সিলেটে লকডাউন নিয়ে ‘হ য ব র ল’ অবস্থা
নগরীতে বিপণী বিতান বন্ধ থাকলেও সড়কে অবাধে চলেছে গণপরিবহন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ এপ্রিল ২০২১, ৮:২৯:৫২ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেটে লকডাউন নিয়ে চলছে ‘হ য ব র ল’ পরিস্থিতি। সরকার ঘোষিত লকডাউনের ৩য় দিনে কারো মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি পালনের কোন বালাই ছিল না। সড়কে ছিল মানুষের স্রোত। শুধুমাত্র মার্কেট ও বিপণীবিতান বন্ধ থাকলেও ফুটপাত থেকে সবজি বাজার, মাছ বাজার, নিত্যপণ্যের দোকানে ছিলো মানুষের ভিড়। যানবাহনে যাতায়াতেও কেউ মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। আঞ্চলিক সড়কে চলেছে বাস। নগরীর সড়ক ছিলো গণপরিবহণের দখলে। রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো তাদের সেবা বন্ধ রাখলেও সিলেটে মোটর সাইকেলে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরাও লকডাউন মানতে নারাজ। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখের সামনে লকডাউন ভেঙ্গে যানবাহন চললেও যেন তারা দেখেও না দেখার ভান করছিলেন।
করোনার উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত সিলেট। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। বাড়ছে মৃত্যুও। তবুও কেউ মানছে না লকডাউন। লকডাউনের তৃতীয় দিনে ঢিলেঢালাভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।
দেখা গেছে, লকডাউন শুধুমাত্র কাগজে কলম ও নির্দেশেই। নগরীর কালিঘাট, বন্দরবাজার, জিন্দাবাজারসহ আশপাশ এলাকার শপিং মহল বন্ধ থাকলেও নিত্যপণ্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা ছিল। সেই সাথে নগরীতে রিক্সা, সিএনজি অটোরিক্সা ও যাত্রীবাহী মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য যানবাহন চলতে দেখা যায়। সিটি কর্পোরেশন এলাকায় গণপরিবহন চলাচলের অনুমতিকে পুঁজি করে সিটি এলাকায় গণপরিবহনের ঢল নামে।
অপরদিকে, সিলেটের আঞ্চলিক সড়কগুলোতে লকডাউন না মেনে চলে গণপরিবহন। গতকাল বুধবার সকাল থেকে সিলেট-জকিগঞ্জ ও সিলেট-বিয়ানীবাজার সড়কে বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে আসনের অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করে বাসগুলো। এছাড়া, আদায় করা হয় অতিরিক্ত ভাড়া। তবে পরিবহন শ্রমিকদের দাবি প্রশাসন বাঁধা না দেয়ায় মালিক-চালকরা নিজেদের দায়িত্বে জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার সড়কে স্বল্প সংখ্যক বাস নামিয়েছেন। বাস চলাচল করলেও কেউ তাদেরকে বাঁধা দেয়নি।
এদিকে, যাত্রীরা অভিযোগ করে বলছেন- অতিরিক্ত যাত্রী নিয়েও নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ৬০ ভাগ বেশি আদায় করছেন পরিবহন শ্রমিকরা।
সিলেট জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয়ায় স্বল্প সংখ্যক মালিক-চালক তাদের বাস জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার সড়কে নামিয়ে দেন। রাস্তায় বাস চলাচলে প্রশাসন বাধা দিচ্ছে না। তবে যারা বাস চালাচ্ছেন, তারা তাদের নিজ দায়িত্বেই রাস্তায় নেমেছেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে গণপরিবহন রাস্তায় না নামানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মুহিত জানান, সিলেটের আঞ্চলিক সড়কে বাস চলাচল শুরু হয়েছিলো। তবে গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে পুলিশ প্রশাসনের অনুরোধে তা বন্ধ করা হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, বাস চলাচল বন্ধ রাখা হলেও অন্য পরিবহনগুলো চালানো হচ্ছে। এ কারণে আমাদের কিছু শ্রমিক ভাই বাস চালানো শুরু করে। কিন্তু প্রশাসনের অনুরোধে আপাতত বাস বন্ধ রয়েছে।
