নদীর পানি এখনো বিপদসীমার উপরে
নগরীতে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২১ মে ২০২২, ৪:০০:৪৪ অপরাহ্ন

বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের সংকট ॥ দুর্ভোগ অব্যাহত
স্টাফ রিপোর্টার: সিলেট নগরীতে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে, এখনও নদীর পানি প্রতিটি পয়েন্টেই বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমার পানি কমতে শুরু করলেও বেড়েছে কুশিয়ারার পানি। ধীরগতিতে পানি কমছে। পানি কমার সাথে সাথে দুর্ভোগ বাড়ছে। সুরমার তীরবর্তী এলাকাগুলোতে বন্যার পানিতে বাসাবাড়ি ডুবে যায়। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার বিচ্ছিন্নভাবে দু-এক জায়গায় বৃষ্টি হলেও দিনভর আবহওয়া ভালো ছিল। অল্প অল্প করে পানি কমার লক্ষণ দেখতে পান বন্যা কবলিতরা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, উজানে বৃষ্টি কমলে নদীর পানি কমা অব্যাহত থাকবে। এতে প্লাবিত এলাকা থেকেও পানি নেমে যেতে শুরু করবে। তবে কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি কিছুটা বেড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী শুক্রবার বেলা ৩টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ৯৬ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অপরদিকে, কুশিয়ারা নদীর পানি অমলসীদে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৮ সেন্টিমিটার কমেছে। তবে এই সময়ে ফেঞ্চুগঞ্জে ১৬ সেন্টিমিটার বেড়েছে। কিছুটা কমেছে লোভা, সারি, ধলাই নদীর পানিও।
সিলেট নগরীর নিচু এলাকা হিসেবে পরিচিত শাহজালাল উপশহর, ঘাসিটুলা, মাছিমপুর, ছড়ারপার, তালতলা, কুয়ারপার, মেন্দিবাগ, কামালগড়,চালিবন্দর, যতরপুর, সোবহানিঘাট, কালীঘাট, শেখঘাট, তালতলা, জামতলা, মাছুদীঘিরপার, রামের দিঘীরপার, মোগলটুলা, খুলিয়া টুলা, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোড, ভার্থখলা, মোমিনখলা, পিরোজপুর, আলমপুর ও ঝালোপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়িতে পানি উঠে। এসব এলাকায় অনেক বাসা-বাড়িতে কোমর সমান পানি। বাসা-বাড়িতে পানি উঠায় মানুষ অবর্ণীয় কষ্টে রয়েছেন। বন্যার পানির কারনে অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। তবে পানি কমতে শুরু করলেও এখন পর্যন্ত কাউকে আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি।
সিলেট নগরীর বর্ধিত এলাকার বাসিন্দারা বন্যার পানিতে চরম দুর্ভোগে সময় পার করছেন । টুকেরবাজার এলাকায় সিলেট- সুনামগঞ্জ সড়কে পানি উঠেছে। পানি কমতে শুরু করলেও গতকাল শুক্রবার রাত পর্যন্ত সড়কে পানি ছিল।
সিলেট নগরীর ঘাসিটুলা এলাকার বাসিন্দা আব্দুল করিম জানান, সকাল থেকে অল্প অল্প করে পানি কমছে। এভাবে পানি নামলে ঘর বাড়ির পানি নেমে নদীতে যেতে আরো দু একদিন লাগতে পারে।
সিলেট নগরীর মাছিম পুর এলাকার বাসিন্দা সুনীল সিংহ জানান, তার ঘরে কোমর সমান পানি ছিল, রাত ৯টা পর্যন্ত ছয় ইঞ্চির মত কমেছে। এভাবে কমলে দুর্ভোগ আরো বাড়বে বলে জানান তিনি।
উপশহর এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, পানিবৃদ্ধি বন্ধ রয়েছে। কিছুটা পানি নামার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। তবে বাসায় পৌঁছতে হলে পানিতে ভিজে বাসায় পৌঁছা লাগে।
অপরদিকে সিলেট সদর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। হাটখোলা ও জালালাবাদ ইউনিয়নে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ৯০ ভাগ মানুষ। এসব এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা চলছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উপ সহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা বলেন, সুরমার পানি কিছুটা কমেছে। উজানে বৃষ্টি না হলে পানি আরও কমবে। তবে বৃহস্পতিবার রাতে জকিগঞ্জের অমলসীদে একটি বাঁধ ভেঙে নতুন করে কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এই পানি এখন ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ হয়ে নামবে। ফলে ওই এলাকায় পানি বাড়ছে। এই দুই উপজেলার কিছু এলাকা প্লাবিতও হতে পারে।
গত ১১ মে থেকে সিলেট বন্যা কবলিত হয়। এর কয়েকদিন আগে থেকে নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করে। বন্যায় তলিয়ে যায় সিলেটের ১৩ উপজেলার মধ্যে ১০ উপজেলারই বেশিরভাগ এলাকা। সিলেট নগরীর সুরমার তীরবর্তী এলাকাগুলোতে বিপর্যয় নেমে আসে। সিলেট নগরীসহ বন্যায় পানিবন্দি হয়ে আছেন জেলার প্রায় ১৫ লাখ মানুষ।