিত হয়ে করোনা টেস্ট করাতে যাচ্ছে, ফলে হাসপাতালগুলোতে চাপ বেড়ে যাচ্ছে, তৈরি হচ্ছে লম্বা লাইন। এতে করে অনায়াসেই সুস্থ ব্যক্তিদেরও পরাহত করছে কোভিড-১৯ ভাইরাসটি। আবার কেউ কেউ মনে করছেন ভ্যাকসিন নিলেই তাকে আর করোনা ছুঁতে পারবে না। এমন ধারণাও সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ভ্যাকসিনও এর আক্রমণ থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারছে না। এমনকি একবার করোনা থেকে সেরে উঠলেও আবারও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও রয়েই গেছে। না জানি এর শেষ কোথায়
তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় এ কথা বলার অবকাশ রাখে না যে, এ মরণঘাতী ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে আত্মসচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। যথাসম্ভব ঘরেই থাকা, বাইরে গেলেই মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, অপ্রয়োজনে নাক-মুখে হাত না দেওয়া, বারবার সাবান পানিতে হাত ধোয়া, বেশি বেশি পানি পান ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই পারে এ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে আমাদের মুক্তি দিতে। তাই সচেতনতার প্রচারণা ও বাস্তবায়ন আরো জোরদার করতে হবে। এর পাশাপাশি সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশ সরকারের অতিসম্প্রতি ২৯ মার্চ ১৮ দফা ঘোষণাও মেনে চলা জরুরি, যা পরবর্তী নিন্দেশনা না আসা পর্যন্ত দ্ইু সপ্তাহ বহাল থাকবে। এই ১৮ দফার বাস্তবায়ন ও ব্যাপক জনসচেতনতাই পারে করোনার ভয়ংকর দ্বিতীয় ঢেউ থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করতে।
লেখক : শিক্ষার্থী।