অপরদিকে, লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না সাধারণ লোকজন। প্রায় ৫০ ভাগ মানুষই মাস্ক ছাড়া বাইরে ঘোরাফেরা করছেন। এছাড়া সিলেট নগরীর রাস্তাঘাটে মানুষের উপস্থিতিও লকডাউনের গত দিনগুলোর তুলনায় গতকাল বুধবার বহুলাংশে বেশি ছিলো। কোথাও কোথাও যানজটও দেখা গেছে। পাশাপাশি ফুটপাতে মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
নগরীর জিন্দাবাজার, বারুতখানা, বন্দরবাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে বাইরে অবস্থান করে মালামাল বিক্রি করতে দেখা গেছে। তবে, লকডাউনের কারণে সিলেট থেকে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার কোন বাস। সিলেট থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া নগরীর পাইকারি পণ্যের বাজার কালিঘাটে বেচা-কেনা স্বাভাবিক ছিলো।
সরেজমিন দেখা যায়, কেবল মার্কেট, বিপণীবিতানে দোকান বন্ধ থাকলেও সড়কের পাশে সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা ছিল। রেস্টুরেন্টগুলোতে ছিল মানুষের জটলা। এছাড়া, নগরীতে নিম্নআয়ের মানুষের জন্য লকডাউন ভোগান্তি তৈরি করলেও চাকরিজীবী, মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্তদের চলাচল ছিল নির্দি¦ধায়। অটোরিকশা, লেগুনা, টেম্পো, প্রাইভেট যান ও মাইক্রোবাসে গাদাগাদি করেই যাতায়াত করতে দেখা গেছে।
অপরদিকে, সরকার ঘোষিত এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণার পর সিলেটে উবার ও পাঠাওসহ রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো পার্সেল ডেলিভারি ছাড়া তাদের সব কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। তবে সিলেটে থেমে নেই মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন। সিলেট নগরী ও শহরতলীর বিভিন্ন পয়েন্টে মোটরসাইকেল নিয়ে যুবকদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
নগরীর দক্ষিণ সুরমা এলাকার হুমায়ুন রশিদ চত্বরের দক্ষিণ পাশে সারিবদ্ধভাবে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। সাধারণ যাত্রীরা অভিযোগ করেন, অ্যাপের চেয়ে খ্যাপের মাধ্যমে মোটরবাইক চালকরা কয়েকগুণ বেশি টাকা আদায় করছে। তাছাড়া, গণপরিবহন বন্ধের সুযোগও তারা নিচ্ছেন। এতে বাধ্য হয়েই গন্তব্যে পৌঁছার কারণে তাদের দাবিকৃত ভাড়াই পরিশোধ করতে হচ্ছে।
আবদুল আলী নামের এক মোটর সাইকেল চালক বলেন, অফিস আদালত সবই খোলা। দোকানপাটও কমবেশি খোলা। বন্ধ শুধু রাইড শেয়ারিং অ্যাপ। তাহলে মানুষ চলাচল করবে কীভাবে? অ্যাপ চলে না তাতে কী হয়েছে? এখন মানুষ নিজেদের প্রয়োজনেই আমাদেরকে খোঁজে। সে কারণে আমরা রাস্তায় আছি এবং কন্ট্রাকে যাত্রী বহন করছি। তিনি রিকশা, সিএনজি অটোরিকশার চেয়ে মোটরসাইকেল নিরাপদ বলে দাবি করেন। যদিও অ্যাপ ছাড়া কন্ট্রাকে মোটরসাইকেল আরোহণ অনিরাপদ বলে দাবি সচেতন যাত্রীদের।
অন্যদিকে, সিলেট নগরীর প্রবেশমুখ গুলোতে পুলিশের চেকপোস্ট ছিলো। সকালের দিকে পুলিশের তৎপরতা দেখালেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে খুব একটা তৎপরতা দেখা যায়নি। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরীতে অবাধে বিভিন্ন ধরণের পরিবহন ঢুকতে দেখা যায়।
এসএমপির অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া ও কমিউনিটি সার্ভিস) এবিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, সাধারণ মানুষকে সচেতন ও প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হতে বারণ করতে পুলিশ কাজ করছে। বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট রয়েছে। যেখানেই জনসমাগম লক্ষ্য করা গেছে, পুলিশ সেখানে কাজ করছে। তিনি সাধারণ মানুষকে নিজেদের স্বার্থে লকডাউন মানার অনুরোধ জানান।