দোয়ারাবাজার ‘বাগানবাড়ি-রিংকু সীমান্ত হাট’ উদ্বোধন

দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন ও সীমান্ত এলাকায় বৈধ বাণিজ্য নিশ্চিতে যাত্রা শুরু করেছে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার বগুলা ইউনিয়নের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের জিরো পয়েন্টে বহুল প্রত্যাশিত ‘বাগানবাড়ি-রিংকু সীমান্ত হাট’।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুই দেশের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ফিতা কেটে হাটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক-দোয়ারাবাজার) আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক ও সিলেটে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারি হাইকমিশনার নিরাজ কুমার জয়সওয়াল।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন-সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন, ভারতীয় প্রতিনিধি এডিএম ডিপসাম্বর, ইউএমডিসিআইসিএফ মাজাও, বিবিও, পি মকইম, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন, দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান তানভীর আশরাফী চৌধুরী বাবু, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাংশু কুমার সিংহ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়সাল আহমদ, দোয়ারাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেবদুলাল ধর, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ছালেহা খাতুন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মিলন খান, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আমিরুল হক ও আনোয়ার হোসেন আনু, দোয়ারাবাজার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সফর আলীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
উদ্বোধন উপলক্ষে স্থানীয় বগুলা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে মুহিবুর রহমান মানিক এমপি বলেন, ২০১০ সালের ১৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরের সময় দুই দেশের মানুষের সুবিধার জন্য সীমান্ত হাট চুক্তি করেন। এরই ধারাবাহিকতায় আজ সুনামগঞ্জে দ্বিতীয় সীমান্ত হাট চালু হলো।
ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জের ডলুরা সীমান্তে দু’টি সীমান্ত হাট চালু হয়েছে। আরও সীমান্ত হাট চালু করা হবে। মুহিবুর রহমান মানিক আরও বলেন, এই নতুন বর্ডার হাট চালু হওয়ায় ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বন্ধুত্বের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করবে। দোয়ারাবাজারে যোগাযোগব্যবস্থা নিয়ে যে সমস্যা রয়েছে, সেটি সমাধানের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে মানুষ সহজেই যাতায়াত করতে পারবে।
সিলেটে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাইকমিশনার নিরজ কুমার জয়সওয়াল বলেন, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে বাগানবাড়ি-রিংকু বর্ডার হার্টের চালু হওয়ায় বাংলাদেশ ও ভারতের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। শুধু তাই নয়, এতে দুই দেশের মানুষের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, নতুন সীমান্ত এলাকায় নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। এর আগে ২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল চালু হয় সুনামগঞ্জের জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের ডলুরা বর্ডার হাট।
দোয়ারার ‘বাগানবাড়ি রিংকু সীমান্ত হাট উদ্বোধনীর দিন বাংলাদেশের ২৬টি ও ভারতের ২৪টি মিলিয়ে মোট ৫০টি দোকান বসতে দেখা গেছে। দোকানগুলোতে বাংলাদেশ ও ভারতের মানুষ তাদের পছন্দমতো পণ্য কিনতে উপচে পড়ছে। ফলে দুই দেশের মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে সীমান্ত হাট।
দুই দেশের দোকানিদের হাটে বাঁশজাত দ্রব্য, পান-সুপারি, সবজি, ফল, নানা জাতের মসলা, কাপড়চোপড়, পায়ের জুতা, প্রসাধনসামগ্রীসহ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত নানা ধরনের পণ্য বিক্রি করতে দেখা গেছে।
প্রসঙ্গত, সীমান্ত হাটগুলোতে উভয় দেশের অভ্যন্তরে পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী অধিবাসীরা পণ্য বিক্রি করতে পারবেন। প্রতি সপ্তাহে অন্তত একদিন এই হাট বসবে। তবে হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির অনুমতি সাপেক্ষে সপ্তাহে একাধিক দিনেও হাট বসতে পারে। উভয় দেশের ৫০ জন বিক্রেতা এই হাটে ব্যবসা পরিচালনা করবেন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে হাট ব্যবস্থাপনা কমিটি অনুমোদিত বিক্রেতাদের তালিকা সংরক্ষণ করবেন। হাটে উভয় দেশের দু’পাশে দু’টি প্রবেশ পথ রয়েছে। এছাড়া হাটের সীমানা কাটাতারের প্রাচীর দিয়ে সুরক্ষিত করা হয়েছে। হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ছবি সম্বলিত পরিচয়পত্র বহন করতে হয়েছে। সীমান্ত হাটে স্থানীয় মুদ্রায় অথবা বার্টার পদ্ধতিতে পণ্য বিনিময় করা হবে। সীমান্ত হাটে প্রত্যেক ক্রেতা প্রতি হাটে ২০০ ডলারের সমমূল্যের পণ্য স্থানীয় মুদ্রায় ক্রয় করতে পারেন।